বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২১ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ! নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের থেকেই ভিসি নিয়োগের অনুরোধ ইবি শিক্ষকদের সংবিধান সংস্কারঃ সংশোধন না-কি পুনর্লিখন? 
ড. শোয়াইব আহমাদের অকাল মৃত্যু: একটি উজ্জল নক্ষত্রের পতন

ড. শোয়াইব আহমাদের অকাল মৃত্যু: একটি উজ্জল নক্ষত্রের পতন

অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব,ডক্টর শোয়াইব আহমাদ (ইন্না লিল্লাহ — রাজিউন)। গত ৬ জুন আমি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বাশিপ এর একটি সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য ঢাকা থেকে বরিশাল যাবার পথে মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় ডক্টর শোয়াইবের আহত হওয়ার সংবাদটি প্রথম জানতে পারি। সাথে সাথেই তাঁর খবর নেওয়ার চেষ্টা করি। পরবর্তীতে হাসপাতালে গিয়ে আইসিইউতে তাকে দেখার পর ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারি তাঁর অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল। তবু আশায় বুক বেধেছিলাম তিনি হয়ত সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। কিন্তু শনিবার গভীর রাতে শোয়াইবের মৃত্যু সংবাদটি শুনে কিছুতেই মনকে সায় দিতে পারছিলাম না।

শোয়াইব বয়সে আমার কয়েক বছরের ছোট। একই এলাকার ছোট ভাই হিসেবে তাকে আমি অত্যন্ত আদর করতাম। তিনিও আমাকে অত্যধিক শ্রদ্ধা করতেন। অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ও অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী শোয়াইব অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। আমার জানামতে তাঁর শিক্ষা জীবনে কোনস্তরে কোনদিন দ্ধিতীয় হয়নি সব পরীক্ষাতেই প্রথমই হয়েছিলেন। ছাত্রজীবনেই নাত,কেরাত সহ ইসলামিক নানাবিধ প্রতিযোগিতায় তিনি অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছিল। শোয়াইব যখন ১৯৯৬/৯৭ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব পদে চাকরির আবেদন করে সব যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাঁর বয়স কম অজুহাত তুলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়োগের বাধার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু তাঁর মেধা ও যোগ্যতার কাছে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল। শোয়াইবের একটি কথা আজ বার বার আমার কানের ভেসে উঠে তিনি ঢাকায় আমার অফিসে তাঁর চাকরির জন্য দোয়া চাইতে গিয়ে বলেছিলেন,”ভাই আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব হতে পারি আর কিছু না হোক অন্তত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আপনার জন্য দোয়া তো করতে পারবো।”

শোয়াইব তাঁর কথা রেখেছিলেন,তিনি সবসময় আমার জন্য দোয়া করতো। আমি অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তির হবার খবর পেয়ে তিনি আমার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দোয়ার আয়োজন করেছিলেন। শুধু তাই নয় আমার বাবার মৃত্যুর পর শোয়াইব একনাগারে ৪০ দিন আমার বাবার জন্য দোয়ার আয়োজন করেছিলেন। এটা আমার বাবার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এ জন্য আমার পুরো পরিবার তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। আমি সবসময় মনে করতাম আমি বিপদে পড়লে শোয়াইব আমার জন্য দোয়া করবে এবং এটা সবসময় আমার মনে সাহস যোগাতো। আমার পরম শুভাকাঙ্ক্ষী শোয়াইবের মৃত্যুর পর আজ আমি সেই সুযোগটি থেকে বঞ্চিত হলাম। আমি তাঁর কাছে অনেক ঋণী হয়ে রইলাম।

আজ বার বার শোয়াইবের সহজ সরল নিস্পাপ মুখটি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তিনি এত সুন্দর করে কথা বলতেন অতি সহজেই যে কারো মন জয় করতে পারতেন। আমার মনে আছে ১৯৯৯ সালে ঢাকায় এমপি হোস্টেলে আমার বৌভাত অনুষ্ঠানে শোয়াইব আমার স্ত্রীর জন্য একটি সুন্দর উপহার দিয়েছিলেন। তিনি রিসিপশনে গিফটটি দিয়ে অনুষ্ঠান থেকে ফিরে যাবার সময় আমাকে কানে কানে বলেছিলেন ভাই ভাবীর জন্য আমি একটি ছোট্ট গিফট দিয়ে গেছি,ভাবী ব্যবহার করলে আমি খুব খুশি হব। বাসায় গিয়ে দেখি তাঁর গিফটি একটি স্বর্ণের সেট। পরে একদিন আমি তাকে বললাম তুমি এত টাকা খরচ করে গিফট নিয়ে এসেছো, এটা ঠিক করনি। তিনি বলেছিলেন ভাই আমি আমৃত্যু আপনার স্নেহের ছায়াতলে থাকতে চাই। আমাকে কোনদিন দুরে সরিয়ে দেবেন না। কিন্তু আজ তিনি নিজেই আমাদের ছেড়ে এত দুরে চলে গেছেন যেখান থেকে কেউ কোনদিন ফিরে আসে না।
তাঁর মধুমাখা হাসিটি আর হয়ত

আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় শোয়াইব খুব খুশি হয়েছিলেন। আমি সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে কখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব,ক্যাম্পাসে তাঁর সাথে আমার কখন দেখা হবে এ নিয়ে তিনি অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। শোয়াইবের খুব ইচ্ছে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। শিক্ষক হওয়ার সকল যোগ্যতাই শুধু নয় অনেক অতিরিক্ত যোগ্যতাও তাঁর ছিল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিযুক্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ই লাভবান হতো। তাঁর ডিপার্টমেন্ট সমৃদ্ধ হতো। আমিও মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম কিন্তু সে সুযোগ আর থাকলো না। তাঁর চাকরিতে স্কেল সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে তাকে অনেকদিন বঞ্চিত রাখা,হয়েছিল। বিষয়টি আমি জানার পর আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে তাঁর বিষয়টি সিন্ডিকেটে এজেন্ডাভুক্ত করার ব্যবস্থা করেছিলাম। সম্প্রতি সিন্ডিকেটের সভায় তা পাশ করা হয়। এতে তিনি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন।

শোয়াইব শুধু কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিবই ছিলেন না তিনি একজন ইসলামিক স্কলার ছিলেন। ইসলামের উপর তিনি অনেক কাজ করে গেছে। একসময় টিভিতে তিনি একটি ইসলামিক টকশো পরিচালনা করতেন। দেশের বরেণ্য ইসলামিক স্কলাররা তাঁর টকশোতে অংশ নিতো। আমাকেও শোয়াইব তাঁর টকশোতে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর বড় ভাই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা- আখাউড়ার সাবেক এমপি এডভোকেট শাহ আলম সাহেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমার জানামতে ডক্টর শোয়াইব ধর্মান্ধতায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি ইসলামের সঠিক পথের একজন স্কলার ছিলেন। তিনি প্রচুর লেখাপড়া ও জ্ঞানচর্চা করতেন। তাঁর এই অকাল মৃত্যু একটি উজ্জল নক্ষত্রের পতন। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অনেক গবেষণা কর্ম রয়েছে। এ গুলো সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

শোয়াইবের এই অকাল মৃত্যুতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি বেঁচে থাকলে ইসলামের জন্য,দেশের জন্য আরো অনেক কাজ করতে ও আরো অবদান রাখতে পারতেন। তাঁর মৃত্যুতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আজ গভীর শোকে মোহ্যমান। আমরা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের প্রতিটি সদস্য গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর বিদেহী আত্বার শান্তি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

লেখক: সিন্ডিকেট সদস্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাএসোসিয়েশন। 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel