এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
আপনার জমি-জমা নিয়ে কেউ অপরাধ করলে, প্রতারণা করলে, জালিয়াতি করলে, আপনার প্রাপ্য জমি জমা নিয়ে জোর জুলুম করলে, জমি ফাঁকি দিলে, অবৈধভাবে আপনাকে উচ্ছেদ করলে, জমির মিথ্যা পরিচয় দিলে কিংবা মিথ্যা পরিচয়ে আপনার জমি অন্যের নিকট বিক্রি করলে, নিজ মালিকানার অতিরিক্ত সমর্পণ করলে কিংবা জবর দখল করলে- আপনি জমির নতুন আইন অনুযায়ী তাৎক্ষনিক ফৌজদারী মামলা করে এ্যাকশন নিতে পারবেন।
দেওয়ানী আদালতে মামলা করে বছরের পর বছর রায়ের জন্য আর অপেক্ষা করতে হবে না। আমাদের নতুন আইন ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩ এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফৌজদারী আদালতে নালিশী মামলা করে আপনি সহজে ভূমি খেকোদের দমন করতে পারবেন। কিন্তু এ মামলা কখন, কোথায়, কিভাবে করতে হয়, এর জন্য কত টাকা খরচ হয়, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আপনাকে কী করতে হবে-বিস্তারিত নিয়ে আজকের নিবন্ধ।
ধরুন কেউ জাল দলিল তৈরি করে আপনার সম্পত্তি নিজের বলে দাবি ও প্রচারণা করছেন কিংবা উপরে উল্লেখিত যে কোন একটা অপরাধ করেছেন, আপনি সোজা আপনার জেলা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে গিয়ে একজন আইনজীবী মাধ্যমে নালিশী অভিযোগ দাখিল করুন। মনে রাখবেন এ জাতীয় মামলা ১৮০ দিন বা ৬ মাসের মধ্যে বিচার শেষ করার বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ভূমি প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ দখলের মতো ১২টি অপরাধ চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের বিধান রাখা হয়েছে।
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর ৪(১)(ক থেকে ছ) ধারায় বলা আছে, অন্যের মালিকানাধীন জমি নিজের বলে দাবী বা প্রচার করলে, তথ্য গোপন করে জমি অন্যের নিকট বিক্রয় করলে, নিজের মালিকানার চেয়ে অতিরিক্ত জমি কারও নিকট সমর্পণ করলে, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তির স্থলে অন্য ব্যক্তি সাজিয়ে জমি হস্তান্তর করলে, মিথ্যা বিবরণ সম্বলিত কোনো দলিল স্বাক্ষর বা সম্পাদন করলে, কর্তৃপক্ষের নিকট কোন মিথ্যা বা অসত্য তথ্য প্রদান করলে সে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ অনধিক সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
এ আইনের ৫(১) ক থেকে (ঙ) ধারা পর্যন্ত বলা আছে যে, কোনো ব্যক্তির ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধন করা বা কোনো দাবি বা অধিকার সমর্থন করা অথবা কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি পরিত্যাগ বা চুক্তি সম্পাদন করিতে বাধ্য করা অথবা প্রতারণা করা যেতে পারে এইরূপ অভিপ্রায়ে কোনো মিথ্যা দলিল বা কোনো মিথ্যা দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুতকরণ করলে, মিথ্যা দলিল প্রস্তুতকরণ করলে, অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলিল স্বাক্ষর, সিলমোহর, সম্পাদনা বা পরিবর্তন করিতে বাধ্য করলে অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদ- ও অর্থদ-ে দ-নীয় হইবেন।
এ আইনে মামলা আদালতে দাখিল করলে আদালত ১. আসামীদের বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করতে পারেন কিংবা তদন্ত দিতে পারেন কিংবা আদালতের কাছে প্রাথমিকভাবে সত্যতা প্রমাণিত না হলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিতে পারেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির পদ্ধতি অনুযায়ী মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলবে। আসামীর প্রতি সমন, ওয়ারেন্ট, ক্রোকি পরোয়ানা, আসামী পলাতক থাকলে পেপার বিজ্ঞপ্তি, অনুপস্থিতিতে বিচার, চার্জ গঠন, সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহন, আসামী পরীক্ষা ও যুক্তিতর্ক। অবশেষে বিচারিক আদালত রায় প্রদান করবেন। আদালতের প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট না হলে সংব্ধুব্ধ পক্ষ আপীল করতে পারেন।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, পিএইচ.ডি গবেষক ও সম্পাদক-প্রকাশ ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইল: seraj.pramanik@gmail.com
বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি দেখুন:
https://youtu.be/Su-pFcp32Zg
সম্পাদক ও প্রকাশক : এ্যাডভোকেট পি. এম. সিরাজুল ইসলাম ( সিরাজ প্রামাণিক)
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বর, খুলনা, বাংলাদেশ।
মোবাইল : 01716-856728, ই- মেইল : seraj.pramanik@gmail.com নিউজ: dainikinternational@gmail.com