শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় অব্যহতি প্রাপ্তির গল্প!

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় অব্যহতি প্রাপ্তির গল্প!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
জনৈকা রেখা (ছদ্মনাম) যাত্রবাড়ী থানায় হাজির হয়ে এই মর্মে এজাহার দায়ের করেন যে, চলার পথে পরিচয়ের সূত্র ধরে গত তিন/চার মাস ধরে আসামী রিপন মিয়া প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এরপর উচ্চ বিলাসী জীবন যাপনের লোভ দেখিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং পূর্বের স্বামীকে তালাক দিতে আসামী উদ্বুদ্ধ করে। এক পর্যায়ে তালাক দিতে বাধ্যও করে। এরপর আসামী কাজীর মাধ্যমে বিবাহ রেজিষ্ট্রি না করিয়ে একটি ভুয়া হলফনামার মাধ্যমে স্ত্রী বানিয়ে আসামী ভাড়া বাসায় নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। এরপর বাসা থেকে বের হয়ে আসামীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। মামলাটি হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(১) ধারায়। এ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে।

ধর্ষণের সংজ্ঞা দেখেই বুঝতে পারছেন বাদী সাবালিকা, স্বেচ্ছায় ফ্লাটে গেছে, কনডিশন ছিল বিয়ে করবে। এতে জোর প্রতারণা হতে পারে। কিন্তু এ মামলায় ধর্ষণের কোন উপাদান না থাকাটাই স্বাভাবিক। তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলাটি বিচারিক আদালতে গেলে আসামী পক্ষ চার্জ গঠনের দিনে অব্যহতি চেয়ে ফৌজদারী কার্যবিধি ২৬৫(গ) ধারার বিধানমতে আবেদন দাখিল করেন। আসামীর আইনজীবী অব্যহতির আবেদনে এবং আদালতে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, মামলার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। আসামীকে অযথা হয়রানী করার মানসে অত্র মিথ্যা ঘটনার সাথে জড়িত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বর্ণিত ধারায় দরখাস্তকারী আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মতো কোন উপাদান অত্র মামলায় নেই। এজাহারে উল্লেখিত কথিত ঘটনার তারিখ ও সময় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

আইন অনুযায়ী কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে বিয়ের কথা দিয়ে কিংবা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটি লঙ্ঘন করলে সেটা হবে বিবাহ চুক্তির লঙ্ঘন, মোটেই ধর্ষণ নয়। এজাহারের বর্ণনামতে, ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনে ‘ফ্রড’ এর সংজ্ঞার সাথে ভিকটিমের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তবে মোটেই ধর্ষণের কোন উপাদান নেই। ১৬ বছরের অধিক কোনো বয়সের মেয়েকে যদি কোনো পুরুষ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে যৌনকর্ম করে তা হলে তা ধর্ষণের নামান্তর হবে না, সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতের। (৫১ ডিএলআর, পেজ ১২৯)। যৌনকর্মের সময় যদি ভিকটিম কোনরূপ বাঁধা না দেয় অথবা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা না করে অথবা কোনো চিৎকার না দেয় তাহলে ধর্ষণ হয়েছে বলে মনে করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যৌনকর্মে ভিকটিমের সম্মতি আছে বলে ধরে নিতে হবে, সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতের। (৫৭ ডিএলআর, পেজ ৫৯১)। এ মামলায় সমর্থনযোগ্য সাক্ষীর কোনো উপস্থিতি নেই। এ মামলায় ডিএনএ পরীক্ষায় পুরুষের বীর্যের কোন উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

আরেকটি পয়েণ্ট উল্লেখ করা হয়, কোন স্ত্রীলোকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে যৌন সংগম করা হলে, সেক্ষেত্রে উক্ত স্ত্রীলোকের দেহের বা শরীরের কোন না কোন অংশে বা জায়গায় জখম বা আঘাতের চিহ্ন থাকবে এবং এটা মেডিক্যাল রিপোর্ট দ্বারা সমর্থিত হবে। কারণ ধর্ষণের সময় ভিকটিম ইজ্জত রক্ষার জন্য একটু হলেও ধস্তাধস্তি করেন। কিন্তু ধর্ষণের এ মামলায় ভিকটিমের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নাই এবং ভিকটিমের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন না থাকলে তাকে ধর্ষণ বলা যাবে না। (১৮ ডিএলআর ৯১)।

এছাড়া ধর্ষিতার মেডিক্যাল রিপোর্ট না থাকায় প্রসিকিউশন কেস সন্দেহজনক হবে (বিএলডি ৩১৪) এ মামলায় ভিকটিম একাধিকবার আসামীর সঙ্গে স্বেচ্ছায় ইচ্ছাকৃত অংশীদার হিসেবে যৌন সহবাস করেছে। মামলাটি বিলম্বে হয়েছে। আসামী এ পর্যায়ে অব্যহতি পেতে হকদার (১২ এমএলআর, পৃষ্ঠা-৪০৯)
অভিযোগকারিণীর বৈবাহিক অবস্থা এবং যৌনসম্পর্কের ইতিহাসকে তার ‘চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য’ বিবেচনায় যৌন কার্যকলাপে অভ্যস্ত, একজন হালকা নৈতিক চরিত্রের অধিকারিণী বিধায় আসামী অব্যহতি পেতে হকদার। তদন্তকারী কর্মকর্তা নিরপেক্ষ কোন ব্যক্তিকে অত্র মামলায় সাক্ষী করতে পারেন নাই। অত্র মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট সাক্ষীগণ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারায় যে জবানবন্দী প্রদান করেছেন, তাতে সাক্ষীগণ দরখাস্তকারী আসামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি।

মাননীয় আদালত অব্যহতি আবেদন, আইনজীবীর বাচনিক প্রকাশ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ও মামলার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামীকে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫(গ) ধারার বিধান মতে মিথ্যা ধর্ষণ মামলার দায় হতে অব্যাহতি দানের আদেশ দেন।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, গবেষক ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel