শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
মাওলানা আকবর হোসাইন
ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে, বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, রেল স্টেশনে ও বাসস্টপিস সহ দেশের আনাচে-কানাচে ইদানিং অনেক লোককে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়।
তাদের অধিকাংশই দেখতে সুস্থ ও সবল মনে হয়।
অন্যান্য পেশা থেকে এটা সহজ বিধায় শ্রমহীন এ রোজগারের পথ তারা বেছে নিয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমান ভিক্ষুকের পরিমাণ আড়াই লক্ষের উপর যা মোট জনসংখ্যার ০.১৭ শতাংশ।
ইসলামের ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা হারাম করেছে। কারণ, সমাজে ভিক্ষাবৃত্তি যখন পেশা হিসেবে চলতে থাকে তখন মানুষের মাঝে কাজ না করে, শ্রম না দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাবার প্রবণতা বেড়ে যায়।
লোভ-লালসা বৃদ্ধি পায়, বেকারত্ব ও উৎপাদনহীনতা বেড়ে যায়।
এ কারণে ইসলাম নিতান্তই যারা অপারগ, তাদের ছাড়া কর্মক্ষম মানুষের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি হারাম ঘোষণা করেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাম বলেন,”তিন প্রকারের মানুষের জন্য হাতপাতা বৈধ,
১) যে অন্যের ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিয়েছে, ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত হাতপাতা বৈধ।
২) হঠাৎ কোন বিপদে পড়ে সম্পদ বিনষ্ট হয়ে গেলে, তখন তার জন্য হাতপাতা বৈধ হয়।
যতক্ষণ না স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ হয়।
৩) কেউ দরিদ্র হয়ে গেলে, এমত অবস্থায় তার গোত্রের তিনজন বুদ্ধিমান লোক তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক দরিদ্র হয়ে পড়েছে। তখন তার জন্য হাতপাতা বৈধ।
উক্ত তিন প্রকার ছাড়া অন্যদের জন্য হাতপাতা হারাম বা অবৈধ। যারা হাতপাতে তারা হাতপেতে হারাম খায়। (সহীহ মুসলিম:২৪৫১)
ইসলাম সর্বদাই কর্মের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। কর্মহীন বসে থাকা ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী। পবিত্র কোরআনে নামাজ আদায়ের পর উপার্জনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,”সালাত সমাপ্ত হলে, তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে।” (সূরা জুমু’আ:১০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“ফজরের নামাজ আদায়ের পর জীবিকা উপার্জনে লিপ্ত না হয়ে ঘুমিয়ে থেকো না।” (তিরমিযী)
হাদীস শরীফে দানগ্রহীতা অপেক্ষায় দানকারীকে সর্বোত্তম ঘোষণা করেছে।অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতা অর্জনে উৎসাহিত করা হয়েছে।রাসূল (সা:) বলেন,”উপরের (দানকারীর) হাত নিচের (দান গ্রহণকারীর) হাতের চাইতে উত্তম। (মুসনাদ আহমেদ)
ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তি কে ঘৃণা করে। রাসূল (সা:) বলেন, “তোমাদের মাঝে যে ভিক্ষা করে, সে যখন আল্লাহর সামনে যাবে, তখন তার চেহারায় এক টুকরা গোশতও থাকবেনা।” (বুখারী:১৩৮১)
তাই শারীরিকভাবে সুস্থ লোকদের ভিক্ষাবৃত্তি পরিহার করে পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে এবং দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের নজর রাখা একান্ত অপরিহার্য।
লেখক:
শিক্ষক (ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ)
বিএএফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলা।
foysalakbar829@gmail.com