প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ৯, ২০২৪, ১০:২৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ৯:৫৫ পি.এম
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকা, না থাকা নিয়ে যত সংশয়!
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
একটি কথা চাওর হয়ে উঠেছে যে, বহু বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ প্রক্রিয়ায় পদত্যাগ না করায় তিনি এখনও প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা’র একটি ফোন কলের অডিও প্রকাশ পেয়েছে। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করেছেন সত্য; কিন্তু সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদের ব্যত্যয় ঘটেছে-কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। আরেকটি ভিডিও কলে শেখ হাসিনা বলছেন, ‘‘আমি দেশের কাছাকাছি আছি, যাতে চট করে ঢুকে যেতে পারি’’।
শেখ হাসিনা কি আদৌ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। এর আগে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী! আপনারা কেউ শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখেছেন?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন ও উত্তর জানতে আমার আইনাঙ্গনের অনেক শুভাকাঙ্খী ফোন করছেন। অবশেষ এ লেখা দিয়ে সমাধানের দিকে যেতে চাই। আইনের শিক্ষার্থী ও পেশাগত কাজে বাংলাদেশের সংবিধান নিয়মিত চর্চা করতে হয়। সহজ ভাষায় আমাদের সংবিধান রচিত। বোঝার জন্য খুব বেশী লেখাপড়া জানার দরকার নেই। বাংলা পড়তে পারেন-এমন মানুষ বোধ হয় সহজ এ বিষয়টি বুঝতে পারবেন।
আমাদের সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা আছে। কী আছে দেখুনঃ
৫৭। (১) প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি-
(ক) তিনি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন; অথবা
(খ) তিনি সংসদ-সদস্য না থাকেন।
(২) সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারাইলে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিবেন কিংবা সংসদ ভাংগিয়া দিবার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদান করিবেন এবং তিনি অনুরূপ পরামর্শদান করিলে রাষ্ট্রপতি, অন্য কোন সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন নহেন এই মর্মে সন্তুষ্ট হইলে, সংসদ ভাংগিয়া দিবেন।
(৩) প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।
সম্মানীত পাঠক একটু খেয়াল করুন। কিন্তু দেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী পলায়ন করলে কিংবা পালিয়ে যেতে বাধ্য হলে কি হবে, সে বিষয়ে এখানে কিছুই বলা নেই। এক্ষেত্রে সমাধান হচ্ছে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ। দেখুন কী আছে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ।
১০৬। যদি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রীম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপীল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানীর পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।
এজন্যই রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের উপদেশমূলক মতামতের ভিত্তিতে ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন। Doctrine of necessity (সময়ের চাহিদা নীতি) এর উপর পড়াশুনা করে ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছা পোষণ করে নিবন্ধের ইতি টানছি।
বিঃদ্রঃ অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী বলে কেউ দয়া করে গালিগালাজ করবেন না।
লেখকঃ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগবেষক ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃseraj.pramanik@gmail.com
পোস্টের প্রচার করুন · Boost post
All reactions:
20You, Adv Asad, Adv Sultana Begum Momo and 17 others
সম্পাদক ও প্রকাশক : এ্যাডভোকেট পি. এম. সিরাজুল ইসলাম ( সিরাজ প্রামাণিক)
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বর, খুলনা, বাংলাদেশ।
মোবাইল : 01716-856728, ই- মেইল : seraj.pramanik@gmail.com নিউজ: dainikinternational@gmail.com
ই-পেপার কপি