রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ অপরাহ্ন
ইবি প্রতিনিধি
সেশনজটের কবল থেকে মুক্তি পেতে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ, সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে সেমিস্টারের কার্যক্রম শেষ করা, শিক্ষার্থীদের কর্তৃক শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যবস্থাসহ বিভাগ সংস্কারে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের গগণ হরকরা গ্যালারিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের এক মতবিনিয় সভায় শিক্ষার্থীরা এসব দাবি তুলে ধরেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা বিভাগের বিদ্যমান অচলাবস্থা দূর করতে দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবি করেন। বিভাগের সভাপতি ড. মিয়া রাশিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিভাগের অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন উর-রশিদ-আসকারী, সাবেক উপ-উপাচার্য ড. শাহিনুর রহমান, অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান, অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, অধ্যাপক ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লুসহ অন্য শিক্ষকরা ও কয়েক শ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। রূদ্ধদ্বার এ বৈঠকে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের সুযোগ রাখেননি শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো- নতুন একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষার্থী বান্ধব ক্লাস রুটিন প্রণয়ন, প্রত্যেক শিক্ষককে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের অযথা বসিয়ে রেখে সময় নষ্ট না করা, ক্লাস রুটিন প্রণয়নের সময় ক্লাসের সময় এবং বশ্বিবদ্যিালয়রে বাসের শিডিউলের সামঞ্জস্যতা আনা, ক্লাস সংখ্যার পরিমাণ কমিয়ে গুণগত মান বৃদ্ধি করা, কোর্স সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি সরবরাহ করা, স্বয়ং কোর্স শিক্ষককেই প্রতি ক্লাসের এ্যাটেনডেন্স নেওয়া এবং কোর্স শেষে উপস্থিতির হার ও প্রাপ্ত নম্বর সকলের অবগতির জন্য বিভাগীয় নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন, যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া ও পরীক্ষা শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ ২০ দিনের মধ্যে নেটিশ বোর্ডে রেজাল্ট প্রদর্শন।
প্রতিটা কোর্সে সর্বোচ্চ ২ টি টিউটোরিয়াল/ এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে তার সঠিক মূল্যায়ন করে প্রত্যেকের প্রাপ্ত নাম্বার পরীক্ষার আগেই নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করা, পরীক্ষার ফলাফল প্রদানে লুকোচুরি বন্ধ করা এবং ইন্টারনাল ও এক্সটার্নাল পরীক্ষকের মার্ক প্রকাশ করা, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের মনযোগে বিঘ্ন না ঘটানোর লক্ষ্যে পরীক্ষার কক্ষে অপ্রাসঙ্গিক আওয়াজ ও কথাবার্তা বন্ধের জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া, পরীক্ষা শুরুর অন্তত ১৫ মিনিট আগে উত্তরপত্র প্রদান, যথাযথ পদ্ধতিতে আসন বন্টন, পরীক্ষা চলাকালীন অসদুপায় অবলম্বনকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, সম্পূর্ণ সেমিস্টারে ক্লাস রুটিন অনুযায়ী ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারবেন শুধু এমন শিক্ষকদেরই শুধু কোর্স প্রদান, উক্ত শিক্ষক অর্পিত দ্বায়িত্ব সুষ্ঠুরূপে সম্পাদন করবেন এবং এই বিষয়টি বিভাগের সভাপতি এবং পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উভয়ই নিশ্চিত করবেন।
শিক্ষকগণ পর্যাপ্ত প্রিপারেশন নিয়ে ক্লাস নিতে আসবেন এবং ক্লাসে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দিতে পারলে ছাত্রদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করে পরবর্তী ক্লাসে সঠিক উত্তর জানিয়ে দেবেন, বিভাগে শিক্ষকদের দলীয় লেজুরবৃত্তিক সকল নোংরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত হয়ে শিক্ষার্থী বান্ধব হতে হবে, ইভটিজিং এবং শিক্ষার্থী হয়রানির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, অযাচিত কারণে কোনো শিক্ষার্থীর সাথে দূর্ব্যবহার করা যাবে না, এমন কিছু ঘটলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের কেনোরূপ হয়রানি না করে উক্ত বিষয়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন, দূরব্যবহারকারী শিক্ষককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, বিভাগে স্বপ্রনোদিত হয়ে শিক্ষকদের নেয়া ক্লাস, পরীক্ষা বা এ্যাসাইনমেন্ট এসবের মূল্যায়ন (মাসিক ভিত্তিতে) করবে এবং এই ব্যাপারে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় করতে হবে।
শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষকদের ক্লাস মূল্যায়নের সুযোগ দিতে হবে (রেটিং পয়েন্ট আকারে) এবং বিভাগ সেটা মাসিক রিপোর্ট আকারে বিভাগের নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করবে, যেকোনো ধরণের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক নোংরা রাজনীতি বা রাজনৈতিক কর্মকান্ড বিভাগ কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। যে/ যারা নোংরা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকবে এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে তার/তাদের বিষয়ে বিভাগের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রতিটি ক্লাসরুমের অবকাঠামোগত সংষ্কার করতে হবে। যেমন: ত্রুটিমুক্ত সাউন্ড সিস্টেম, এসি, ফ্যান ও লাইট। প্রয়োজন অনুসারে অতিদ্রুত সংষ্কার করতে হবে, সেমিনার লাইব্রেরীর অবকাঠামো গত দমশ্যমান উন্নয়ন করতে হবে। নূন্যতম ১০ টি দৈনিক বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কোর্সের প্রতিটি বইয়ের একাধিক কপি সংরক্ষণ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক ইংরেজি মাসিক পত্রিকা (নূন্যতম ১০ টি) নিয়মিত রাখতে হবে, জরুরী ভিত্তিতে নারী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত এবং বিশেষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে (পরীক্ষার সময় বাচ্চার জন্য, ব্রেস্ট ফিডিং এবং অন্যান্য) এটাস্ট বাথরুম সহ স্বতন্ত্র কমনরুমের ব্যবস্থা করতে হবে, কম্পিউটার সেবা সহ সকলের জন্য উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সেবা জন্য নিশ্চিত করতে হবে।
ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত সেমিনার লাইব্রেরি উন্মুক্ত থাকা নিশ্চিত করতে হবে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং বার্ষিক বনভোজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের উপস্থিতি এবং বিভাগীয় অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিয়া রাসিদুজ্জামান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিভাগ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে একটা দৃশ্যমান পরিবর্তনের কথা বলেছি। এর মধ্যে সন্তোষজনক কোনো পরিবর্তন না হলে পুনরায় জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত আছি। বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে সকল শিক্ষক মিলে মিটিং করে দাবিগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে একটা রোডম্যাপ তৈরি করবো। যেহেতু ইংরেজি বিভাগে দীর্ঘমেয়াদী সেশন জট আছে। তবে জট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভাগের সকলেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি।