শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
সরকার নিজ প্রয়োজনে কিংবা অন্য কারও প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণ বা ল্যান্ড একুইজিশন করতে পারে। কিন্তু জমি মালিক অধিগ্রহণের টাকা কিভাবে উত্তোলন করবেন, জমির মূল্যমানের বেশী উত্তোলন করতে পারবেন কি-না, জমি অধিগ্রহণে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারবেন কি-না, জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ে কী করবেন, ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে বিলম্ব হলে কি করবেন-জমি অধিগ্রহণের নানা প্রশ্ন ও প্রশ্নোত্তর নিয়ে আজকের নিবন্ধ।
সরকার কিন্তু দেশের উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণে অর্থাৎ ঘর বাড়ি, দালান কোঠা, অফিস আদালত, শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলপথ, সড়ক বা সেতুর প্রবেশ পথ বা এ জাতীয় অন্য কিছু তৈরীর জন্য আপনার সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে। শুধু ব্যতিক্রম রয়েছে ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান ও শ্মশান অধিগ্রহণ করা যাবে না। এগুলোও অধিগ্রহণ করা যাবে যদি তা জনস্বার্থে একান্ত অপরিহার্য হয়। সেক্ষেত্রে অন্যত্র স্থানান্তর ও পূনঃনির্মাণ করে দিতে হবে।
এখন জানার বিষয় হচ্ছে জমি অধিগ্রহণের চিঠি হাতে পেলে আপনি কি করবেন। সরকারের পক্ষ থেকে ৪ ধারার নোটিশ জারির পর আপনি পনের (১৫) কার্য দিবসের মধ্যে অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নিকট আপত্তি দাখিল করতে পারবেন। জেলা প্রশাসক জমির পরিমান ও মান অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রেরণ করবেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত জনপ্রয়োজন বা জনস্বার্থে গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, এর বিরুদ্ধে কোথাও আপীল করা যাবে না।
শেষবারের মতো ৭ ধারায় নোটিশ জারি করা হয়। ৭ ধারায় নোটিশ জারির পর আর কোনো অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন জানার বিষয় হচ্ছে জমির মূল্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিভাবে আদায় করবেন। নোটিশ জারির সময় সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির বাজার মূল্য নির্ধারণের সময় উক্ত স্থাবর সম্পত্তির পারিপার্শ্বিক এলাকার সমশ্রেণির এবং সমান সুবিধাযুক্ত স্থাবর সম্পত্তির নোটিশ জারির পূর্বের ১২ (বার) মাসের গড় মূল্য হিসাব করা হবে। তবে যে বিষয়গুলি সরকার পক্ষ থেকে বিবেচনা করা হয় সেগুলো হচ্ছে ১। জমির উপর দ-ায়মান যে কোনো ফসল বা বৃক্ষের জন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষতি; ২। অধিগ্রহণের কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদ্যমান অপর স্থাবর সম্পত্তি হতে প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তি বিভাজনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি; ৩। অধিগ্রহণের কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অন্যান্য স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বা উপার্জনের উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি; ৪। অধিগ্রহণের কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার আবাসস্থল বা ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হলে উক্তরূপ স্থানান্তরের জন্য যুক্তিসংগত খরচাদি। ৫। সরকারি কোনো প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাজারদরের উপর অতিরিক্ত শতকরা ২০০ (দুইশত) ভাগ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। (অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি হলে আপনাকে আরো ৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে) ৬। বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে উক্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে বাজারদরের উপর অতিরিক্ত শতকরা ৩০০ (তিনশত) ভাগ। (অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি হলে আপনাকে আরো ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে) ৭। অন্যান্য কারণে সৃষ্ট ক্ষতির জন্য উক্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে বাজারদরের উপর অতিরিক্ত শতকরা ১০০ (একশত) ভাগ (অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি হলে আপনাকে আরো ২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে)।
ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরির প্রাক্কলিত অর্থ জমা দেওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝিয়ে দেবেন। কোনো ব্যক্তি ক্ষতিপূরণের অর্থ নিতে অসম্মত হলে বা ক্ষতিপূরণ নেওয়ার দাবিদার পাওয়া না গেলে অথবা ক্ষতিপূরণ দাবিদারের মালিকানা নিয়ে কোনো আপত্তি দেখা দিলে ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকারি কোষাগারে রাখা হবে।
এখন জানার বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি নিয়ে মামলা করা যাবে কি-না? অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি নিয়ে প্রদত্ত কোন আদেশ বা কোন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোন ধরণের মামলা বা আবেদন গ্রহণ করার এখতিয়ার রহিত করা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ এর (৪৭) ধারায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা না করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। আমাদের সংবিধানের ৪২(২) অনুচ্ছেদেও ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে স্থাবর সম্পত্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা না করার বিষয়ে বলা হয়েছে।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। Email: seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮
বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি দেখতে পারেনঃ