শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে তালাক সম্পাদিত হলে স্ত্রীকে আর দেনমোহর, খোরপোষ কিংবা কোন প্রকার দাবী-দাওয়া দিতে হবে না, সেটা হচ্ছে খোলা তালাক বা বা যুক্ত তালাক। এ তালাকটি স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে হয়ে থাকে।
স্ত্রীকে যদি বিবাহের কাবিননামায় ১৯ নং কলামে তার স্বামীকে তালাকের ক্ষমতা দেয়া না থাকে এবং স্ত্রীর পক্ষে স্বামীর সাথে সংসার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে স্ত্রীর পক্ষে সহজে স্বামীকে তালাক দিতে হলে স্বামীকে খোলা তালাকে রাজী করাতে হবে।
এ তালাকের উল্লেখযোগ্য দিক হলো-১। স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন, ২। স্বামী ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে থাকেন, ৩। স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামী বিনিময়ে স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিদান নিয়ে থাকেন এবং স্ত্রী তা দিয়ে থাকেন বা দিতে সম্মত হন অর্থাৎ এটাই হচ্ছে দেনমোহর খোরপোষ ছেড়ে দিয়ে বন্ধনমুক্ত হওয়া।
স্ত্রী তাঁর গর্ভের সন্তানের জন্য স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। খোলা তালা প্রস্তাবক যেহেতু স্ত্রী, তাই চেয়ারম্যানের কছে স্ত্রী নোটিশ পাঠাবে। যদি স্বামী বা স্ত্রী একত্রে শান্তি ও সৌহার্দের মধ্যে বসবাস করতে না পারে সেক্ষেত্রে স্ত্রী তালাকের বিনিময় মূল্য প্রদান করে খুলা তালাক পেতে অধিকারিণী। (শিরিন আলম চৌধুরী বনাম ক্যাপ্টেন শামসুল আলম চৌধুরী ৪৮ ডিএলআর, পৃষ্ঠা-৭৯)।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় কিংবা আগে স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেন, তাহলে বুঝি দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্ত্রী আগে তালাক দিলেও তাঁর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। ব্যতিক্রম শুধু খোলা তালাকের ক্ষেত্রে। অনেক সময় স্ত্রী ঠিক বিচ্ছেদ না নিয়ে আলাদা বসবাস করতে চান। এ রকম হলেও আইনী বাঁধা নেই। উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে পৃথক থেকেও তিনি স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষ পেতে অধিকারিনী।
খোলা তালাকের পাশাপাশি আরেকটি তালাক রয়েছে, যাকে মোবারাত তালাক বলা হয়। এটি হলো পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ। এ ধরনের বিবাহ বিচ্ছেদের বেলায় উভয়ই বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হয় বলে কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগে না অর্থাৎ দেনমোহর খোরপোষ দেয়া লাগে না। শারিয়া অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্ট ১৯৩৭ এই তালাকের বিধান ছিল। মুবারাত তালাকের প্রচলন খুব একটা নেই বললেই চলে। সংসার করার ক্ষেত্রে বিরূপ মনোভাবটি দু’জনের কাছ থেকে আসে তখন সেটা হয় মোবারত। মোবারতের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ পাঠানোর দায়িত্ব যিনি প্রস্তাব উত্থাপন করবেন তিনি পাঠাবেন। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, মুবারাতের ক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনে মিলে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে তারা আর এক সাথে বসবাস করবেন না। মুবারাতের ক্ষেত্রেও একে অপরের কাছ থেকে দেনা পাওনার কোন বিষয় থাকে না। (১৬ ডিএলআর, ৩৮৯)।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com
বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি দেখতে পারেন