বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
লাইম এইচ রুপক:
থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজির আলোয় ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরের আকাশ আলোকিত হয়। কিন্তু সেই আলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে একটি শোক: পাখিদের মৃত্যু।এই থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ও ফানুসের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পাখিগুলো মাটিতে পড়ে মারা যায়। তাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়।যে পাখি আমাদের পরিবেশ কে রক্ষা করছে, যে পাখি আমাদের খাদ্যশৃংখল কে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেই পাখির উপরই যেন আমাদের নিষ্ঠুরতম আচরণ! নতুন বছরের আগমনকে আমরা বিভিন্নভাবে উদযাপন করতে পারি তার মানে এই নয় যে আমরা পরিবেশের ক্ষতি করব।বাংলাদেশে থার্টিফার্স্ট নাইটে পাখি মারা যাওয়ার পরিমাণ নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর থার্টিফার্স্ট নাইটে বাংলাদেশে কয়েক হাজার পাখি মারা যায়।
থার্টিফার্স্ট নাইটে, ঢাকায় পাখি নিধনের ঘটনা বেশি দেখা গেছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আতশবাজি, ফানুসের আলো ও শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পাখিগুলো মাটিতে পড়ে মারা গেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “আতশবাজি, ফানুসের আলো ও শব্দে পাখিগুলোর চোখ ও কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে উড়তে পারে না এবং মাটিতে পড়ে মারা যায়।
পাখিদের মৃত্যু রোধে থার্টি ফার্স্ট নাইটে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো নেওয়া যেতে পারে:
আতশবাজি, ফানুস, বোম ইত্যাদি ফুটানোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
আতশবাজি, ফানুস, বোম ইত্যাদি ফুটানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা।
আতশবাজি, ফানুস, বোম ইত্যাদি ফুটানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কঠোর প্রয়োগ করা।
পাখিদের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এছাড়াও, ব্যক্তিগতভাবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, ফানুস, বোম ইত্যাদি ফুটানো থেকে বিরত থাকা।অন্যায়কে প্রতিবাদ করা।
পাখিদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা।
নিচে কিছু নির্দিষ্ট ধারণা দেওয়া হল:
আতশবাজি, ফানুস, বোম ইত্যাদির পরিবর্তে লাইটশো, গান, নাচ ইত্যাদির মাধ্যমে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা যেতে পারে।
পাখিদের আবাসস্থল রক্ষা করা যেতে পারে।
পাখিদের খাদ্য ও জলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তাদের রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
পাখিদের এহেন মৃত্যুতে বাংলাদেশ আইনেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে –
কোনো ব্যক্তি যদি কোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যা করে, তাহলে তার সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
কোনো ব্যক্তি যদি কোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখির মাংস বা দেহের অংশ সংগ্রহ করে, দখলে রাখে বা বেচা-কেনা করে, তাহলে তার সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
কোনো ব্যক্তি যদি কোনো পাখির বাসা বা ডিম ধ্বংস করে, তাহলে তার সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
এছাড়াও, পাখি নিধনের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি জব্দ করার ক্ষমতা আইনে রয়েছে।
এই শাস্তির বিধানগুলো বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এ উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইনের ৩৮, ৩৯ এবং ৪০ ধারায় এই শাস্তির বিধান রয়েছে।
তাই সচেতনতার মাধ্যমে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেই কেবলমাত্র এমন অপমৃত্যু কমানো সম্ভব। আসুন আমরা সকলেই সচেতন হই।
লেখক: এপ্রেন্টিস আইনজীবী,কুষ্টিয়া জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।