বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ! নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের থেকেই ভিসি নিয়োগের অনুরোধ ইবি শিক্ষকদের সংবিধান সংস্কারঃ সংশোধন না-কি পুনর্লিখন?  সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতাঃ আইন কি বলে? ভূমি অধিগ্রহণে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হলে কী করবেন? ইবির জিওগ্রাফী বিভাগ: শিক্ষার্থীদের কাছে দরখাস্ত দিয়ে পদত্যাগ করলেন সভাপতি যুগে যুগে দালাল সাংবাদিকদের করুন পরিণতি বনাম কিছু শিক্ষনীয় গল্প!
লিগ্যাল এইড এর কার্যক্রম কতটুকু সফল?

লিগ্যাল এইড এর কার্যক্রম কতটুকু সফল?

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
দরিদ্র বিচার প্রার্থীদের সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ২০০০ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ নামে একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনটি সম্পর্কে ভূক্তভোগীরা কত পার্সেন্ট জানে? আজ ২৮ এপ্রিল এ দিবস উপলক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে সবিনয়ে জানতে চাওয়া।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।১৯৪৮ সালের ‘সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের’ অনুচ্ছেদ ৭-এ কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়া আইনি প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমান অধিকারের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে।এসব কথা অর্থবহ করে তুলতে এবং এর সফল বাস্তবায়নের উদ্দেশে মূলত আইনগত সহায়তা কার্যক্রম চালু হয়। লিগ্যাল এইড এর সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে: ১। আইনগত পরামর্শ প্রদান। ২। মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ। ৩। আইনজীবীর ফি পরিশোধ। ৪। বিনামূল্যে ওকালতনামা সরবরাহ। ৫। সালিশকারির সম্মানী পরিশোধ। ৬। বিনামূল্যে রায় বা আদেশের অনুলিপি সরবরাহ। ৭। ফৌজদারি মামলায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যয় পরিশোধ। ৮। মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক সকল ব্যয় পরিশোধ। মহৎ উদ্দেশে লিগ্যাল এইড কার্যক্রম চালু হলেও ভূক্তভোগীরাই জানে সেবাসমূহ পেতে কতটুকু বেগ পেতে হয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই আইনের অধীনে আইনগত সহায়তা কারা পাবেন সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। সমস্যা সমাধানে ২০০১ সালের আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালায় আইনগত সহায়তা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু এতে সমস্যার খুব একটা সমাধান হয়নি।
নীতিমালা ২-এর ব্যাখ্যায় ‘অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি’ বলতে বোঝানো হয়েছে এমন ব্যক্তিকে যার বার্ষিক গড় আয় ৩০০০ টাকার উর্ধ্বে নয় অর্থাৎ যার মাসিক আয় ২৫০ টাকার বেশি নয় তিনি আইনগত সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবেন। হাস্যকর ব্যাপারও বটে। একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, বর্তমানে একজন ভিক্ষুকেরও আয় মাসে ২৫০ টাকার বেশি। তাহলে কি বলা যায় যে, এই সহায়তা পাওয়ার মতো কোনো অসচ্ছল ব্যক্তি নেই?
দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত প্রচারের ব্যবস্থা না থাকায় এই কার্যক্রম সম্পর্কে গ্রামের অসচ্ছল, দরিদ্র মানুষ খুবই কম জানেন।
তৃতীয়ত, আইনে বর্ণিত আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য যে আবেদন প্রক্রিয়া, তা খুবই জটিল। যা সাধারণ দরিদ্রদের পক্ষে বোঝা কষ্টসাধ্য।
চতুর্থত, যারা জাতীয় কিংবা জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কমিটি পরিচালনাকারী, তারা উঁচুতলার লোক, তারা গরিবদের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে প্রায়শই অক্ষম।
প্রার্থীরা আবেদন করার পর আবেদনপত্র গ্রহণ কিংবা বাতিল করার এখতিয়ার একান্তই কমিটির। ফলে অনেক সময় স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, প্যানেল আইনজীবীদের ফি কম থাকায় ভালো সিনিয়র আইনজীবী মামলা পরিচালনার কাজে আসতে চান না। ফলে গরিবের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। এমন আইনজীবী মামলা পরিচালনা করেন, যাদের ওই মামলা পরিচালনা সম্পর্কে ভাল জ্ঞানও নেই। সেকারণ যা হবার তাই হয়। একসময় লিগ্যাল এইড তহবিলের টাকা ব্যায়ই হতো না। পত্রপত্রিকার বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদনে তহবিলের টাকা পুরোপুরি ব্যবহার না হওয়ায় ফেরত যাওয়ার খবর দেখতে পেয়েছি। হিসেবে দেখা গেছে ২০০৯ সালের পূর্বে সরকারি আইন সহায়তা তহবিলের ব্যয় ১০ শতাংশের কম ছিল, যা ২০০৯ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ শতাংশ, ২০১০ সালে ৮৬ শতাংশ, ২০১১ সালে ৯৮ শতাংশ, ২০১২ ও ২০১৩ সালে শতভাগ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সাল থেকে এ তহবিলের ব্যয় শতভাগে উন্নীত হয়েছে।
আবার স্বজনপ্রীতির কারণে অনেকের অবৈধভাবে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও ঢের শোনা যায়। আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) আইন, ২০১৩ পাসের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট, শ্রম আদালত ও চৌকি আদালতে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠনের বিধান, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারকে এডিআর ক্ষমতা প্রদান ইত্যাদি বিষয় সন্নিবেশিত করা হলেও এই আইনের আরও অর্থবহ সংশোধনী আনা সময়ের দাবি।
যদিও লিগ্যাল এইড সার্ভিস প্রসারের জন্য বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করা, হট লাইন সার্ভিস চালু করা ইত্যাদি বিষয় প্রশংসার দাবি রাখে, তবুও আইনগত সহায়তা কার্যক্রমের যারা টার্গেট সেই দুস্থ, অসহায় বা গরিবদের উৎসাহিত করতে আরও প্রচারের ব্যবস্থা জরুরি। বিষয়টি খোদ কর্তৃপক্ষও অবলীলায় স্বীকার করবেন।
সুতরাং সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুসারে শোষণ-বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় আইনগত সহায়তা প্রদান আইনকে যথাযথ সংশোধনী এনে এবং লিগ্যাল এইড কমিটির জবাবদিহিতা করে এ কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel