শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন
বুক রিভিউ ‘ইন্টারনেটে বিবাহ এবং বিচ্ছেদ’।
পরিবর্তনশীল বিশ্বে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। মানুষ দিন দিন প্রযুক্তির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট বিশাল পৃথিবীকে পরিণত করেছে একটি বিশ্বগ্রামে।পৃথিবীর এক দেশের মানুষ অন্য দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারে স্বল্প সময়ে ও অল্প ব্যয়ে। সকলেই যেন একই সমাজের বাসিন্দা, পাশাপাশি তাদের বসবাস। ইদানীং ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিবাহ ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রবণতা বেড়েছে। এক্ষেত্রে চুক্তির পক্ষগণ একই সময়ে এক স্থানে বসবাস না করলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করে একে অপরের কথা শুনতে ও দেখতে পারে। বিভিন্ন চুক্তি সমাপ্তিঃকরণ, বিবাহ, বিচ্ছেদ সবই হচ্ছে ইন্টারনেটে। এই সকল চুক্তির বৈধতা এবং শরীয়তের বক্তব্য নিয়ে অনেকের ধারণা অস্পষ্ট। এই সকল চুক্তির ধরণ পদ্ধতি যেমন বিষয়টিকে জটিল করেছে তেমনই এ বিষয়ে ইসলামী শরিয়াতের দৃষ্টিভঙ্গি, ইলমুল ফিকহে এর নজীর এবং আধুনিক শরিয়াহ বিশেষজ্ঞদের মতামত উপস্থাপন অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।
আধুনিকতার এই যুগে দূরে অবস্থান করেও বিভিন্ন চুক্তি, অনেক ধরনের মিটিং সম্পন্ন করতে হয় ঘরে বসে বিভিন্ন দেশে ও বিদেশে। ফলে অনেক নতুন নতুন বিষয় উত্থাপিত হয় যা শরয়ী হুকুমের মুখাপেক্ষী। কিন্তু সেসবের সমাধান খোঁজে পাওয়া কঠিন হয়। সমাধান পেলেও থেকে যায় অনেক বাকবিতন্ডা ও মতবিরোধ। সবগুলো মতামত একত্রে পাওয়া দুরুহ ব্যাপার। এমন বিয়ষ শুধু আধুনিক ফিকহী বইতেই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এসব দলিল ভিত্তিক বই বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের কাছে নেই বললেই চলে।
ফলে সাধারণ সত্যান্যেষু পাঠকের সমাধান পেতে অনেক বেগ পোহাতে হয়। দৈনিন্দন অনলাইনে বিভিন্ন চুক্তির সম্পন্ন হয় কিন্তু বিবাহ চুক্তি তো আর সাধারণ চুক্তির মতোর মতো নয়। এখানে রয়েছে বৈধতা ও অবৈধতার বিষয় এবং হালাল ও হারামের দিক। যেমন: জীবিকার তাগিদে বা উচ্চ শিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেন। অথচ তাদের বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্ধন বিদেশ থেকেই সম্পন্ন করতে চায়। মেয়ে বা ছেলে দেখা থেকে শুরু করে বিবাহ সম্পন্ন সমাপ্ত হওয়া পর্যস্ত।
কিন্তু আধুনিক ডিভাইসের মাধ্যমে মেয়ে বা ছেলে দেখা যাবে কিনা, ইন্টারনেটে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া যাবে কিনা, ইজাব কবুল গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, মোদ্দাকথা ইন্টারনেট বিবাহ বৈধ হবে কিনা? এসব শত অজানা বিষয় আলোচিত হয়েছে ইবির আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের সম্মানিত সহযোগী অধ্যাপক জনাব ড.নাছির উদ্দীন আজহারী স্যারের লিখিত “ইন্টারনেটে বিবাহ এবং বিচ্ছেদ” বইটিতে।
আবার অনলাইনে বিভিন্ন প্রকার প্রতারণারও সম্ভবনা রয়েছে। এসব প্রতারণা এড়াতে অত্র বইয়ের লেখক কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। মেসেঞ্জার, ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি সোশাল মিডিয়া ব্যাবহার করে যদি কোন ব্যক্তি তালাক প্রদান করে তাহলে তা গ্রহণযোগ্য ও বৈধ হবে কিনা? অর্থাৎ বিয়ে, তালাক এসব ইন্টারনেটে কার্যকর করা শরিয়তে বৈধতা রয়েছে কিনা? কুরআন, সুন্নাহ ও বিভিন্ন ফিকহী পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন দেশের আধুনিক ফিকহী বোর্ডের মতামতও পেশ করা হয়েছে।
এ বইটিতে এ সংক্রান্ত বিধি বিধান দলিল প্রমাণসহ আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও বইটিতে ইন্টারনেটের প্রকৃতি পরিচিতি, সুবিধা, অসুবিধা সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণার পাশাপাশি এ বিষয়ে ঝুঁকি ও নিরাপত্তা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে অনলাইনে বিবাহ এবং বিচ্ছেদ সময়ের চাহিদায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়িয়ে। এই বই পড়ে সহজেই একজন পাঠক অনুধাবন করতে পারবে কখন ইন্টারনেট বিবাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বৈধ হবে এবং কখন অবৈধ হবে।এইসব চুক্তি বৈধ বা অবৈধ হওয়ার মাপকাঠি রয়েছে। কিছু শর্ত পূরণ করতে হয় যার ফলে বৈধ হয় এবং কিছু উপাদান অনুপস্থিত থাকলে তা অবৈধ হয়। বইটি ড.নাসির উদ্দিন (আযহারী) স্যারের লেখা দ্বিতীয় বই, যা দেশে ও বিদেশে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য অবশ্য পাঠ্য বই।
রিভিউ লিখেছেন,
মো. রাকিব হাসান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
ইমেইল : mdrakib10143@gmail.com