মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
বাপ দাদা ও নানা বাড়ির সম্পত্তি কিভাবে উদ্ধার করবেন?

বাপ দাদা ও নানা বাড়ির সম্পত্তি কিভাবে উদ্ধার করবেন?

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
আপনি বাপ, দাদা বা নানা বাড়ির সম্পত্তি ওয়ারেশ সূত্রে পাবেন কিন্তু অন্যান্য ওয়ারেশরা তা আপনাকে বুঝে দিচ্ছে না, নানা তালবাহানা করছেন কিংবা অন্যান্য শরীকরা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন কিংবা প্রাপ্য অংশ কম দিচ্ছে কিংবা প্রাপ্য অংশ দিতে একেবারেই অস্বীকার করছে কিংবা অন্যান্য শরীকরা দাবীকৃত অংশ বন্টন অস্বীকার করছে, তাহলে ওদের সাথে ঝগড়া বিবাদ না করে আপনার প্রাপ্ত অংশ দাবী করে আদালতে বিভাগ বন্টন মামলা করে দিন।

আইনটি পার্টিশন অ্যাক্ট, ১৮৯৩ নামে পরিচিত। এ আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী বিভাগ বন্টন মামলাটি করতে হয়। আগেই জানিয়ে রাখি, এ মামলাগুলো রক্তসম্পর্কীয় শরীকদের সাথে বেশী হয়ে থাকে। আমরা সবাই জানি, সম্পত্তির শরিক দুই ধরনের। এক. উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক আর দ্বিতীয়টি খরিদ সূত্রে শরিক।

বাটোয়ারা মামলা করার সময় সকল অংশীদারকে মামলায় পক্ষভুক্ত করতে হয়। কোনো একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হয় না। এ মামলা করতে হলে কিন্তু সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কারণ নালিশী আর্জিতে সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের বিবরণ যেমন খরিদ, দানসূত্রে কিংবা ওয়ারেশ সূত্রে কি-না, উত্তরাধিকার সূত্রে কি-না, যৌথ মালিকানার মাধ্যমে অর্জিত কি-না, দখলের প্রেক্ষিতে স্বত্ব অর্জন কি-না, বন্ধক বা অন্য কোনভাবে স্বত্ব অর্জন কি-না ইত্যাদি বিষয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করতে হয়। তবে আদালতের বাইরেও কিন্তু সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে ভাগবণ্টন করে বণ্টননামা দলিল করে নেয়া যেতে পারে। তবে দলিলটি অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে। কারণ ওয়ারিশি সম্পত্তির নামজারি করতে, বিক্রি করতে, রেকর্ড করাতে, ব্যাংক থেকে লোন করাতে গেলে, ভবিষ্যতে মামলা মেকদ্দমা থেকে বাঁচতে বন্টননামা দলিল রেজিস্ট্রি অবশ্যই দরকার হবে।

এ মামলা করতে বিরোধ দেখা দেওয়ার ছয় বছরের মধ্যে আদালতে যেতে হয়। নতুবা তামাদি দোষে বারিত হয়ে যায়। এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে সেই মৃত ব্যক্তির ওয়ারেশদের মামলায় পক্ষভুক্ত করে মামলা পরিচালনা করতে হয়। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, এ মামলায় দু’বার ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা দিলে আদালত এ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন। বণ্টন ডিক্রি পাওয়ার পরও দখল না পেলে কিংবা পক্ষগণ দখল বুঝিয়ে না দিলে কিংবা হিস্যা বুঝিয়ে না দিলে ‘উচ্ছেদের মামলা’ করা যেতে পারে, স্বত্ব দখলের মামলা করা যেতে পারে। এছাড়া অংশীদারদের মধ্যে কিংবা দখলকারীদের মধ্যে কেউ আপনাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিলে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়-ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়। বিভাগ বন্টন মামলা করার আগে মনে রাখবেন, বর্তমান রেকর্ড যদি বাদীর নাম বা তার পূর্বসূরীর নামে না থাকে কিংবা খতিয়ানে যেভাবে উল্লেখ আছে তা নালিশী সম্পত্তির সাথে না মিলে থাকে তাহলে বাদীর সত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। সুতরাং সত্ত্বের আবেদন না করে শুধু পার্টিশন মামলা করলে মামলা খারিজ হতে পারে। এ বিষয়ে ১৭ বিএলডি, ১৭৯ পৃষ্ঠায় এ্যাপিল্যাট ডিভিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রয়েছে।

আর পার্টিশন মামলায় বর্তমান রেকর্ডেড মালিককে অবশ্যই পক্ষ করতে হবে। শরীকান সম্পত্তি বিক্রি হলে, যিনি কিনেছেন তাকেও আবশ্যকীয় পক্ষ করতে হয়। এজমালি ও বিভাগযোগ্য সম্পত্তি যে এলাকায় অবস্থিত, সে এলাকার উপযুক্ত আদালতে এ মামলা দাখিল করতে হয়।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, আইনের শিক্ষক ও আইন গবেষক। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel