শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
উকিলবাবু এখন নেদারল্যান্ডে

উকিলবাবু এখন নেদারল্যান্ডে

 

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক: প্রথম প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে ডেটে গেলে যেমন একটা নার্ভাসনেস কাজ করে, বারবার পানির পিপাসা লাগে বা ওয়াশরুমে যেতে ইচ্ছে করে, কোর্টে বসে তেমনি একটা স্নায়ুর অস্থিরতা অনুভব করছিল অনামিকা। প্রেমিক বা প্রেমিকার প্রথম স্পর্শ পাওয়ার সময় যেমন অনুভূতি হয়, তেমনি বুকের ভেতর কেমন জানি একটা ভয় কাজ করছে, যার ফলে বারবার বুক কেঁপে উঠছে। সে কাউকে খুন করেনি বা কারো সম্পত্তি মেরে দেয়নি, তারপরও কেমন জানি একটা অশুভ, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে টেনশন কাজ করছে তার মাঝে। নিজের প্রিয় ফেসবুকটাও পর্যন্ত চেক করতে ইচ্ছে করছে না, দুই একবার ইচ্ছা করলেও কাঁপা হাতে মোবাইলের পাসওয়ার্ড লক খুলতেও নার্ভাস লাগছে অনামিকার। অথচ তার পাশে বসে দিব্যি ল্যাপটপে নিজের শেষ প্রস্তুতিটা সেরে নিচ্ছে উকিলবাবু। উকিলবাবু কাছে কোর্টরুমটা হয়ত তার এক দশক সংসার করা পুরনো বউয়ের আলিঙ্গনের মতো; কোন বাড়তি উত্তেজনা নেই। একটা এমএস ওয়ার্ড ফাইল বারবার স্ক্রোল আপ ডাউন করে পড়ছে। এই একটা পেশার লোক যারা কেবল বই পড়ে পড়ে পয়সা ইনকাম করছে। দুনিয়ার সকল বইপোকাদের উচিত উকালতি পেশায় আসা। যে যতো মোটা বই পড়বে, সে ততো মোটা অংকের ফী পাবে। এই উকিলবাবুও বেঞ্চের উপর রাখা কয়েকটা মোটা বই মাঝে মাঝে দেখছে আর ল্যাপটপের ফাইলটার সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে দেখছে। মাঝে মাঝে বই থেকে দুই একটা লাইন পড়ে বেশ খুশী হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে আর সাথে সাথেই ল্যাপটপে লিখছে। আবার কিছু লাইন পড়ে ঠোঁট উল্টিয়ে ভেংচি কাটছে, দেখে একটা বাচ্চা সুলভ আচারন বলে মনে হচ্ছি যদিও উকিলবাবু আপাদমস্তক মধ্য বয়স্ক একজন লোক। স্যুট টাইতে জেমস বন্ডের মতো লাগছে, বয়সও তাদের মতো চলি¬শের কোটায় হবে। বিয়ে শাদী করেনি, তবে গার্ল ফ্রেন্ড নেই এটা বলা মুশকিল। উকিলদের প্রেম করার সময়টাই বা কোথায়?

সময় কাটানোর জন্য কিছু না পেয়ে উকিলবাবুর দিকে একটু ঝুঁকে লাল, সবুজ, নীল আর কালো রঙে সাজান ওয়ার্ড ফাইলটার দিয়ে দুই একবার চোখ বুলানোর চেষ্টা করেছে অনামিকা।

The Libzan Airline Tragedz: The co-pilot, who survived, later said that the flight crew knew the Israeli jets wanted them to land but relations between Israel and Libza made them decide against following instructions. In direct contradiction to the co-pilot’s own account, the Libzan government stated that the attack occurred without warning. Israel’s air force perceived Flight 114 as a securitz threat, and that among the possible tasks it could have been undertaking was an aerial spz mission over the Israeli air base at Bir Gifgafa.

The Korean Airline Tragedz: Soviet jet fighters intercept a Korean Airlines passenger flight in Russian airspace and shoot the plane down, killing 269 passengers and crewmembers.

ইত্যাদি লেখা দেখে অনামিকা উকিলবাবুর দিকে ভদ্রতার হাঁসি হেঁসে আবার নিজের আসনে বসে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে নাক চোখ মুখ কুঁচকালো। আইন জিনিসটা এতো বোরিং, কিন্তু এটা থেকে রেহাই পাওয়ারও কোন উপায় নেই। লাইফে কখনো না কখনো এটার দ্বারস্থ হতেই হয়। কিছুদিন আগেই অনামিকা উকিলবাবুকে বলেছিল তার স্বামীকে তালাক দিতে চায়, কেননা তার স্বামী পরকীয়া করছে। উকিলবাবু তাকে কাউন্সিলিং করে স্বামীকে আরেকটা সুযোগ দিয়ে পুনরায় সংসার করতে বলল, সেখানে বছর না পার হতেই স্বামী দুর্ঘটনায় নিহত। তালাকের জন্য আদালতে যাওয়া থেকে উকিলবাবু তাকে বারন করেছিল। আদালতে উকিলদের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে আরও বেশী মানসিক কষ্ট পাবে, তারচেয়ে কিছু দিন ধৈর্য ধরতে বলল। যেই লোকটা কোর্টে যেতে না করেছিল, আজ সেই লোকই জোর করে কোর্টে নিয়ে আসলো তাও আবার একেবারে দেশের বাহিরে এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আদালত, আন্তর্জাতিক আদালতে। অনামিকা এটা ওটা ভেবে কিছু সময় পার করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে একজন চিৎকার দিয়ে জানালো, জজ সাহেবরা আসছেন, সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতে। উকিলবাবু বে¬জারের বোতাম লাগাতে লাগাতে দাঁড়িয়ে অনামিকাকে দাঁড়াতে ইশারা করল। অনামিকাও জিন্সের সাথে টি-শার্ট তার উপর বে¬জার পরেছিল, সেও উকিলবাবুর মতো বে¬জারের বোতাম লাগাল, যেন এটাই কোর্টরুমের ম্যানার সাথে ভিতরকার ভয় দূর করতে মুখে হাঁসি বিলিয়ে দিল।
মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে কোর্টরুমে মামলার ফ্যাক্টটা সংক্ষেপে বলা হলো। ২০১৯ সালের ১লা জানুয়ারি অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষের মাঝ রাতে একটি তুরস্কের একটি যাত্রীবাহী বিমান কোরিয়ার সীমান্তে ঢুঁকে পড়ে। কোরিয়ান কর্তৃপক্ষ অবতরণের জন্য সংকেত দেওয়া সত্ত্বেও তুরস্কের পাইলট অবতরণ না করায় কোরিয়া সেটাকে গুলি করে ধ্বংস করে দেয়। যার ফলে ক্রুসহ ১১৫ জন যাত্রী নিহত হয়। এই জন্য তুরস্ক কোরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
বিভিন্ন দেশের যাত্রীর সাথে বাংলাদেশেরও একজন যাত্রী ছিল, যার স্ত্রী হচ্ছে অনামিকা। যদি এই মামলায় কোরিয়া হেরে যায়, তাহলে নিহতদেরকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, সেই আশাতেই নিজের স্বামীর ক্ষতিপূরণটা পেতেই উকিলবাবুকে নিয়ে এতদূর পাড়ি দেওয়া।
তুরস্ক বনাম কোরিয়া
সাক্ষ্য প্রমাণ আর যুক্তি দিয়ে দুই দেশের আইনজীবীরা যেসব আর্গুমেন্ট করেছিল তা পাঠকের সময় বাঁচিয়ে বুঝার সুবিধার্থে নাটকের সংলাপের ন্যায় উপস্থাপন করা হল।
তুরস্কঃ Transit Rights Convention Ges Traffic Rights Convention অনুসারে তুরস্কের বেসামরিক বিমানের অধিকার রয়েছে অন্য যেকোনো দেশের মতো কোরিয়ার সীমান্তে প্রবেশ করার।
কোরিয়াঃ তুরস্কের যে বিমানটি কোরিয়াতে ল্যান্ড করবে না বা যেটি কোরিয়ার আকাশ সীমা ব্যবহার করে অন্য দেশে যায় না, সেটা যদি কোরিয়ার আকাশ সীমায় প্রবেশ করে সেটা অবশ্যই আন্তর্জাতিক আকাশ আইনের লঙ্ঘন। কোরিয়া তার নিজস্ব আকাশসীমা রক্ষায় পূর্ণ অধিকার রাখে এবং যে কোন ধরণের অনধিকার প্রবেশ মোকাবেলায় কোরিয়া যে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
তুরস্কঃ একটি বেসামরিক বিমান যান্ত্রিক ত্রুটি বা জ্বালানীর জন্য অবশ্যই আরেকটি দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে পারে। এটা Transit Rights Convention Ges Traffic Rights Convention উভয় কনভেনশনে বলা আছে।
কোরিয়াঃ আমরা তুরস্কের বিমানে আক্রমণ চালানোর পূর্বে বেশ কয়েকবার সংকেত দিয়েছে যেন সেটা নীচে অবতরণ করে। কিন্তু, তুরস্কের বিমান আমাদের সংকেতে আমল না দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের আকাশসীমায় অনধিকার প্রবেশ করে বিমান চালিয়ে গেছে। অবতরণ না করায় আমরা পাইলটের কাছে জানতে চেয়েছি কোন যান্ত্রিক ত্রুটির হয়েছি কিনা যার ফলে তারা বিমান অবতরণ করাতে পারছিল না, কিন্তু তাতেও পাইলটরা আমাদের সাড়া দেয়নি। এতো সংকেতের পরও যখন তুরস্কের বিমান অবতরণ করছিল না, তখন আমরা আমাদের আকাশসীমা থেকে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দিলাম, কিন্তু তাতেও তারা কর্ণপাত করল না। এরপর যেকোনো দেশের ন্যায় আমরাও আক্রমণ করতে বাধ্য হয়েছি।
তুরস্কঃ একটা বেসামরিক বিমান আপনাদের দেশে ল্যান্ড করছে না, তবে আকাশসীমা ব্যবহার করছে, শুধুমাত্র এই কারণে বেসামরিক বিমানে আক্রমণ করা কতোটা যৌক্তিক এবং আইনসিদ্ধ?
কোরিয়াঃ আমরা এখনো অস্বীকার করছি না যে, বেসামরিক বিমানে আঘাত করার নিয়ম নেই। কিন্তু, একটি বেসামরিক বিমান যখন কোন সংকেতের প্রতিউত্তর দেয় না, তখন আমাদের জায়গায় থাকলে আপনারা কি করতেন?
থার্টি ফাস্ট নাইটের একটা ফ্লাইটের পাইলটকে একাধিকবার সংকেত দিয়ে যখন কোন কোন প্রতিউত্তর পাওয়া যায় না এবং পক্ষান্তরে পরিলক্ষিত হয় যে, বিমান কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছাড়াই আমাদের আকাশসীমার প্রতি কোন প্রকার সম্মান প্রদর্শন না করে আকাশ আইন ভঙ্গ করছে, তখন পাইলটের উপর থার্টি ফাস্ট নাইটের আঁচড় পড়েছে বলে ধরে নেওয়াটা কোন মতেই ভুল নয়। স্থলে থাকা অন্যদের মতো পাইলটও হয়ত মাদক এবং নারী সংক্রান্ত কোন বিষয়ে ব্যস্ত থাকার দরুন আমাদের সংকেতের জবাব দেয়নি। আমাদের সংকেতের জবাব দেওয়াটা আপনারা প্রাসঙ্গিক মনে না করলেও, আমরা প্রাসঙ্গিক এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্য এটাকে আবশ্যকই মনে করেছি।
তুরস্কঃ আপনারা যদি আপনাদের সংকেতের জবাব না দেওয়ার জন্যই আক্রমণ করে থাকেন, তাহলে আক্রমণটা আপনারা অনেক আগেই করতে পারতেন। অথচ আপনারা তা না করে যখন বিমানটি আপনাদের আকাশসীমা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনি আপনারা আক্রমণ করেছেন, এটাতে কি এটা প্রতীয়মান হয় না যে, আপনাদের আক্রমণ করার একটা উগ্র মানসিকতা শুরু থেকেই ছিল যা পরে আপনারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি?
কোরিয়াঃ আমরা নিশ্চয়ই কোন বেসামরিক বিমানকে এতো সময় দিতে পারি না যে, তারা আমাদের আকাশসীমার ঘুরাফেরা করবে কিন্তু অবতরণ করবে না। এটা সম্পূর্ণ আমাদেরকে আকাশসীমার প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অবমাননা। তাই যতটুকু দেওয়া আমরা প্রাসঙ্গিক মনে করেছি, ঠিক ততটুকুই আমরা দিয়েছি; যখন সেটা সীমা লঙ্ঘন করেছে তখনি আমরা আক্রমণ করেছি। কিন্তু, আপনার অভিযোগটা মিথ্যা। আমরা আপনাদের বিমানটিকে আমাদের আকাশসীমা ত্যাগ করার সময় আক্রমণ করিনি, বরং আপনি বিমানের রোডম্যাপটা দেখতে বুঝতে পারবেন আপনাদের বিমানটি প্রায় দশবার আমাদের আকাশসীমা থেকে বের হয়ে যেতে যেতে আবার পুনরায় ফিরে এসেছে। তাই, আমরা যখন আক্রমণ করেছি তখন সেটা ফিরত যাচ্ছিল গেলে মনে হলেও সেটা পুনরায় ফিরে আসতো, কিন্তু আমরা চাইনি সেটা পুনরায় ফিরে এসে আমাদের ভূখ-ের কোথায় বিধ্বস্ত হোক এবং আমাদের নাগরিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষতি সাধন করুক।
তুরস্কঃ অপরাধ ঘটার আগেই অপরাধের শাস্তি দেওয়া আইনত অপরাধ। আমরা বিশ্বাস না করলেও আপনার অনুমানকেই যদি সঠিক ধরে নেই, তাতেও আমাদের বিশ্বাস হয়ত ব্যক্তিগত বা অন্য কোন কারণে পাইলটরা এই ধরণের কোন ভুল করেছে। এতো হাজার ফুট উঁচুতে দুটো লোক ভুল করেছে, কিন্তু তাদেরকে শুধরানোর সুযোগটা আপনারা নীচে থেকে এতো গুলো লোক দিলেন না। মাদক বা নারী নিয়ে বিমানে পাইলটরা থার্টি ফাস্ট নাইট উৎযাপন করছিল কিনা আমাদের জানা নেই, কিন্তু আমরা এখানে রাডারের সামনে বসার আগে নিশ্চয় নববর্ষটা উপভোগ করেছিলেন, যার রেশ আক্রমণের অর্ডার দেওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল।
কোরিয়াঃ প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। আমরা ঐ সময়ে আক্রমণ করে যদি ঐ বিমানটিকে সমুদ্রে অবতারণ না করাতাম, তাহলে বিমানে যে ১১৫ জন নিহত হয়েছিল সেটা স্থলে আমাদের হাজারেরও বেশী নাগরিককে নিহত করতে পারতো। পারতো আমাদের কোন বাণিজ্যিক ক্ষতি করতে।
বেশ লম্বা সময় ধরে চুপ থাকার পর উকিলবাবু একটু ইশারা দিতেই তুরস্কের আইনজীবী উকিলবাবু বলার সুযোগ দিল।
উকিলবাবুঃ আপনারা বলছিলেন যে, আপনাদের আরও বেশী নাগরিক মারা যেতে পারতো, বাণিজ্যিক ক্ষতি হতে পারতো, কিন্তু হয়নি তো?
অথচ আমাদের তো একটা আস্ত বিমান চলে গেলো যার মূল্য হয়ত নির্ধারণ সম্ভব, ক্ষতিপূরণ দিয়ে সেটা পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু ১১৫ টি মানুষের জীবনের মূল্য কি তাদের পরিবারকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন?
আমার বিজ্ঞ বন্ধু দেখুন, ন্যায় ভাবে ১০০০ মানুষ নিহত হওয়া আর অন্যায় ভাবে ১ জন মানুষ নিহত হওয়ার মাঝেও তফাৎ রয়েছে। একটু ভাবুন আর আমার সাথে মিলিয়ে নিন, আপনারা কিন্তু একবারও হলফ করে বলতে পারেন না যে বিমানটা পাইলটের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গিয়েছিল বা পাইলটের কোন সামরিক আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল। এও বলতে পারেন না যে, বিমানটা আদৌ পুনরায় ফিরে আসতো কিনা, হয়ত সে সমুদ্রতীর গিয়ে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে আপনাদের আকাশসীমা অতিক্রম করে চলে যেতো। আবার এও হতে পারে, যদি পাইলট সত্যি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থাকে তাহলে সে হয়ত সমুদ্রের অপেক্ষাই করছিল ল্যান্ড করার জন্য। অনেক কিছুই হতে পারতো। কিন্তু, আপনারা মাথা ব্যথার জন্য কোন ওষুধ না দিয়ে বা প্রাকৃতিক ভাবে সেরে যাওয়ার অপেক্ষা না করে উপরন্তু যার মাথা ব্যথা সে কিছু জানান দেওয়ার পূর্বেই গর্দান ফেলে দিলেন। এটাই কি আপনাদের প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো থিওরির বাস্তবরূপ?
কোরিয়াঃ আমরা তখন অপেক্ষা করলে হয়ত আজকে তুরস্ত বনাম কোরিয়ার মামলার শুনানি না হয়ে কোরিয়া বনাম তুরস্কের মামলার শুনানি চলতো এবং কোরিয়াকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হতো তুরস্ক।
উকিলবাবুঃ ঠিক। আর আপনার অপেক্ষা না করাতেই আজকের বাদী জায়গায় আপনারা বিবাদী এবং ক্ষতিপূরণও আপনাদেরকেই পরিশোধ করতে হবে।
কোরিয়াঃ অসম্ভব। আমরা ঐদিন নাটকের শেষ দৃশ্য দেখার জন্য অপেক্ষা করলে আমাদের যেমন ক্ষতি হতো তেমনি আপনাদের বিমানও বিধ্বস্ত হতো। তখন নিশ্চয়ই বিমানের জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতেন না?
উকিলবাবুঃ আমরা উকিলরা সব পরিস্থিতিতেই ঠা-া মাথায় নিজের মক্কেলের অধিকারের জন্য উকালতি করাই আমাদের কাজ। তখন আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা না করলেও পাইলটের অবহেলার কারণে আমার মক্কেলের স্বামীর অকাল মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবী করতাম, ইনস্যুরেন্স, সবই বুঝতেই পারছেন। কিন্তু, এখন সেটা আপনাদেরকেই পরিশোধ করতে হবে।
কোরিয়াঃ কোন যুক্তিতে, কোন আইন অনুসারে আপনি আমাদের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করছেন?
উকিলবাবুঃ এতক্ষণে আপনি লাইনে এসেছেন। এটা কোর্ট, এখানে শুধু আইন আর প্রমাণ চলে। সেই কখন থেকেই আপনারা দুই পক্ষ শুধু যুক্তি দেখিয়ে যাচ্ছে যেন এটা কোন বিতর্ক প্রতিযোগিতা না হয় কোন টিভি টকশো।
কোরিয়াঃ আচ্ছা, তো আপনি আপনার দাবীর পক্ষে আইন দেখান।
উকিলবাবুঃ ধৈর্য বিজ্ঞ বন্ধু, ধৈর্য। একবার ধৈর্য না ধরে আপনার মক্কেল বিপদে পড়েছে, আমিও ধৈর্য হারা হলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে আপনাদের বিমান বাহিনীর এক বছরের অর্থ বাজেট না খুইয়ে(হারিয়ে) বসেন। পরে তো কোন বিদেশী সামরিক বিমানকেও তাড়া করার সাহস পাবেন না।
কোরিয়াঃ এখন আপনিই বরং বেশীই বলছেন আর সময় নষ্ট করছেন।
উকিলবাবুঃ দুঃখিত। শেষ পাওয়ার পে¬তে ব্যাটিং করার আগে নিজেকে একটু সময় দিচ্ছি আর তোমাদেরও একটু ফিল্ডিং সাজানোর সময় দিচ্ছি, যদিও আমি জানি তোমাদের ফিল্ডাররা ইতিমধ্যে অপ্রয়োজনে বেশী ঘাম ঝরিয়ে ফেলেছে।
কোরিয়াঃ ওহে বাংলাদেশী বন্ধু, যাও ক্রিজে গিয়ে দাঁড়াও।
উকিলবাবুঃ হাহাহা। তোমাদের অতীতের মামলার রেফারেন্স দিয়েই শুরু করছি। ঞযব কড়ৎবধহ অরৎষরহব ঞৎধমবফু ১৯৮৩, নিশ্চয়ই এই ট্র্যাজেডির কথা তোমরা আজও ভুলোনি। কি হয়েছিল এই মামলায় মনে আছে? বলবে কোর্টকে নাকি আমি বলবো?
কোরিয়াঃ কিছুই পাবে না সেখান থেকে, তারপরও বলতে চাচ্ছো বলো।
উকিলবাবুঃ তোমার আমার কিছুই পাওয়ার দরকার নাই। যারা পেলে আমার মক্কেলের অধিকার আদায় হবে, তারা নিশ্চয়ই পাবে।
বিচারকদের হাতে কিছু পেপারস পৌঁছে দিয়ে একটু উচ্চস্বরেই উকিলবাবু বলতে শুরু করলেন।
উকিলবাবুঃ ১৯৮৩ সালে কোরিয়ান এয়ারলাইন ট্র্যাজেডিতে একটি কোরিয়ান এয়ারলাইন্স দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি সামরিক অঞ্চলের নিকটে চলে গেলে রাশিয়ান মিগ যুদ্ধ বিমান কোরিয়ান বিমানটিকে ভুপাতিত করে। ক্রুসহ ১৬৯ জন নিহত হয়। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
মামলাতে সোভিয়েত যুক্তি দেখিয়েছে যে, তাদের অধিকার আছে তার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার। তাছাড়া তারা হামলা করার আগে একাধিকবার সতর্কতামূলক সংকেত পাঠিয়েছিল।
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা (ওঈঅঙ) তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোরিয়ান বিমানের সোভিয়েত ইউনিয়নে অনুপ্রবেশের ঘটনাটা ঘটেছে ক্রু’দের অবহেলার কারণে। তারপরও, সোভিয়েত ইউনিয়নের নিন্দা জানিয়েছিল ওঈঅঙ এবং সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভ কোরিয়াকে বিপুল অংকের ক্ষতিপূরণ প্রদান করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
পয়েন্ট টু ভি নোটেড, কোরিয়ান বিমান সোভিয়েতের সামরিক অঞ্চলে প্রবেশ করায় সোভিয়েত ভূপতিত করেছে, আর তুরস্কের বিমান কোরিয়ার বেসামরিক অঞ্চলে ঢুকছে বলে তাকে ভূপতিত করেছে। সোভিয়েতের সামরিক অঞ্চলে প্রবেশটা অবশ্যই কোরিয়ার বেসামরিক অঞ্চলে প্রবেশের চেয়ে বহুগুণ বেশী গুরুতর। সেখানে যদি সোভিয়েত ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়, তাহলে কোরিয়া কেন নয়?
আহা বেচারা সোভিয়েত, আজ কোরিয়া এমন যুক্তি দেখাচ্ছে জানতে পারলে সোভিয়েত নিশ্চয়ই কাল তাদের পরিশোধিত ক্ষতিপূরণ মুনাফা সমেত ফেরতের জন্য আপীল করবে আন্তর্জাতিক আদালতে।
কোরিয়াঃ আপনি নিশ্চয়ই জানেন ঐ সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন মূলত তাদের আবিষ্কৃত মিগ যুদ্ধ বিমানটিকে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য মিসাইলের কার্যকারিতা পরীক্ষা করছিল?
উকিলবাবুঃ জি, তারা করছিল। তবে ডেমো হিসেবে কোরিয়ান বিমানকে আক্রমণ করেনি। তারা কোরিয়ান বিমানকে ডেকে আনেনি তাদের সামরিক অঞ্চলে, কোরিয়ান বিমান নিজ থেকে গিয়েছিল। এরচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মামলার রায় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে গিয়েছিল এবং ওঈঅঙ কাউন্সিল সর্বসম্মতভাবে একটি প্রবিধান গ্রহণ করেন যে, বেসামরিক বিমানের বিরুদ্ধে কোন অবস্থাতেই অস্ত্র বা শক্তি ব্যবহার করা যাবে না। আপনারা কিন্তু এই প্রিসিডেন্টটাও অনুসরণ করেননি। এই মামলার মাধ্যমে আমরা চাইবো আন্তর্জাতিক আদালত আজকে আন্তর্জাতিক আকাশ আইনের জন্য একটা সুস্পষ্ট নজীর এবং শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরি করা হোক, যেন ভবিষ্যতে কোন রাষ্ট্র এই ধরণের সামরিক আক্রমণ কোন বেসামরিক বিমানের উপর চালানোর সাহস পর্যন্ত না করে। বিমান এবং ক্রুসহ ১১৫ জন যাত্রীর জন্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণটা এতোই বেশী হোক যেন, কোন রাষ্ট্র উক্ত ক্ষতিপূরণের কথা মাথায় রেখেই যেন কোন বেসামরিক বিমানের উপর সামরিক আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১১৫ কেন, একজন যাত্রী নিয়েও যদি কোন বিমান অন্য রাষ্ট্রে প্রবেশ করে, সেই বিমানেও যেন আক্রমণের সাহস না দেখায় কেউ। প্রতিটি মানুষের জীবনের মূল্য সেই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের ন্যায় বিবেচনা করা উচিত। প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর রাষ্ট্রের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে জনগণের প্রতিনিধির যেমন মূল্য রয়েছে, জনগণেরও তেমন মূল্য রয়েছে। আজকে যে বিমানের তুরস্ক সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের যাত্রী ছিল, সেই বিমানে যদি তুরস্ক সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থাকতো, তাহলে সেই বিমানে কি কোরিয়া সামরিক আক্রমণ চালানোর সাহস করতো আর যদি করতোও তাহলে সেটার ক্ষতিপূরণ কতো হবে সেটা নিশ্চয়ই মহামান্য আদালত সেটা নির্ধারণ করতে নিশ্চয়ই যাত্রীদের লাইফস্টাইল কেমন ছিল সেটা খতিয়ে দেখতে চাইতেন না।
আমাদের আকুল আবেদন এই যে, বেসামরিক বিমানে অবৈধভাবে হামলা চালানোর অভিযোগে কোরিয়াকে বিশ্বের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি বিমানের ক্ষতিপূরণ সহ ১১৫ যাত্রীর অকাল এবং অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
এই বলে উকিলবাবুসহ বাদী পক্ষের সকল আইনজীবী নিজ নিজ অবস্থান থেকে বসে পড়লেন।
কোরিয়ার পক্ষে আইনজীবীরা বিভিন্ন যুক্তি প্রদান করলেও সঠিক কোন প্রিসিডেন্ট প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হওয়ায় মামলার রায়ে আন্তর্জাতিক আদালত স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, কোন মতেই বেসামরিক বিমানে কোন প্রকারের আক্রমণ করা যাবে না। তবে, পাইলট অন্য কোন দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে কিন্তু অবতরণ করবে না, এমন পরিস্থিতি হলে পাইলট যেন সংকেতে উত্তর দেয় এবং তার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে জানিয়ে দেয়। অনধিকার প্রবেশ যেন অশোভন আচারন সমেত না হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালত কোরিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে তুরস্কের পক্ষে রায় প্রদান করেন এবং বিমান কর্তৃপক্ষ সহ যাত্রীদেরকে মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে কোরিয়াকে আদেশ দিয়েছেন।
রায়ে প্রথমে ক্ষিপ্ত হলেও পরে আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক শান্ত হয়ে কোরিয়ার আইনজীবীরা এবার আপত্তি তুলল।
কোরিয়াঃ যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের জন্য কেবলমাত্র তুরস্ক, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, চীন, জাপান মামলা করেছে। কিন্তু, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, জিম্বাবুয়ের যাত্রীদের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি। তাদের ক্ষতিপূরণ কেন দিবে কোরিয়া?
উকিলবাবুঃ ‘ক্লাশ একশন’ থিউরির কথা নিশ্চয় শুনেছেন। টার্কিশ এয়ারলাইন ট্র্যাজেডি মামলায় এই প্রিসিপালটি প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে কোড করা হয়েছে যে, যদি একজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন, তাহলে বাকি সকল ক্ষতিগ্রস্ত বিনা মামলাতেই একই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন।
কোরিয়াঃ তাই বলে যাকে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে?
উকিলবাবুঃ কাকে যাকে তাকে বলছেন?
কোরিয়াঃ নিজ দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী কিছু লোককে তুরস্ক তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছিল। তারা তো তুরস্কতেও অবৈধ ছিল। তাদেরকে কেন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে?
উকিলবাবুঃ এটা নিয়ে কোন প্রিসিডেন্ট আছে কিনা তা এই মুহূর্তে আমার মাথায় আসছে না। এই বিষয় নিয়ে রিসার্চ করা হয়নি। বেশ শক্ত অবজেকশন দিয়েছেন ব্যারিস্টার সাহেব। এই যাত্রায় মনে হয় যুক্তি বা প্রিসিডেন্ট দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে, একটা যুক্তি নিশ্চয়ই দেখাতে পারি যে, অবৈধ সিটিজেন কিন্তু অবৈধ যাত্রী নয় এবং আপনার কাছে এমন কোন প্রিসিডেন্ট নাই যেখানে অবৈধ নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সময় তাদের জীবনের মূল্য নেই বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত নয় উলে¬খ আছে।
কোরিয়াঃ সব যদি আপনিই নির্ধারণ করে পেলেন, তাহলে তো রেস্টুরেন্টে বসেই সমাধান করা যেত, পোলম্যান স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে দেখতেই আমরা সমাধান করে ফেলতে পারতাম। তাই না উকিলবাবু?
উকিলবাবুঃ ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি তো কেবল আপনার যুক্তির খ-ন করছিলাম। ঠিক আছে, তাহলে মহামান্য আদালতের সিদ্ধান্তই শোনা যাক। আর্গুমেন্টের আমাদের নতুন করে কিছু বলার নেই, ইউর অনার।
কোরিয়াঃ ইউর অনার, ডিফেন্স কোরিয়ার আকাশসীমা রক্ষা করতে এই আক্রমণ চালিয়েছে। নিজের আকাশসীমা রক্ষার অধিকার সকল স্বাধীন রাষ্ট্রের রয়েছে। কোরিয়া কোন কিছুই অন্যায় করেনি।

“আপনার বাড়িতে আমি যেমন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারি না, তেমনি আপনিও আমার উদ্দেশ্য বোঝার আগেই আমাকে গুলি করতে পারেন না। আমি খাবারের খোঁজে বা কোন প্রাকৃতিক কাজ সারতে বা অসুস্থ হয়ে বা আপনাকে অন্য কেউ ভেবে আপনার বাড়িতে ভুল ক্রমে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতেই পারি। প্রয়োজন আইন মানে না, তাই কোন না কোন প্রয়োজনে আমি আপনার বাড়িতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করেই যখন ফেলেছি তখন আপনি আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন, বের করে দেওয়ার জন্য কুকুর বা দারোয়ানকে ব্যবহার করতে পারেন। সরাসরি বন্দুক এনে গুলি করাটা ট্রেসপাসের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি রকমের প্রাইভেট ডিফেন্স। হ্যাঁ, সময়টা যখন রাতের বেলা তখন আইন আপনার পক্ষে কিছুটা শিথিল। তারপরও, মানবতা তো অন্ধকারেও সম্ভব, যদি আপনার যুদ্ধের চেয়ে শান্তিই বেশী পছন্দনীয় হয়” – উপরোক্ত যুক্তি প্রদর্শন পূর্বক মহামান্য আদালত তুরস্ক তথা সকল দেশকে সতর্ক করে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন যে, ভবিষ্যতে বিমান চালকের শারীরিক অবস্থা চেক করে বিমান চালনার কাজ শুরু করতে এবং সম্পূর্ণ যাত্রাকালে যেন কোন রূপ এলকোহল গ্রহণ করা না হয় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখা হয়। পাশাপাশি যেকোনো বিমান চালক যদি নিজ দেশ ব্যতীত অন্য কোন দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করে তাহলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আগেই যেন সে তার উদ্দেশ্য জানিয়ে দেয়। এবং সবশেষে কোরিয়াকে উক্ত মামলা দোষী সাব্যস্ত করে সকল মৃত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি বিমানের ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ প্রদান করা হয়।

{অতঃপর একে একে সকলেই কোর্ট রুম থেকে প্রস্থান করলেন।}

[আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হতে হতে উকিলবাবু এবং তার মক্কেলের কথোপকথন]
অনামিকাঃ উকিলবাবু, তুমি কিন্তু আমার এই ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য সম্পূর্ণ ক্রেডিট নিতে পারো। তুমি না বললে আমি হয়ত তখন ডিভোর্সই দিয়ে দিতাম রাসেলকে। আর আজ এক মিলিয়ন ডলার পাওয়া হতো না।
উকিলবাবুঃ আমি শুধু ক্ষমা করতে এবং ধৈর্য ধরতে বলেছি। একটা ক্ষমা এবং একটু খানি ধৈর্যের বিনিময়ে হয়ত এটা তোমার জন্য পুরষ্কার ছিল। জানি না, রাসেল সাহেব শেষ পর্যন্ত পরকীয়া থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন কিনা, যদিও প্যাসেঞ্জার লিস্টে দেখা গেছে রাসেল সাহেবের পাশের সীটে ফিলিপাইনের এক তরুণী ছিল, যা তোমার সন্দেহের সাথে আংশিক মিলে।
অনামিকাঃ আংশিক না, ও ঐ মেয়ের সাথেই পরকীয়া করছিল এবং ওকে নিয়ে হানিমুনে যাচ্ছিল।
উকিলবাবুঃ থাক, এখন আর রাগ দেখিয়ে লাভ নেই। আমাদের রাষ্ট্রীয় আইন তোমাদের পক্ষে হলেও মুসলিম আইন অনুসারে তো একজন পুরুষ সমান চোখে দেখলে চার জন পর্যন্ত স্ত্রী রাখতে পারে। ও এক আইন অনুসরণ করেছে, তুমি আরেক আইন, পার্থক্য শুধু এতোটুকুই।
অনামিকাঃ ও যে মেয়ের সাথে প্রেম করছিল সে মেয়ে খ্রিষ্টান ছিল। খ্রিষ্টান মেয়ে বিয়ে করা কি মুসলিম আইন সাপোর্ট করে?
উকিলবাবুঃ অবশ্যই। একজন মুসলিম পুরুষ একজন খ্রিষ্টান নারীকে বিয়ে করতে পারে। ইনফ্যাক্ট, মুসলিম পুরুষ যেকোনো কিতাবিয়া নারীকেই বিয়ে করতে পারে। তবে, মুসলিম নারী কেবল মুসলিম পুরুষকেই বিয়ে করতে পারে।
অনামিকাঃ তুমি এই আইন দেশে গিয়ে বললে, মানুষ তোমাকে খুন করে ফেলবে।
উকিলবাবুঃ সেটা অন্য কথা। তবে, যা আইনে আছে আমি কেবল তাই বললাম। কিছু মিথ্যা বলিনি।
অনামিকাঃ তো, তুমি কি থাকছো কিছুদিন নেদারল্যান্ড, নাকি আজই চলে যাবে।
উকিলবাবুঃ নিজের পয়সা খরচ করে থাকার ইচ্ছে নাই, তবে যদি মক্কেল তার নিজের পয়সায় নেদারল্যান্ডের সৌন্দর্য দেখাতে চায় তাহলে ভিন্ন কথা।
অনামিকাঃ ওহ হো। মক্কেলের টাকায় শুধু নেদারল্যান্ডের সৌন্দর্যই দেখতে চাও, কিন্তু মক্কেলের সৌন্দর্য দেখতে চাও না?
উকিলবাবুঃ উকিলবাবু শুধু মক্কেলের মামলাই দেখে, মক্কেলের রূপ বা সৌন্দর্য নয়।
[উভয়েই অট্ট হাঁসি হেঁসে একটা উষ্ণ আলিঙ্গনের মাধ্যমে বিদায় নিল। অনামিকা নিজের হোটেলের পথ ধরল আর অন্য দিকে উকিলবাবু পাশের একটা কপিশপের টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। নেদারল্যান্ডে তার কোন এক উকিল বন্ধুকে ইমেইলে কপিশপের ঠিকানা দিয়ে ইমেইল করল। বন্ধুর অপেক্ষায় উকিলবাবুৃ ]

লেখকঃ আইবিষয়ক কলাম লেখক ও আইন গবেষক

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel