শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
বিদেশ থেকে স্ত্রীকে কিভাবে তালাক দিবেন?

বিদেশ থেকে স্ত্রীকে কিভাবে তালাক দিবেন?

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
একটি জরিপ সংস্থা প্রকাশ করছে, বিদেশে অবস্থানরত অনেক পুরুষ তাদের স্ত্রীকে দীর্ঘদিন দেশে রেখে যাওয়ায় স্ত্রীরা জৈবিক খোরাক নিবারণের জন্য পুরুষ বন্ধু বেছে নিচ্ছে। তথ্য বলছে, শতকরা ৪৩ ভাগ বিবাহিত নারী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। তার অন্যতম কারণ স্বামীর চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কাজে গড়ে বছরের ১০ থেকে ১১ মাস ঘরের বাইরে থাকা।

আপনারা যারা প্রবাসে আছেন, বিদেশে আছেন, তাদের দেশে থাকা স্ত্রীদের সাথে বনিবনা হচ্ছে না। অনেকে বলে থাকেন বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার অপব্যবহার করেছেন আমার স্ত্রী, আবার অনেকে বলে থাকেন আমার স্ত্রীর সাথে আমার বাবা-মা, ভাই বোনের মিলছে না। আবার অনেকে বলে থাকেন আমার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন। সেকারণ আমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাই। হ্যাঁ, আপনি আইনগতভাবে আপনার স্ত্রীকে বিদেশ থেকে তালাক দিতে পারবেন। তবে এর জন্য অবশ্যই আপনাকে কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। সেটি বেশ কঠিন এবং ব্যায়বহুল।

বিদেশ থেকে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতে হলে দেশে কোন নিকটাত্মীয় কিংবা বিশ্বস্ত কাউকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। এ তালাক প্রদানের ক্ষমতা হচ্ছে পাওয়ার অব এ্যাটর্নী বা আমমোক্তারনামা। এ ক্ষেত্রে যাকে আমমোক্তার নিয়োগ করা হলো তিনি আপনার পক্ষে আপনার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের যাবতীয় কার্যাবলী দেশে বসে সম্পাদন করবেন। এবার আপনার দায়িত্ব হচ্ছে দেশে অবস্থিত কোন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন। আইনজীবীর মাধ্যমে ইংরেজিতে তালাকের নোটিশটি প্রস্তত করুন। আইনজীবীর মাধ্যমে ইংরেজিতে একটি আমমোক্তারনামা প্রস্তুত করুন। আমমোক্তার নামাটি এবং তালাকের নোটিশটি আপনার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন, হতে পারে ইমেইল অথবা ডাক/কুরিয়ার সার্ভিস বা অন্য কোন মাধ্যমে। আমমোক্তার নামাটি যখন আপনার কাছে পৌঁছাবে আপনি সেখানে স্বাক্ষর করবেন, একটি ছবি সংযুক্ত করবেন এবং তালাকের নোটিশেও আপনি স্বাক্ষর করবেন। তবে এ কাজটি করতে হবে বিদেশী নোটারী পাবলিক, আদালতের বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট বা বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্যদূত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির সম্মুখে এবং তার দ্বারা মোক্তারনামাটি প্রত্যায়ন করে পাঠাতে হবে এবং নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা সত্যায়িত করাতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে স্ট্যাম্পযুক্ত হতে হবে। সেখানে আমমোক্তারনামা দলিলের ওপর একটি নাম্বার ও তারিখ পড়বে। এরকম বিদেশি আমমোক্তারনামার সঠিকতা যাচাই করতে হলে জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে গিয়ে ওই নাম্বার দিয়ে যাচাই করে নেয়া যায়। তবে বিদেশ থেকে দেশ পর্যন্ত এসকল কাগজপত্রাদি চালাচালি ও বাস্তবায়ন হতে হবে ৪ মাসের মধ্যে। নতুবা এর ভ্যালিডিটি কার্যকারিতা হারাবে।

এরপর বাংলাদেশের ক্ষমতাপ্রাপ্ত আমমোক্তারদাতা ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭(১) ধারার বিধান অনুযায়ী বিদেশে অবস্থানরত স্বামীর পক্ষে স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করছেন সে এলাকার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান/পৌর মেয়র/সিটি কর্পোরেশন মেয়রকে ওই তালাকের নোটিশ রাষ্ট্রীয় ডাকযোগে এডি সহযোগে প্রেরণ করবেন। সেই সাথে তালাক গ্রহীতাকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে।

তালাক নোটিশ প্রাপ্তির ৯০ দিন পর আপনার তালাকটি কার্যকর হবে। অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন, তালাক দেয়ার পর স্ত্রীতো মামলা করবে। হ্যাঁ, স্ত্রী মামলা করতেই পারে। স্ত্রীরা সাধারণত একটি যৌতুকের মামলা আরেকটি দেনমোহর খোরপোষের মামলা করে থাকে। আপনি দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেবেন। আরেকটি যৌতুকের মামলা। এ মামলা দেশে এসে প্রতিযোগিতা করবেন, নিশ্চয়ই জামিন ও খালাস পাবেন। কারণ যৌতুক চাওয়ার ঘটনার সময় আপনি তো বিদেশে ছিলেন। কাজেই এ ধরণের মিথ্যা মামলা প্রমাণ করা যায় না। আবার অনকে জানতে চান, স্ত্রীর কাছে তো অনেক টাকা পয়সা পাঠিয়েছি। সেগুলো ফিরে নিতে চায়। সহজ উত্তর আইনগতভাবে সেগুলো ফিরে পাওয়া যাবে না।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। মোবাইলঃ ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮, ইমেইল: seraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel