শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
সবই জলে গেল!

সবই জলে গেল!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: একটি রসগল্প দিয়ে লেখাটি শুরু করতে চাই। সেদিন সকালে হরেনদা দাঁত মাজছিল। হঠাৎ করে তার প্রতিবেশী অলোকের সাথে দেখা। অলোককে দেখে থু করে পিক ফেলে বলল, ‘দুশো’টা টাকা আমার জলে চলে গেল জানিস!’ অলোক বলল, “কেন ? কিকরে ?” হরেনদা বলল, “আরে দুশো টাকা দিয়ে একটা পাঞ্জাবী কিনেছিলাম। বছর-দুই পরেছি। দেখি হাতাগুলো আর ঝুলপকেট ছিঁড়ে লটপট করছে। দিলাম হাতা আর ঝুলটা কেটে, পাঞ্জাবীটার বুক পেট বরাবর দিলাম চালিয়ে কাঁচি। হয়ে গেল ফতুয়া। সেটাও বছর-দুই পরেছি। অলোক জিজ্ঞাসা করল তারপর হল কি দাদা? হরেন বলল, তারও তলার দিকটা ছিঁড়ে-খুঁড়ে গেল। দুশো টাকার জিনিস ফেলে দেব? চালালাম কাঁচি। হাতাগুলো ছোটো হল। হাইটও কমে গেল। বৌ এর সুন্দর ব্লাউজ হয়ে গেল। বৌ সেটা দুবছর পরল। আর পরা যায় না। হাতা আর তলা একেবারে ঝুরঝুরে হয়ে গেল। তাই বলে কি দুশো টাকার জিনিস ফেলে দেব? আবার চালালাম কাঁচি। পুরো হাতা আর ধারগুলো কুচকুচ করে কেটে দিলাম। একটা সুন্দর রুমাল হয়ে গেল। সেটাও কমসেকম দুবছর তো ব্যবহার করেইছি । তারপরে সেও আর চলে না। কিন্তু ফেলে তো দেওয়া যায় না। দুশো টাকা বলে কথা। সরু সরু করে রুমালটাকে কেটে বেশ কয়েকটা প্রদীপের সলতে বানালাম। প্রদীপ জ্বলে। কিন্তু ছাইগুলো কি ফেলে দেব বল? দুশো টাকা তো কম নয়। ছাইগুলো সব জড়ো করে রেখেছিলাম। তাতেই আজ দাঁত মাজছিলাম। এই থুথুর সঙ্গে আজ সব জলে চলে গেল। দুশো টাকা। বড় আফশোস হচ্ছে ভাইরে!”

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু আমরা তো শেষ ভালটি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। যুদ্ধে নেমে মাঝপথে রণভঙ্গ বা আত্মসমর্পণে যেন পরিণত না হয়। সীমিত আকারে খুলে দেওয়া, শিথিলতা, সমন্বয় যেন করোনা সাগর পারি দিতে মাঝ সাগরে হাল ছেড়ে দেওয়া না হয়। করোনায় মৃত্যু কমেছে, অনেক মানুষের প্রাণ বেঁচেছে। কিন্তু তীরে এসে যেন তরী না ডোবে।

সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার বাইরে বহুক্ষেত্রেই ভয়ংকর অনিয়ম, সমন্বয়হীনতার, যা ইচ্ছে তাই করার ঘটনা ঘটেই চলেছে। পোশাক শিল্প কারখানার মালিকরা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে তাদের ইচ্ছামত সারাদেশ থেকে শ্রমিক এনে কারখানা চালাচ্ছে, পুলিশী সিদ্ধান্তে ইফতার বাজার খুলে দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে মাস্কের মান নিয়ে কথা বলার পরও মাস্কের মান নিয়ে কথা বলায় দুইজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, করোনাকালেও স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটায় ভয়ংকর দুর্নীতি হয়েছে, খাদ্যত্রাণ প্রদানের তালিকা প্রণয়নে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি হয়েছে, খাদ্যত্রাণ চুরির ঘটনা ঘটছে, এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা নগ্নভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

এটাও সত্য যে সরকারি ছুটি তথা অঘোষিত লকডাউন মাসের পর মাস বা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল করে অর্থনীতি সচল করতে হবে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে, এই লকডাউনই সংক্রমণ বিস্তার রোধ করে দেশকে মহামারির পর্যায়ে যাওয়া থেকে ও অনেক প্রাণহানি থেকে বাঁচিয়েছে। তাই লকডাউন শিথিল করার পরিকল্পনা, প্রক্রিয়া, পর্যায়, পর্বগুলি অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে নির্ধারণ করতে হবে। যখন আইইডিসিআর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দেশের মহামারি রোগ বিশেষজ্ঞগণ আশংকা করছেন করোনা সংক্রমণ বিস্তারের ক্ষেত্রে মে মাসসহ আগামী দুইমাস বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ; তখন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সমন্বয় ছাড়া এলোপাথাড়িভাবে লকডাউন শিথিল করা, লকডাউন তুলে নেওয়া, সব কিছু খুলে দেওয়া সরকােেরর মানুষ বাঁচানোর, দেশ বাঁচানোর ঐকান্তিক অক্লান্ত প্রচেষ্টার সুফলকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

করোনার ক্ষেত্রে ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’ কথাটির প্রতিফলনের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু নিবন্ধের শিরোনামের মতো হরেনদা’র দুশো টাকা যেন জলে না যায়।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক ও আইন গ্রন্থ প্রণেতা। Email:seraj.pramanik@gmail.com মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel