মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিষোদগার বনাম মানির মান আল্লাহ রাখার গল্প!

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিষোদগার বনাম মানির মান আল্লাহ রাখার গল্প!

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

মানির মান আল্লাহ রেখেছে, আব্বাকে বাজারে ধামা দিয়ে পিটাচ্ছে আমি দৌড়ে পালিয়ে এসেছি!-প্রবাদ বাক্যটির সাথে আপনারা সকলেই কম বেশী পরিচিত। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার একটি আলোচিত-সমালোচিত দৈনিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে খোদ একজন আলোচিত রাজনৈতিক নেতা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে যা বললেন-তা রীতিরকম হতচকিত! বক্তব্য শুনে কথিত ব্রাক্ষèণ শ্রেণীর কিছু সাংবাদিকরা দাত কেলিয়ে হাসলেন, মজা নিলেন, নেতাকে বাহবা দিয়ে হাতে তালি দিলেন। হাট, ঘাট, বালি ব্যবসা আর চাঁদাবাজিকে পাকাপোক্ত করে নেওয়ার সার্টিফিকেটও নিলেন।

দার্শনিক ডেসমন্ড টুটু’র ভাষায় “আপনি যদি অন্যায়ের পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ থাকেন তাহলে জানবেন যে আপনি দমনকারীর পক্ষই বেছে নিয়েছেন। যদি একটি হাতি ইঁদুরের লেজে পা দায় এবং আপনি যদি বলেন যে আপনি নিরপেক্ষ, তাহলে ইঁদুর আপনার নিরপেক্ষতার প্রশংসা করবে না।’’

কোনো মুসলিমের চোখের সামনে যদি অন্যায়ভাবে কেউ কারো সম্পদ বা সম্মান হরণের চেষ্টা করে তবে তার করণীয় হলো প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করা। হাদিসে এসেছে ‘তোমাদের কেউ কোনো অন্যায় সংঘটিত হতে দেখলে সে যেন তা নিজ হাতে প্রতিরোধ করে। নিজ হাতে প্রতিরোধ করতে সম্ভব না হলে যেন মুখে প্রতিবাদ করে। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে যেন অন্তত মন থেকে ঘৃণা করে।

শুধু তাই নয়, কোনো মুমিন মুসলমানের সামনে কোনো অন্যায়-অপরাধ ঘটে গেলে যদি সে ঘটনা দেখে কারো মনে হাসির উদ্রেক হয়, সেটিও অন্যায়কে সমর্থন করার অর্থে পরিগণিত হবে। তাই অন্যায়ের সঙ্গে কোনোভাবেই আপোষ করা যাবে না।

অপরাধ বিজ্ঞানীদের ভাষায়, একটা সমাজে অপরাধ তখনই বেড়ে যায়, যখন অপরাধী বারবার অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। একজন রাজনৈতিক নেতা অন্যায়ভাবে ব্রিজ, খাল দখল করে হাজার হাজার কৃষকের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, আর একজন সাহসী সাংবাদিক তা টেলিভিশনে প্রচার করে প্রতিবাদ করলে, সেটা হবে হলুদ সাংবাদিক, মাদক ব্যবসায়ী আর দেশ ও জাতির শত্রু-সেটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

ভগৎ সিং নামে একজন দার্শনিক লিখেছিলেন “ যদি বধিরকে শব্দ শোনাতেই হয় তবে সেই শব্দকে হতে হবে অনেক বেশি উচ্চস্বরের।’’ ওই সাহসী সাংবাদিকের করকমলে আমার মিনতি ‘বধিরকে শব্দ শোনাতে আরও বেশী উচ্চস্বরে শব্দ করুন’-ওরা পালিয়ে যাবে।

এবার ধামাধরা, জামাধরা, কাপুরুষ, মোসায়েবী, চাঁদাবাজ, হাট-ঘাট, বালুমহল, ইজারাদার কথিত সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতাদের উদ্দেশ্যে একটি গল্প দিয়েই লেখাটি শেষ করতে চাই।

একজন বুদ্ধিমান শিক্ষক একবার তার স্কুলে অনেকগুলো বেলুন এনেছিলেন। ছাত্রদের তিনি সেসব বেলুনে নিজেদের নাম লিখে তা ওপরে নিক্ষেপ করতে বললেন। বাচ্চারা হলের মধ্যে তাদের বেলুনগুলি ছুঁড়ে ফেলার পরে শিক্ষক সমস্ত বেলুন এলোমেলো করে মিশ্রিত করে হলের মাঝে ফেলে রাখলেন। বাচ্চাদের তাদের নাম সহ বেলুনটি খুঁজে পেতে পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল, তবে তারা নিখুঁতভাবে অনুসন্ধান করলেও তাদের নিজস্ব বেলুনটি কেউ খুঁজে পায়নি।
তারপরে শিক্ষক তাদের বলেছিলেন যে বেলুনটি তাদের নিকটতম সেটিই হাতে নিতে এবং যার নাম সেখানে লিখা রয়েছে তার কাছে এটি দিতে। দুই মিনিটেরও কম সময়ে, প্রত্যেকেই নিজের নামের বেলুনটি হাতে পেয়ে গেল। শিক্ষক শিশুদের বললেন, “এই বেলুনগুলি সুখের মতো। যখন আমরা কেবল আমাদের নিজস্ব সুখ অনুসন্ধান করি তখন আমরা এটি খুঁজে পাই না। তবে আমরা যদি অন্য কারও সুখের বিষয়ে চিন্তা করি … এটি শেষ পর্যন্ত আমাদের নিজের সুখটাই আবিষ্কার করতে সহায়তা করবে। ” ভালোবাসা না খুঁজে সবাইকে ভালোবাসুন। সবার জন্য ভাল করার চেষ্টা করুন। আপনার ভালোটা নিজেই আপনাকে খুঁজে নেবে। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলানো কুষ্টিয়ার কথিত সাংবাদিক নেতাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে লেখাটি শেষ করলাম।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, কলাম লেখক, দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল, দৈনিক গৌড়ীয় প্রভা পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক, দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি জাতীয় দৈনিক ‘দি ডেইলী অবজারভার’ পত্রিকার সাংবাদিক। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel