শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
করোনার দীর্ঘ ছুটিঃ চেক ডিজঅনার মামলার সময় সীমা উত্তীর্ণ হলে কি হবে?

করোনার দীর্ঘ ছুটিঃ চেক ডিজঅনার মামলার সময় সীমা উত্তীর্ণ হলে কি হবে?

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: কোনো ব্যক্তি তার ব্যাংক একাউন্ট হতে অন্য কোন লোককে অর্থ পরিশোধের জন্য চেক দেয় এবং উক্ত একাউন্টে যদি টাকা না থাকে কিংবা কোনো কারণে চেকটি ডিসঅনার হয় তাহলে চেকদাতা একটি অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে গণ্য হবে। এ অপরাধের জন্য তিনি এক বৎসর মেয়াদ পর্যন্ত দন্ডে দন্ডিত অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুন পরিমাণ অর্থ দন্ডে দন্ডিত হবে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। এ মামলাটি সাধারণত চেক ডিসঅনারের মামলা নামে খ্যাত। নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের (এন.আই অ্যাক্ট) ১৩৮ ধারায় এ মামলায় করা হয় বলে অনেকে এন.আই অ্যাক্টের মামলা বলে থাকে।

পাঠক এবার আসল কথায় আসি। লুৎফর তালুকদার। নিতান্তই একজন ভদ্রলোক। একমাত্র ছেলে ফয়সাল। ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে মনস্থির করেন তালুকদার সাহেব। পরিচয় হয় আদম ব্যাপারী আনিস আহমেদের সাথে। তিনি ফয়সালকে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। এর জন্য প্রয়োজন এগারো লক্ষ টাকা। তালুকদার সাহেব রাজী হয়ে গেলেন। জমি বিক্রি করে ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে টাকা প্রদান করলেন। কিন্তু বিধিবাম! চুক্তি অনুযায়ী আদম ব্যাপারী আনিস আহমেদ কানাডায় পাঠাতে ব্যর্থ হন। টাকা ফেরত চান তালুকদার সাহেব। শর্ত ও কথা অনুযায়ী আনিস সাহেব টাকা ফেরত দিতে রাজী হলেন। কিন্তু তিনি মনের মধ্যে এক চাতুরীতা পুষে রাখলেন। এক সকালে আনিস সাহেব একটি বেসরকারি ব্যাংক হিসাবের নিজের একাউন্ট থেকে তালুকদার সাহেবের নাম লিখে এগার লক্ষ টাকার চেক দিলেন। চেকের তারিখ অনুসারে তালুকদার সাহেব ওই ব্যাংকে যান এবং অ্যাকাউন্টে চেক প্রদান করেন। কিন্তু চেকে বর্ণিত একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। একাউন্ট থেকে জানানো হলো ওই একাউন্ট নাম্বারে পর্যাপ্ত টাকা নেই যা দিয়ে এই চেককে সম্মান করা যায়। অর্থাৎ চেকটি ডিজঅনার করা হলো। তখন তালুকদার সাহেব কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আনিস সাহেবকে ফোন করলেন। কিন্তু আনিস সাহেবের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেল। তালুকদার সাহেব গেলেন একজন আইনজীবীর কাছে। আগেই বলে রাখি সুচতুর চেকদাতা আনিস সাহেব চেকে তারিখ লিখে দিয়েছেন ১০/৯/২০১৯। আমরা সবাই জানি, চেক কাটার তারিখ থেকে ছয়মাস পর্যন্ত চেকে টাকা উত্তোলনের মেয়াদ থাকে। সুচতুর আনিস সাহেব তালুকদার সাহেবকে টাকা উত্তোলনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ৫/৩/২০২০ ইং তারিখে। যা হবার তাই হলো। আইনজীবী সাহেব যথারীতি সার্বিক বিষয় অবগতি করে আনিস সাহেবকে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করলেন। আনিস সাহেব ৮/৩/২০২০ ইং তারিখে লিগ্যাল নোটিশ গ্রহন করলেন। আইন অনুযায়ী ৮/৫/২০২০ ইং তারিখে মধ্যে আনিস সাহেবের বিরুদ্ধে মামলাটি করতে হবে। কিন্তু করোনার ছুটির কারণে মামলাটি করতে না পারায় তিনি এ দোষ কাকে দেবেন? কার কাছে বিচার চাইবেন।

এবার জেনে নেয়া যাক এ মামলা করার নিয়মকানুন
ক.চেকটি প্রস্তুত হওয়ার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে অথবা চেকটি বৈধ থাকাকালীন সময়ের মধ্যে যেটি আগে হয় সেই সময়সীমার মধ্যে ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে।
খ.চেকটির প্রাপক অথবা যথা নিয়মে ধারক যেই হোন না কেন ব্যাংক কর্তৃক চেকটি ফেরত কিংবা ডিস্অনার হয়েছে তা অবগত হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে চেকে বর্ণিত টাকা পরিশোধের দাবি জানিয়ে চেক প্রদানকারীকে লিখিত নোটিশ প্রদান করবেন।
গ.উক্ত নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেক প্রদানকারী চেকের প্রাপককে অথবা যথা নিয়মে ধারকের বরাবর উল্লেখিত পরিমাণ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে মামলার কারণ উদ্ভব হবে।
ঘ.মামলার কারণ উদ্ভব হওয়ার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।

তাহলে করোনা ছুটির কারণে কোর্ট বন্ধ থাকার বিষয়ে এন.আই. এ্যাক্টের মামলার ক্ষেত্রে সরকার, আইন, আদালত কিছু ভেবে দেখবেন কি?

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel