রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : কুষ্টিয়ার মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে ধর্মান্তরিত বাবা ও তার সাত বছরের শিশু সন্তানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃতরা হলেন, কুষ্টিয়া আলফা মোড় এলাকার বিষ্ণুপদ রায়ের ছেলে রেজাউল করিম মধু (পূর্বের নাম মধুসূদন রায়) (৩৮) ও তাঁর শিশুপুত্র মুগ্ধ হোসাইন (৭)। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিতার সাথে শিশুর মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উম্মচনে কাজ করছে পুলিশ।
জানা যায়, রেজাউল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ছেলে মুগ্ধকে হরেকৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করার কথা বলে তাঁর শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সন্তানকে নিয়ে ফিরে না আসায় মা শেফালি বিকেল ৩টার দিকে তাদের ভাড়া বাসায় আসেন। এসময় ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। এরপর কোনো সাড়া না পেয়ে জানালার ছিদ্র দিয়ে দেখতে পান তাঁর স্বামী ও সন্তান ঘরের মধ্যে একই রশিতে ঝুলে আছে। তাঁর চিৎকার প্রতিবেশীরা এসে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। মধু প্রায় ৮ বছর পূর্বে ধর্মান্তরিত হয় এবং মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আসাদুল মন্ডলের মেয়ে শেফালি খাতুনকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। রেজাউলের স্ত্রী শেফালী জানান, তার স্বামী জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম সংশোধন নিয়ে জটিলতায় পড়েছিলেন। নিজের নাম সংশোধন করতে না পারায় ছেলেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারছিলেননা। এই ক্ষোভ বা হতাশা থেকে তিনি ছেলে হত্যা করে নিজে আত্মাহত্যা করে থাকতে পারেন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
ঘটনার কারণ সম্পর্কে পুলিশ বলছে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর রেজাউল তার এনআইডি কার্ড সংশোধনী নিয়ে বেশ জটিলতায় ভুগছিলেন। যার জন্য সে তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেনি। সেই ক্ষোভ থেকেও এই পথ বেছে নিতে পারে। বাবা রেজাউল করিম মধু শহরের আলফা মোড় এলাকার বিষ্ণুপদ রায়ের ছেলে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভাড়া বাড়ির আশে পাশে উৎসুক মানুষের ভীড়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করছে। সেখানে একটি অটোরিকসার মধ্যে মা শেফালী খাতুন জ্ঞান হারিয়েছেন। সাথে থাকা স্বজনরা তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শেখ সোহেল রানা বলেন, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এখানে আত্মহত্যা ও হত্যার দুইটি ঘটনা থাকতে পারে। ছেলেকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করতে পারে। পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রেজাউল ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকে তার এনআইডি কার্ড সংশোধনী নিয়ে বেশ জটিলতায় ভুগছিলেন। যার কারণে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেনি। এই নিয়ে তার বেশ ক্ষোভ ছিল। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে জানা যাবে।
বাড়ির মালিক সেলিম জানান, রেজাউল আমাদের বাড়িতে কয়েকমাস হলো ভাড়া এসেছেন। যে কয়দিন রয়েছেন, তেমন কিছু মনে হতো না। মাথা নিচু করে চলাফেরা করতো। দেখে ভালোই মনে হতো। কোন সময় খারাপ কোন কিছু আমরা দেখিনি। কোন ঝোই ঝামেলা ছিল না। ওর বাচ্চাটা আমার ছেলের সাথে খেলাধুলা করতো বেশ ভালোই চলছিল। আজ সম্ভবত তিনটার দিকে আমার কাঠের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে ছিলাম। তারপরে মুগ্ধ’র মা বাড়িতে এসে দেখে ভিতর থেকে সব বন্ধ। ডাকাডাকি করছে কেউ খুলছে না। আমার ছেলে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। আমি এসে জানালা দিয়ে দেখছি বাপ-বেটা ঝুলন্ত অবস্থায়। মুগ্ধ’র মা বলছে আমার ছেলেকে বাঁচান। আমরা এলাকার সবার সামনে জানালা ভেঙে চাতাল দিয়ে ভিতরে ঢুকে দরজার হ্যাজবল খুলে দিলে মুগ্ধ’র মাসহ সবাই ভিতরে প্রবেশ করি। ছেলে ও স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ দেখে মুগ্ধ’র মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। পরে আমরা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি বলেন, বিকাল চারটার দিকে খবর আসে শহরের মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় একজন পিতা তার সন্তানসহ আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশের টিম তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থানে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে শিশু মুগ্ধ’র বাবা হয়ত সামাজিক কোন টানাপোড়ান অথবা পারিবারিক কোন কারণে সন্তানকে প্রথমে মেরে তার লাশটা ঝুলিয়ে পরে সে নিজে আত্মহত্যা করেছে। তবে কি কারনে সন্তানকে এভাবে ঝুলিয়ে নিজে আত্মহত্যা করেছে সেটা তদন্ত করছি।