শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরল স্বীকারোক্তি ‘ আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’ ভাইরাল বক্তব্য এখন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্্র মিডিয়া থেকে শুরু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে।
‘উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ’ কবি শামসুর রহমান এ কবিতার শেষাংশে লিখেছেন ‘নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মাঝে মাঝে আঁৎকে উঠি।’
একটি পুরাতন গল্প দিয়েই লেখাটি শেষ করি।
একবার এক চোরকে সামান্য ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেয়া হল। তখন সে চোর তার শেষ ইচ্ছা হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার সুযোগ চাইল। যখন তাকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে আসা হলো তখন সে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলল স্যার, আপনার সাথে দেখা করতে চাওয়ার একটাই কারণ তা হলো, আমার কাছে এমন একটা গাছের বীজ আছে যে গাছটা মনের সব ইচ্ছাা পূরণ করতে পারে। আমি আপনার জন্য এই গাছটা রোপণ করে দিয়ে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করল ‘তোমার চারা লাগাতে কত দিন লাগবে?’ চোর উত্তর দিল, ‘এইতো স্যার, সাত দিন।’
সাতদিন পর তাকে আবার মন্ত্রিসভায় হাজির করা হল। একজন জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার চারার কী খবর?’ চোর বলল, ‘আসলে জমি তো রেডি কিন্তু বীজটা পরিপক্ক হতে আরও তিনদিন লাগবে।’তিনদিন পর তাকে আবার হাজির করা হল। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘বীজ রেডি তো এবার?’ চোর বলল, ‘স্যার জমি বীজ সবই রেডি কিন্তু‘ আমিতো তা রোপণ করতে পারব না।’ প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন?’ চোর বলল, ‘এটা এমন একজনের হাতে রোপণ করতে হবে যে কোনদিন চুরি করেনি। না হলে এটা কার্যকারিতা হারাবে।’
সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন বীজ রোপন করতে।। অর্থমন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার সারা দেশের অর্থ নিয়ে আমার কাজ। এত কাজের মধ্যে দু একটা তো এদিক সেদিক হতেই পারে।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পরিবহন মন্ত্রীকে। পরিবহন মন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার, কত কত গাড়িঘোড়া আমার প্রতিনিয়ত অনুমোদন দিতে হয় এর মাঝে তো দু একটা এদিক সেদিক হতেই পারে।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কাচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার, এতো দেশের সাথে যোগাযোগ, এতো দেশে যাওয়া আসা, বাণিজ্য লেনদেন এর মধ্যে তো আমারও দু একটা এদিক সেদিক হতেই পারে।’ প্রধানমন্ত্রী এরপর যাকেই বলেন সেই এদিক সেদিকের দোহাই দিয়েই এড়িয়ে যায়।
হঠাৎ সবাই প্রধানমন্ত্রীকে ধরলেন, ‘স্যার, আপনিই রোপণ করুন না।’ তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘তোমাদের তো দায়িত্ব¡ ছোট ছোট, আমি পুরো দেশ চালাই। আমার কি একটু আধটু এদিক সেদিক হতে পারে না!’ তখন সবাই চুপ হয়ে গেল। হঠাৎ একজন বলে উঠলেন, ‘তাহলে স্যার, এই লোক তো সামান্য একটা ম্যানহোলের ঢাকনা চোর। একে মৃত্যুদন্ড দেয়া কি ঠিক? একে ছেড়ে দেয়া হোক। আরেকজন বললেন, ‘না একে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাহলে সে বাইরে গিয়ে সব ফাঁস করে দেবে।’ সবাই চিন্তায় পড়ে গেল একে নিয়ে কী করা যায় ? তখন একজন বলল, ‘স্যার এক কাজ করুন। একে আমাদের মতোই একটা পদ দিয়ে আমাদের সাথে শামিল করে নেন।’ যেই ভাবা সেই কাজ, সেই চোর হয়ে গেল মন্ত্রীসভার সদস্য। এভাবেই মন্ত্রিসভা গঠিত হচ্ছে সারা দুনিয়ায়। এটি একটি রসাত্বক গল্প মাত্র। কারো চরিত্রের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সম্পাদক-প্রকাশ ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, seraj.pramanik@gmail.com