শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
শুধুমাত্র দেওয়ানী মোকদ্দমাগুলিতে বাদী কিংবা বিবাদী যারই মৃত্যু ঘটুক না কেন, তার প্রতিনিধির মাধ্যমে মৃত্যুর পরও মামলাগুলো চলমান রাখা যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিনিধিরা মামলাগুলোর পক্ষ হয়ে সেগুলো সচল রাখে। কিন্তু ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে সে সুযোগ আর নেই। এজাহার কিংবা নালিশে যদি সংবাদদাতা বা নালিশকারী কোনো মৃত ব্যক্তিকে আসামি হিসেবে দেখান, তাহলে তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব হলো অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ওই মৃত ব্যক্তিকে আসামি হিসেবে প্রদর্শন না করা। তার মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে অবহিত করবেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ ধরনের মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত, বিচার বা সাজা প্রদান করা সম্ভব নয়।
অবশ্য বিচারে দন্ডিত হওয়ার পর আসামির মৃত্যু ঘটলে তার কারাদন্ড অবধারিতভাবে মওকুফ হয়ে গেলেও অর্থদন্ড মওকুফ হয় না। উদাহরণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মামলাটির উলেœখ করা যেতে পারে। এই মামলাটি ১৯৭৫ সালে সংঘটিত হয়েছিল। এ হত্যাকান্ড সংঘটনের দিন অপরাধীদের নাম উল্লেখ না করে একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর সে এজাহারের ভিত্তিতে কোনো তদন্ত হয়নি। ১৯৯৬ সালের পরে ৭৫ সালে দায়ের করা এজাহারের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হলে অনেকের মনে প্রশ্নের উদয় হয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের মূলনায়ক খন্দকার মোশতাকের নাম কেন অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত নেই। এর উত্তর হলো: এই মামলাটির তদন্ত কাজ শুরুর আগেই খন্দকার মোশতাক আহমেদের মৃত্যু ঘটে। সেকারণ তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে অভিযোগপত্রে তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে বিচারের জন্য সোপর্দ করার কোনো সুযোগ ছিল না।
সাজার বিরুদ্ধে আসামির আপিল, অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে নালিশকারী বা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল, আসামিকে খালাস দেয়ার বিরুদ্ধে নালিশকারী বা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল। এই সব ধরনের আপিল চলাকালে যদি আসামির মৃত্যু ঘটে, সে ক্ষেত্রে আপিলটি বাতিল হিসেবে গণ্য হয়। ফলে আপিলের বিচারিক কার্যক্রম থেমে যায়।
তবে আসামির যদি অর্থদন্ড হয়ে থাকে, আর সেই অর্থদন্ডের বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য যদি কোনো পক্ষ আপিল করে থাকে, সেই আপিল আসামির মৃত্যুর পরও চলমান থাকবে এবং আসামির অনুপস্থিতিতে তার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কিংবা একতরফাভাবে এর নিষ্পত্তি হতে পারে।
সাজা ভোগকালে আসামির মৃত্যু হলে আসামির লাশ জেল কর্তৃপক্ষ তার আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করে এবং আত্মীয়স্বজন যথারীতি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তার দাফন সম্পন্ন করেন। আবার মামলার ফলস্বরূপ যদি একজন অপরাধী বা আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়, সে ক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পর লাশ আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করে। এ ক্ষেত্রেও আত্মীয়স্বজন ধর্মীয় বিধানমতে লাশের দাফন বা সৎকার সম্পন্ন করেন। তবে সাজা যদি অর্থদন্ড হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে আসামি মৃত্যুবরণ করলেও তার অর্থদন্ড মওকুফ হয় না। মৃত্যুর পরও অর্থদন্ড আসামির সম্পত্তি থেকে আদায় করার বিধান রয়েছে।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮
বিস্তারিত জানতে দেখুন ভিডিওটি