শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
স্বামীর বাড়িতে থাকা ব্যবহার্য আসবাবপত্র উদ্ধারে কোন মামলা করবেন?

স্বামীর বাড়িতে থাকা ব্যবহার্য আসবাবপত্র উদ্ধারে কোন মামলা করবেন?

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

বিবাহ বিচ্ছেদের পর সাধারণত স্ত্রীর পক্ষ থেকে দাবী উঠে যে, স্বামীর বাড়িতে তার ব্যবহার্য আসবাবপত্র, কাপড় চোপড়, সোনা-দানা ও অন্যান্য জিনিসপত্র রয়ে গেছে কিংবা আটকে রেখেছে, যেগুলো বিবাহের সময় বা বিবাহ পরবর্তীতে বাবার বাড়ি থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন। এই স্ত্রীধনগুলো সাধারণত স্বামী কিংবা শশুড়-শাশুড়ী বা পরিবারের সদস্যরা দিতে চায় না। নানা তালবাহানা করতে থাকেন কিংবা সেগুলো অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয় ইত্যাদি। এগুলো উদ্ধারের জন্য আপনি আইনগতভাবে কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, আমাদের প্রচলিত আইনে স্ত্রীধন উদ্ধারে কি বলা আছে, সেসকল মামলা করার প্রক্রিয়া কি সেসব বিষয়ে আজকের আলোচনা।

স্বামী যদি স্বেচ্ছায় স্ত্রীধন ফেরত না দেয়, তাহলে আপনি সহজেই আপনার অঞ্চলের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এর ধারা ১৫ (১) এর উপধারা ৭ মোতাবেক মামলা দায়ের করতে পারেন। এবার জেনে নিই কি আছে এ ধারাতে। আদালত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির মালিকানাধীন যে কোন স্থাবর সম্পত্তি বা স্ত্রীধন বা উপহার সামগ্রী বা বিবাহের সময় অর্জিত যে কোন সম্পদ এবং অস্থাবর সম্পত্তি বা মূল্যবান দলিল বা সনদ এবং অন্য যে কোন সম্পদ অথবা মূল্যবান জামানত তাহাকে ফেরত প্রদান করিবার জন্য প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারিবে।

এই আইনের অধীনে ক্ষতিপূরণ আদেশের আবেদন ছাড়া প্রতিটি আবেদন নোটিশ জারির পর থেকে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিষ্পত্তি করতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করতে না পারলে আদালত কারণ লিপিবদ্ধ করে অতিরিক্ত ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করবেন, ধারা-২২ এ কথাগুলো বলা রয়েছে। মজার সংবাদ হচ্ছে এই যে, আদালত দুই পক্ষের সম্মতিতে নিভৃত কক্ষে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। এতে সামাজিকতা ও গোপনীয়তা রক্ষা পেয়ে থাকে।

এ আইনের ধারা ২৬ এ বলা আছে, প্রতিপক্ষের প্রতি উপস্থিতির জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে, কিন্তু তিনি যদি উপস্থিত না হন অথবা একবার উপস্থিত হয়ে পরবর্তী সময়ে আর হাজির না হন, তাহলে আদালত তার অনুপস্থিতিতে বিচার আবেদন একতরফাভাবে নিষ্পত্তি করতে পারেন।

অনেক সময় দেখা যায়, উল্লেখিত স্ত্রীধন বা মূল্যবান সম্পদ স্বামী স্বেচ্ছায় সাবেক স্ত্রীকে ফেরত প্রদানে গড়িমসি করলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজধারী কার্যবিধি আইনের ৯৮ ধারায় মামলা করে থাকেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সেই সব স্ত্রীধন বা মূল্যবান সম্পদ উদ্ধারের জন্যে সার্চ ওয়ারেন্ট বা তল্লাশি পরোয়ানা ইস্যু করে থাকেন। তবে স্ত্রী সম্পদ উদ্ধারের ক্ষেত্রে ধারাটি উপযুক্ত নয়। মহামান্য হাইকোর্ট বলছেন, বিয়ের ফার্নিচার উদ্ধারের জন্য ফৌজধারী কার্যবিধির ৯৮ ধারা মামলাটি রক্ষনীয় নয়। এ বিষয়ে কাজী হাবিবুল্লাহ বেলালী বনাম ক্যাপ্টেন আনোয়ারুল আজিম খান মামলা, যা ৪০ ডিএলআর, ২৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৯৮ এর বিধান তখনই প্রযোজ্য হবে যখন ম্যাজিস্ট্রেট সন্তুষ্ট হবেন যে, অনুসন্ধান করা স্থানটি চুরি করা সম্পত্তি জমা বা বিক্রির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। উক্ত মামলার রায়ের মহামান্য আদালত উল্লেখ করেছেন বিয়ের ফার্নিচার উদ্ধারের জন্যে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজধারী কার্যবিধির ৯৮ ধারায় আদেশ প্রদান করতে পারেন না।

উপরোক্ত সিদ্ধান্ত থেকে সহজেই অনুমেয় যে, স্ত্রীধন বা মূল্যবান সম্পদ বা বিবাহের সময় দেওয়া ফার্নিচার সমুহ ফেরত পাওয়ার লক্ষে একমাত্র উপযুক্ত আদালত হচ্ছে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং স্থান ভেদে এসব আদালতেই বিবাহের ফার্নিচার তথা স্ত্রীধন উদ্ধারের জন্যে আবেদন করতে হয়।

একটি বাস্তব কেইস ষ্টাডি দিয়েই লেখাটি শেষ করতে চাই। আবদুর রহিম নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মোঃ মাহতাব হোসেন মোল্লাকে অভিযুক্ত করে ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ বরগুনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ৯৮ ধারায় এক নালিশ দায়ের করেন। নালিশে বাদী জানান, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তিনি ঢাকা-মেট্রো-চ-১৩-৫৪৫৫ নম্বরের একটি প্রাইভেট কার ক্রয় করেন। মামলা দায়েরের দিন অবধি ব্যাংকের নিকট তিনি ২ লক্ষ ৪ হাজার টাকা গাড়ী কেনা বাবদ দেনা থাকেন। ফরিয়াদী ২রা নভেম্বর, ২০১৩ ইং তারিখে ৬০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় গাড়ীটি অভিযুক্তর নিকট হস্তান্তর করেন। ভাড়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে অভিযুক্ত গাড়ির মূল মালিকের নিকট হতে গাড়ীটি ছিনিয়ে নিয়ে অভিযুক্তের নিজের জিম্মায় রাখে। বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২০০ ধারায় বাদীর জবানবন্দি নিয়ে এ বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নালিশী গাড়ীর মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যসহ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে আদেশ দেন। বিজ্ঞ আদালত নালিশী গাড়ীর প্রকৃত মালিক জনৈক আবুল কালাম আজাদ হতে অভিযুক্ত ঐ গাড়ীটি কিনেছেন মর্মে সিদ্ধান্ত নেন এবং ওসি, বরগুনা সদর থানাকে নির্দেশ দেন নালিশী গাড়ীটি অভিযুক্ত বরাবরে হস্তান্তর করতে। ফরিয়াদী এই আদেশের বিরুদ্ধে বগুড়া দায়রা (সেশন) আদালতে ২০১৪ সনের ৬৯ নং ফৌজদারী রিভিশন দায়ের করেন। বগুড়ার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রিভিশনের রায়ে নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন এবং ওসি, বরগুনা সদর থানাকে নালিশী গাড়ীটি ফরিয়াদীর নিকট হস্তান্তর করার আদেশ দেন।

রিভিশন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে ফৌজদারী বিবিধ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিজ্ঞ হাইকোর্ট বিভাগে কেবল রিভিশন আদেশটিই বাতিল করেননি বরং মূল মামলাটিও তথা নিম্ন আদালতের মামলাটিও অচল, অরক্ষনীয় ঘোষণা করেন। নালিশী গাড়িটি আদেশের ১০ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত বরাবরে হস্তান্তর করতে ওসি, বরগুনা সদর থানাকে আদেশ দেন।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। ইমেইলঃseraj.pramanik@gmail.com, মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel