শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন!

স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন!

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

একজন নারী কিভাবে তার স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারে, তালাক প্রদানে একজন নারীর হাতে কি কি পথ খোলা রয়েছে, তালাক দিতে কোথায় যেতে হয়, কত টাকা খরচ হয়, আইনে তালাক প্রদানে নারীর ক্ষমতা কতটা সম্প্রসারিত-তা নিয়েই আমাদের আলোচনা।

কোনো স্ত্রী যদি যুক্তিসংগত কারণে স্বামীকে তালাক দিতে চান, সে ক্ষমতা প্রচলিত আইনে স্ত্রীর রয়েছে। মুসলিম আইনে নারীদের হাতে তালাকের তিনটি পথ খোলা আছে। ১. ‘খুল’ বা ‘খুলা’ তালাক, খ. মুবারাত এবং গ. তালাক-ই-তাওফিজ।

এবার জেনে নিই খোলা তালাক কি। এই তালাকে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে। এই ধরনের তালাকে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য স্ত্রী তার স্বামীকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। সাধারণত ক্ষতিপূরণ হিসেবে স্ত্রী তার আর্থিক দাবির কোনো অংশ ত্যাগ করে এবং তখন স্বামী তালাক দেয়ার মাধ্যমে স্ত্রীকে বিবাহবন্ধন থেকে মুক্ত করে দেয়। যদি স্বামী বা স্ত্রী একত্রে শান্তি ও সৌহার্দের মধ্যে বসবাস করতে না পারে সেক্ষেত্রে স্ত্রী তালাকের বিনিময় মূল্য প্রদান করে খুলা তালাক পেতে অধিকারিণী। (শিরিন আলম চৌধুরী বনাম ক্যাপ্টেন শামসুল আলম চৌধুরী ৪৮ ডিএলআর (হাইকোর্ট) পৃষ্ঠা-৭৯)।

তবে এ তালাকের উল্লেখযোগ্য দিক হলো-১। স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন, ২। স্বামী ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে থাকেন, ৩। স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামী বিনিময়ে স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিদান নিয়ে থাকেন এবং স্ত্রী তা দিয়ে থাকেন বা দিতে সম্মত হন। তবে খোলা তালাকের ক্ষেত্রে অন্য কোনো চুক্তি না থাকলে স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার অধিকারী হবেন না; কিন্তু ইদ্দত পালনকালে স্ত্রী তাঁর গর্ভের সন্তানের জন্য স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। খুলা তালাকের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বামী রাজী হয় না। তখন আদালত তালাকের নির্দেশ দিতে পারে। যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে তাদের মধ্যে সব কিছু মেনে আর সংসার করা সম্ভব নয় তখন আদালত সবকিছু বিবেচনা করে খুলা তালাকের নির্দেশ দিবে। স্বামী রাজী না হলেও আদালত এ ধরনের নির্দেশ দিতে পারে। (মোসাঃ বিলকিস ফাতিমা বনাম নাজমুল ইকরাম কোরেশী ১৯৫৯, ১১ ডিএলআর, ৯৩, খুরশীদ বিবি বনাম বাবু মোহাম্মদ আমিন ১৯৬৭, ১৯ ডিএলআর, ৫৯)। খোলা তালা প্রস্তাবক যেহেতু স্ত্রী, তাই চেয়ারম্যানের কছে স্ত্রী নোটিশ পাঠাবে। যদি স্বামী বা স্ত্রী একত্রে শান্তি ও সৌহার্দের মধ্যে বসবাস করতে না পারে সেক্ষেত্রে স্ত্রী তালাকের বিনিময় মূল্য প্রদান করে খুলা তালাক পেতে অধিকারিণী। (শিরিন আলম চৌধুরী বনাম ক্যাপ্টেন শামসুল আলম চৌধুরী ৪৮ ডিএলআর, হাইকোর্ট, পৃষ্ঠা-৭৯)।

আর মুবারাত হলো পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ। এ ধরনের বিবাহ বিচ্ছেদের বেলায় উভয়ই বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হয় বলে কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগে না। শারিয়া অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্ট ১৯৩৭ এই তালাকের বিধান ছিল। মুবারাত তালাকের প্রচলন খুব একটা নেই বললেই চলে। সংসার করার ক্ষেত্রে বিরূপ মনোভাবটি দু’জনের কাছ থেকে আসে তখন সেটা হয় মোবারত। মোবারতের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ পাঠানোর দায়িত্ব যিনি প্রস্তাব উত্থাপন করবেন তিনি পাঠাবেন। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, মুবারাতের ক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনে মিলে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে তারা আর এক সাথে বসবাস করবেন না। মুবারাতের ক্ষেত্রেও একে অপরের কাছ থেকে দেনা পাওনার কোন বিষয় থাকে না। (১৬ ডিএলআর, ৩৮৯)।

সবশেষে তালাক-ই-তাওফিজ বা অর্পিত ক্ষমতাবলে দেয়া তালাক। নিকাহনামা বা কাবিন নামার ১৮ নং কলামে “স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করছে কি-না? করে থাকলে কী শর্তে?” এই প্রশ্নটি থাকে। কাবিননামার ১৮ নং ঘরটি এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পূরণ করা উচিত। অনেক সময় কাজীরা এ প্রশ্ন করেন না এবং ঘরটি শূন্য থাকে। কাজীদের অবশ্যই দু’পক্ষকে দিয়ে ঘরটি সম্পর্কে জানানো উচিত। এই ধরনের তালাকে স্বামী কিছু শর্তসাপেক্ষে তালাক দেয়ার ক্ষমতা স্ত্রীকে প্রদান করে এবং উক্ত শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী তালাক প্রদান করতে পারবে। কাবিননামার ক্ষমতা বলে স্বামীর শর্ত খেলাপ করার কারণে স্ত্রী নিজ নফসের প্রতি তালাকের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।( ৯ ডিএলআর ৪৫৫)।

প্রচলিত মুসলিম আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের বেলায় স্বামী-স্ত্রীর অসাম্য দূর করার জন্য ১৯৩৯ সালে পাস করা হয় মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন। এই আইনে বিভিন্ন কারণে যেমন স্বামী যদি ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হয় বা স্বামী যদি কোনো ফৌজদারি অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয় অথবা স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করে তাহলে স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারবে। সুতরাং স্বামী কর্তৃক অর্পিত ক্ষমতাবলে নয় অথবা কোনো প্রকার আর্থিক দাবি ত্যাগ না করে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। মনে রাখতে হবে ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ (৬) ধারা অনুযায়ী তালাকের মাধ্যমে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, তালাক হওয়া দম্পতি পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে সেক্ষেত্রে নতুন করে বিয়ে করতে হবে।

লেখকঃ আইনজীবী ও আইন গবেষক। ০১৭১৬৮৫৬৭২৮

 

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel