বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
ডিজিটাল দৈত্যের যাতাকলে লেখক মুশতাকের মৃত্যু বনাম মত প্রকাশের স্বাধীনতা!

ডিজিটাল দৈত্যের যাতাকলে লেখক মুশতাকের মৃত্যু বনাম মত প্রকাশের স্বাধীনতা!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: মুশতাক আহমেদের লেখার সাথে আমার পরিচিতি এক যুগেরও বেশী সময় ধরে। তিনি কোনো ভয়ংকর সন্ত্রাসী ছিলেন না, চোর, দূর্ণীতিবাজ, ব্যাংক ডাকাত কিংবা কালো টাকা পয়সারও মালিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন নিতান্তই একজন লেখক, তাঁর অস্ত্র ছিল কলম। একজন বিবেকবান ও সমাজসেচেতন মানুষ। কোনো অন্যায় হলে প্রতিবাদ করতেন, কলম ধরতেন। মুশতাক আহমেদও তাই করেছিলেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী অবস্থায় তিনি বৃহষ্পতিবার রাতে কাশিমপুর কারাগারে রহস্যজনক মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকে এ মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছেন। এ মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে অনেক লেখক-সাংবাদিক সত্য লিখতে ভয় পাবেন-এটা বোঝার জন্য বেশী জ্ঞানী হওয়ারও দরকার নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা ও বিনা বিচারে দিনের পর দিন কারাগারে আটক রেখে নির্যাতন করে লেখক মুশতাক আহমেদকে তো হত্যাই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সত্য বলা ও লেখার কারণে যুগে যুগে অনেক লেখক-সাংবাদিককে জেলখানায় মরতে হয়েছে, চাপাতির কোপে মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়েছে, মাথার ঘিলু বেরিয়ে রাস্তায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। এক শ্রেণীর কথিত বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা নামক কালো আইন নিপাত যাক, বাকস্বীনতা মুক্তি পাক’ শ্লোগান দিলেও প্রেস মিনিষ্টার সেজে বিশেষ ব্যত্তিদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত হয়। ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’-শিরোনামে দাবী জন্মের পর থেকে শুনে আসলেও ৪০ বছর বয়সে আবার নতুন করে লিখতে হচ্ছে, যে ভূমিতে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই, যেখানে সেতু আর রাস্তার উন্নয়ন নামে লুটপাট হয় হাজার কোটি টাকা। সেই উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়েই লেখক মুশতাকের লাশ বহন করা হয়।
প্রতিটি সরকারের সময়কাল রঞ্জিত হয়েছে লেখক-সাংবাদিকের রক্তে। কিন্তু কোনো সরকারের হাতেই প্রণীত হয়নি একটি লেখক-সাংবাদিক সুরক্ষা আইন। এমনকি দেশে একের পর এক লেখক-সাংবাদিক খুনের ঘটনা ঘটলেও কোনো খুনের বিচার প্রক্রিয়াই সুষ্ঠভাবে এগোয়নি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি একটিরও। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দিনের পর দিন লেখক-সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও তেমন কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আজও আমাদের রাজপথে দাঁড়িয়ে এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডের ও নির্যাতনের বিচার দাবি করতে হচ্ছে। এসব হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের বিচার না হলে সাহসী সাংবাদিক ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। প্রতিষ্ঠিত হবে না আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার। দেশের বুদ্ধিজীবীরা, সাংবাদিক-সম্পাদকরা এই হত্যার দায় এড়াতে পারবেন না।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইল: seraj.pramanik@gmail.com
May be an image of 1 person and outdoors

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel