শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বিভাগীয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জিওগ্রাফী এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের সভাপতি ইনজামুল হক। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি ব্যাক্তিগত কারণ ও শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয় উল্লেখ করে। স্বাভাবিকভাবে রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র দেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও তিনি রেজিস্ট্রারসহ চারটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বরাবর এই পদত্যাগপত্র লিখেন। সভাপতি হিসেবে আর মাত্র চারদিন সময় ছিল তার।পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, শিক্ষার্থীবৃন্দের দাবির প্রেক্ষিতে এবং ব্যক্তিগত কারণে বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পালনে অপারগ, বিধায় উক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করছি। তিনি পত্রের শুরুতে লিখেন ‘বরাবর, সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ (২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২০২৩ সেশন) ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)।’
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন সকালে বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনায় বসেন। এসময় শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়াসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি না মানলে সভাপতির পদত্যাগের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা আলোচনায় শিক্ষকদের বিগত দিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষার্থীদের নানা নেতিবাচক কথায় আঘাত পেয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র চারদিন আগে অভিমান থেকে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে মত শিক্ষার্থীদের অনেকের। তবে পদত্যাগের আগে তিনি বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভা করে শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। আন্দোলনে পক্ষাবলম্বন করা সত্ত্বেও একজন শিক্ষককে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি করায় বিষয়টিকে নিয়ে আক্ষেপ করছেন বিভাগটির অনেক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ইনজামুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার উপর অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। তারা শুরু থেকেই অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আমার নিকট ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেছিলো। দাবি মানতে না পারলে পদত্যাগ করতে হবে বলে তারা আমাকে জানিয়ে দেয়। তারা বলছে, আমরা যেভাবে দাবিগুলো দিয়েছি ঠিক সেভাবেই মানতে হবে। মানতে অপারগ হলে পদত্যাগ করতে হবে। তারা যে দাবিগুলো দিয়েছে ওগুলো কারো পক্ষে হুবহু মানা সম্ভব নয়। তাই আমি ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছি। বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে তারা আমাকে অসম্মান করেছে।’
শিক্ষার্থীদের বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বলেছে তাদের দাবি মানতে অপারগ হলে ডিন ও শিক্ষার্থীদের বরাবর পত্র জমা দিয়ে সভাপতিকে পদত্যাগ করতে হবে। তাই তাদের কথামতো তাদের কাছেও পত্র জমা দিয়েছি। এরপরও আমি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সবসময় কাজ করে যাবো।’বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা সভাপতিকে পদত্যাগ করতে কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। আমরা আমাদের দাবিগুলো শুধু জানিয়েছিলাম। এ ছাড়া বিভাগের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। তবে কোনো অপ্রীতিকর শব্দ ব্যবহার করিনি। সভাপতি আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। আমরা তাকে পদত্যাগ করার বিষয়ে কথা বলিনি।