রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনী প্রতিকার ও বাস্তবতা!

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনী প্রতিকার ও বাস্তবতা!

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
কেউ যদি দ্বিতীয় বিবাহ বা একাধিক বিয়ে করতে চান, তবে তার জন্যও আইনী বিধান রয়েছে। আবার স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া পরবর্তী বিয়ে কিংবা আইনী বিধান না মানলে তার জন্য আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে। আমরা সবাই জানি এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিবাহ করাকে বহু বিবাহ বলে। কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ধারা ৬ মতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের নিকট হতে অনুমতি নিতে হয়। নতুবা পরবর্তী বিয়ে আইনগতভাবে রেজিষ্ট্রি হবে না।

পরবর্তী বিয়ের অনুমতি নিতে হলে স্বামীর পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা স্থানটি পৌরসভা হলে
পৌর মেয়রের কাছে, সিটি কর্পোরেশন হলে সিটি মেয়রের কাছে ২৫ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে সাদা কাগজে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত প্রতিষ্ঠান একটি বোর্ড গঠন করবে এবং স্ত্রীর উপস্থিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যে সকল বিষয়ের প্রতি বোর্ড বিবেচনা করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো- ১। বর্তমান স্ত্রীর বন্ধাত্য, ২) দৈহিক দুর্বলতা ৩) দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা এবং ৫) মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি। এগুলো প্রমাণ হলে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি হতে পারে।

কোনো পুরুষ যদি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে তিনি অবিলম্বে ১ম স্ত্রীর দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাবা আইনত বাধ্য হবে। ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবেন। মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে আইনগতভাবে আদায়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়া সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৬ (৫)বি ধারার অভিযোগে ১ম স্ত্রী মামলা করতে পারবে। দোষী সাব্যস্ত হলে স্বামীর এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- কিংবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। তবে এ মামলা করতে হলে পরবর্তী বিয়ের কাবিননামা অর্থাৎ ডকুমেন্টস লাগবে। আবার স্ত্রী ইচ্ছা করলে দন্ডবিধির ৪৯৪ ধারায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড দিতে পারবেন। কারণ এ ধারায় বলা হয়েছে স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও যদি স্বামী ২য় বিয়ে করেন, তাহলে স্বামী দন্ডনীয় অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হইবেন।

পাশাপাশি স্বামী যদি ১ম স্ত্রী আছে এরকম তথ্য গোপন করে পরবর্তী স্ত্রীর কাছে যদি বলে আমিই প্রথম। এরপর ২য় স্ত্রী ১ম স্ত্রীর কথা জানতে পেরে প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪৯৫ ধারায় মামলা করে ১০ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড দিতে পারবেন। কারণ এ ধারা বলছে দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় ১ম বিয়ের তথ্য গোপন রাখলে এ অপরাধ হবে।

আবার স্ত্রীও যদি স্বামী বহাল থাকা অবস্থায় আইনগতভাবে বিচ্ছেদ না করেই আরেকটি বিয়ে করে থাকে, তাহলে ১ম স্বামী কিন্তু ওই স্ত্রীর বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে মামলা করে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড দিতে পারেন। তবে এ জাতীয় মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, গবেষক ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা। seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel