শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
আদালতে চিকিৎসক, পুলিশ, পাবলিক সাক্ষীর গুরুত্ব ও বাস্তবতা!

আদালতে চিকিৎসক, পুলিশ, পাবলিক সাক্ষীর গুরুত্ব ও বাস্তবতা!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

একটি মামলার ক্ষেত্রে যেমন পুলিশ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি ডাক্তাররাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। একটি মামলায় ডাক্তারের সাক্ষী এবং সুরতহাল রিপোর্ট মামলার মোড়কেই ঘুরিয়ে দেয়। ডাক্তারের অবহেলায় যেমন একটি রোগীর জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়, তেমনি ডাক্তারের সাক্ষী ও সুরতহাল রিপোর্টও মামলার অন্যতম দিক নির্ণয় করে থাকে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৯ ধারা মতে ডাক্তাররা আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে থাকেন। খুনের মামলায় ডাক্তারের রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৃত্যুর কারণ নিরূপণের জন্যই ডাক্তারি পরীক্ষার প্রয়োজন। ডাক্তারি রিপোর্টের পরও তাকে আদালতে সাক্ষী হিসেবেও তলব করা হয়ে থাকে। তবে তিনটি কারনে ডাক্তারের সাক্ষ্য ব্যতীত ময়না তদন্তের রিপোর্টটি সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কারনগুলো হলোঃ
(ক) যে ডাক্তার ময়নাতদন্ত করেছেন তিনি যদি মৃত হন। (খ) তিনি যদি সাক্ষ্য দিতে অক্ষম হন। (গ) তিনি যদি বাংলাদেশের বাইরে থাকেন এবং তাকে বিলম্ব, অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়া হাজির করা যায় না যা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিসঙ্গত নয়। (৩৭ ডিএলআর ১৫৬; ৬ বিএলডি ৩৪; ৪বিসিআর ২০৪)।

ডাক্তারের সাক্ষীর সাক্ষ্যগত মূল্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বেশী কারণ হচ্ছে যাতে করে ডাক্তার কোনো ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে অশুদ্ধ ও অসঙ্গতিপূর্ণ কোন রিপোর্ট তৈরি না করেন। উদাহরণ হিসেবে ৩৬ ডিএলআর ১৫১ এডি’র সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

‘আবেদনকারী ১৯৭০ সালে মেডিকেল কলেজের একজন এমবিবিএস ডেমনেস্ট্রেটর ছিলেন। নূরজাহান নামে এক মহিলার তিনি ময়নাতদন্ত করেন। ১৯৭০ সালের ১০ নভেম্বর উপস্থাপিত তদন্ত রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন, এই মৃত্যু জলডুবিজনিত এবং আত্মহত্যাজনিত। পরবর্তী সময়ে সেই একই ব্যক্তির মৃতদেহ আরেক জনকে দিয়ে ময়নাতদন্ত করানো হয়। সেখানে ওই মহিলাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দুই রিপোর্টের আবেদনকারী অভিন্ন মৃতদেহটির অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করেন। আবেদনকারী ইচ্ছাকৃতভাবেই মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল মৃত মহিলার স্বামী ও শ্বশুরকে ৩০২ ধারায় মিথ্যা বানিয়ে মৃতার পিতাকে সাহায্য করা। বস্তুত এতদ্বারা তিনি সরকারি কর্মচারী হিসেবে উপরোক্ত জালিয়াতি, মিথ্যা রেকর্ড ও অপরাধমূলক আচরণের শাস্তিযোগ্য দুষ্কর্ম করেছেন বলে সিদ্ধান্তে জানানো হয়।
তবে সরকার কর্তৃক নিয়োজিত রাসায়নিক পরীক্ষক, সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক, রক্ত পরীক্ষক, হস্তলিপি বিশেষজ্ঞ, অঙ্গুলাঙ্ক বিশারদ অথবা আগ্নেয়াস্ত্র বিশারদদের এই কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো কার্যক্রম চলাকালীন কোনো বিষয়ে পরীক্ষা বা বিশ্লেষণ করিয়ে রিপোর্ট দিতে হলে তাকে তাকে আদালতে তলব না করেই কথিত দলিল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে। রাাসায়নিক পরীক্ষকের রিপোর্টও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাসায়নিক পরীক্ষকের সাক্ষ্যমূল্য সামান্য, যদি না তার পরীক্ষিত বস্তুর পরিচয় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

যখন কোনো ব্যক্তি কোনো প্রতিকার দাবী করে, তখন তার অধিকারের স্বপক্ষে কিছু প্রমাণ দিতে হয়। সেকারণ ১৮৭২ সালে সাক্ষ্য আইনের উদ্ভব হয়। এ আইনের ২৪ থেকে ৩০ ধারা পর্যন্ত স্বীকারোক্তি বা সাক্ষ্যমূল্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। স্বীকারোক্তি বলতে অভিযুক্ত অপরাধী কর্তৃক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের অপরাধ স্বীকার করানোকে বুঝানো হয়েছে। যদি একটু সহজ করে বলি তবে বলতে হয় অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি যদি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে অথবা অপরাধ স্বীকারের ইঙ্গিত বহনকারী কোনো বিবৃতি প্রদান করে, তবে তাকে স্বীকারোক্তি বলে। স্বীকারোক্তি ৪ ধরনের হতে পারে। যথা ১. ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারা মতে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি, ২. ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি বা জুডিশিয়াল স্বীকারোক্তি, ৩. তৃতীয় পক্ষের কাছে স্বীকারোক্তি এবং ৪. প্রত্যাহারকৃত স্বীকারোক্তি। কোনো মামলায় বিচার প্রক্রিয়ায় স্বীকারোক্তির সাক্ষ্যগত মূল্য বহুগুণ।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারা মতে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তির আইনগত ফলাফল
সাক্ষ্য আইনের ২৫ ধারায় পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে যে, ‘কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশ অফিসারের কাছে অপরাধ স্বীকার করে কোনো ব্যক্তি উক্তি করলে তা তার বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যাবে না।’ সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি ভীতি বা প্রলোভনমুক্ত স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে পুলিশের কাছে অপরাধ স্বীকার করে তথাপিও তা সাক্ষ্য আইনে গ্রহণীয় হবে না। অর্থাৎ সাক্ষ্য আইনের বিধান মতে, পুলিশ অফিসারের কাছে দোষ স্বীকার কখনই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ছাড়া উল্লিখিত আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশ অফিসারের হেফাজতে থাকাকালে কোনো ব্যক্তি দোষ স্বীকার করলে তা যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষ্য উপস্থিতিতে না হয় তবে তা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যাবে না।

উল্লেখ্য, ২৫ ধারায় মূল বিষয়বস্তু হল পুলিশের কাছে অপরাধ সম্পর্কে দোষ স্বীকার করলে তা আইনে অগ্রাহ্য নয়। পাশাপাশি ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশের হেফাজতে যতদিন কোনো ব্যক্তি থাকে ততদিন তার দোষ স্বীকার যার কাছেই হোক না কেন অগ্রাহ্য হয়, শুধু ম্যাজিস্ট্রেটের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে হলে তা গ্রাহ্য হয়।

কখন পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্য
আসামী যদি স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করে স্বেচ্ছায় কোনো জবানবন্দী প্রদান করে তাহলে ওইরুপ জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণীয় হতে পারে অত্র আইনের ২৭ ধারা মতে। তবে ২৫ ধারায় ব্যতিক্রম লক্ষণীয়। এখানে বলা হয়েছে, আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর ফলে যদি পুলিশ কোনো আলামত কিংবা কোনো বস্তু উদ্ধার করতে সক্ষম হয় তাহলে ওইরুপ দোষ স্বীকারে মিথ্যার অবকাশ থাকে না বিধায় ওইরুপ স্বীকারোক্তি আদালতে গ্রহণীয় হতে পারে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি
ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারার বিধান অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আসামি দোষ স্বীকার করলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে। বিচারকের কাছে দোষ স্বীকার করলে তার ভিত্তিতে বিচারক আসামিকে দোষ দিতে পারেন। অর্থাৎ সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকেই বলা যায়, বিচারকের কাছে দোষ স্বীকার করলে স্বীকারোক্তি আইনত গ্রহণযোগ্য হবে।
সাক্ষ্য আইনের ২৬ ধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যখন কোনো আসামিকে স্বীকারোক্তির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তখন ম্যাজিস্ট্রেটের নানাবিধ প্রশ্নের মাধ্যমে বুঝে নিতে হবে আসামি কোনো অবস্থার চাপে পড়ে দোষ স্বীকার করতে আসছে কি না? যে ফরমে স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করা হয়, তাতে যে প্রশ্নগুলো বিদ্যমান সেগুলো অবশ্যই আসামিকে জিজ্ঞাসা করতে হয়। এ ছাড়া সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারায় বলা আছে যে, পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকার যদি অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো আলামতের অর্থাৎ অপরাধ সংক্রান্ত কোনো বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায় এবং সে অনুযায়ী যদি আলামত উদ্ধার হয়, তবে উদ্ধারকৃত বিষয়ের সঙ্গে আসামির দেওয়া বিবৃতি যতখানি প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট তা স্বীকারোক্তি হোক বা না হোক, সাক্ষ্যরূপে ব্যবহার করা যাবে।

তৃতীয় পক্ষের কাছে স্বীকারোক্তি
বিচারক নয়, এমন কোনো তৃতীয় ব্যক্তির নিকট দোষ স্বীকারকে তৃতীয় পক্ষের কাছে দোষ স্বীকার বলা হয়। স্বাক্ষী হিসেবে তৃতীয় পক্ষের স্বাক্ষ্যগত মূল্য একেবারেই কম। যেমন- হাকিম নন কিন্তু ওসি সাহেবের নিকট দোষ স্বীকার করলেও আদালতে খুব বেশী গুরুত্ব নেই যদি কিনা তার প্রমান না দেয়া যায়।

প্রত্যাহারকৃত স্বীকারোক্তি
পুলিশী নির্যাতনে অনেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও দোষী বলে নিজেকে স্বীকার করে পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করে নেয়, এরুপ স্বীকারোক্তিকে প্রত্যাহারকৃত স্বীকারোক্তি বলে। প্রমাণাদি ব্যতীত এরুপ স্বীকারোক্তির ক্ষেত্রে শাস্তি দেয়া যায় না।

কতিপয় উদাহরণ
আসামী রহিম মিয়া পুলিশ অফিসারের কাছে সাক্ষ্য আইনের ২৫ ধারার বিবৃতিতে বলেছেন, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ব্যবহৃত ‘বন্দুক’টি সে মন্টু মিয়াকে প্রদান করেছে। অতঃপর তথ্য মতে পুলিশ অফিসার মন্টু মিয়াকেও তার তদন্তের অন্তর্ভুক্ত করলেন। মন্টু মিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী বাড়ির পেছনে বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে বন্দুকটি পাওয়া গেল। এখন এ জাতীয় পরিপ্রেক্ষিতে মন্টু মিয়ার বক্তব্য মতে অস্ত্র প্রাপ্তির বিষয়টি আসামি রহিম মিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে কি?

উপরোক্ত মাধ্যমে দেখা যায় যে, পুলিশের কাছে আসামি অর্থাৎ রহিম মিয়ার প্রদত্ত বিবৃতি অপরাধের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্রটি (বন্দুক) উদ্ধারের প্রত্যক্ষ কারণ নয়। অস্ত্রটি মন্টু মিয়ার কর্তৃক বিনষ্ট হতে পারত এবং হয়তো তা কোনো দিন না পাওয়াও যেত। এ ক্ষেত্রে মন্টু মিয়ার ইঙ্গিতে অস্ত্র প্রাপ্তির বিষয়টিকে রহিম মিয়ার বিকল্প ব্যবহারের জন্য গ্রাহ্য সম্ভব নয়। অন্যদিকে মন্টু মিয়ার কাছে আসামি রহিম মিয়ার বন্দুক প্রদানের উক্তিটিও ফলপ্রদ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না, তাই স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় বন্দুক পাওয়ার বিষয়টি সাক্ষ্য আইনের বিধান মতে অগ্রাহ্য হবে।

রহিম মিস্ত্রি (আসামি), সে নিজে পুলিশ অফিসারকে বলল, আমি স্বয়ং লোহার রড দিয়ে রশিদ মোল্লার স্ত্রী খোদেজা বানুকে আঘাত করেছি এবং ওই লোহার রড আমি রান্নাঘরে রেখেছি। পুলিশ রহিম মিস্ত্রির দেওয়া তথ্য মতে তার রান্নাঘর থেকে সেই রড বের করে আনে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সাক্ষ্য আইনের বিধান মতে বিচারিক আদালত কি তার এ তথ্যকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবে?

উপরোক্ত উদাহরণের মাধ্যমে দেখা যায় যে, বিবৃতিটি ২টি অংশে বিভক্ত। প্রথমাংশে উল্লেখ রয়েছে ১. আমি স্বয়ং লোহায় রড দিয়ে রশিদ মোল্লার স্ত্রী খোদেজা বানুকে আঘাত করেছি, তবে দ্বিতীয় অংশে উল্লেখ রয়েছে ২. ওই লোহার রড আমি রান্নাঘরে রেখেছি। পুলিশ আসামির কথামতো রান্নাঘর থেকে লোহার রড উদ্ধার করল। এখানে আদালত দ্বিতীয় অংশটি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারে, তবে কোনোভাবেই প্রথম অংশ নয়। কেননা সাক্ষ্য আইনের বিধান মতে, আসামি যতটুকু উক্তি তথ্য উদঘাটনের সঙ্গে জড়িত শুধু এতটুকুই ২৭ ধারায় প্রমাণ করাও যায়।

শামসুদ্দিন ওরফে শামুকে হত্যা করার অপরাধে বিল্লাল মিয়া ও তাহের উদ্দিনের যৌথভাবে বিচার হচ্ছে। বিচারিক আদালতে প্রমাণ করা হয়েছে যে, বিল্লাল মিয়া বলেছে যে তাহের উদ্দিন ও আমি অর্থাৎ স্বয়ং বিল্লাল মিয়া শামসুদ্দিন ওরফে শামুকে হত্যা করেছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আদালত তাহের উদ্দিনের বিরুদ্ধে এ দোষ স্বীকার বিবেচনা করতে পারবেন কি না?

উপরোক্ত উদাহরণ বিশ্লেষণের আগে বুঝতে হবে আসামির অপরাধ স্বীকারোক্তি সহযোগী আসামির বিরুদ্ধে প্রযোজ্য কি না
সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারার বিধান মতে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সহযোগী আসামির দোষ স্বীকার বিবেচনাযোগ্য। সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারার বিধান মতে, একজন আসামির অপরাধ স্বীকারোক্তি তার সহযোগী আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যেতে পারে। সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারায় বলা আছে যে, ‘যেখানে একই অপরাধে একাধিক ব্যক্তির যৌথভাবে বিচার হইতেছে এবং তাহাদের মধ্যে একজনের দোষ স্বীকার, যা দ্বারা সে নিজেকে ও অন্যকে জড়িত করিয়াছে, তাহা প্রমাণ করা হইয়াছে সেখানে আদালত উক্ত দোষ স্বীকারকারী ও অপরাধী ব্যক্তির সিদ্ধান্ত সেই দোষ করিতে পারেন।’

সুমনকে হত্যার দায়ে রনির বিচার হচ্ছে। সাক্ষ্য পাওয়া গেছে যে, রনি ও মনি কর্তৃক সুমন হত্যা হয়েছে এবং মনি বলেছে রনি ও আমি সুমনকে হত্যা করেছি। এ ক্ষেত্রে আদালত মনির ওই উক্তি রনির বিরুদ্ধে বিবেচনা করবে কি না? এখানে বলে রাখা দরকার যে, সমস্যায় উল্লিখিত সব নাম ছদ্মনাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

আমাদের দেশের গ্রামীণ জনপদে বিভিন্ন কারণে অনেকেই আত্মহত্যা করে থাকে। পাশাপাশি হত্যা করে আবার অনেক ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। সমাজের প্রভাবশালী মহলের কারণে এই ঘটনা থানা আদালত পর্যন্ত গড়ায় না। ভিকটিমের আত্মীয়স্বজনরা ভয়ে মুখ ফুটে কথা পর্যন্ত বলে না। মাঝে মধ্যে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী রিপোর্ট আর মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তৎপরতায় অনেক কিছু আলোর মুখ দেখতে পায়। তখন প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও বোধোদয় হয়। শুধু গ্রাম নয়, শহরেও ইদানীং হত্যা করে সেটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রাসায়নিক পরীক্ষা আর ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা হয়ে থাকে। ডাক্তাররা তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে কোনটা খুন আর কোনটা আত্মহত্যা তা বের করে থাকেন।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel