বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
জমির খতিয়ান জালিয়াতি প্রতিরোধে কি করবেন?

জমির খতিয়ান জালিয়াতি প্রতিরোধে কি করবেন?

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
জমির খতিয়ান নিয়ে জালিয়াতি হয়েছে, ভাবছেন কি করবেন, কিভাবে জমির খতিয়ান তুলবেন এবং জাল খতিয়ান থেকে কিভাবে বাঁচবেন-নো টেনশন। নিচের আলোচনাটি পড়ুন।

ধরুন, আপনি বিদেশে থাকেন। দেশে আপনার পৈতৃক ভিটা রয়েছে। আপনার বাবাও মারা গেছেন। জায়গাটা খালিই পড়ে আছে। চারদিকে ইটের দেয়াল দেওয়া। আপনি তিন-চার বছরে একবার হয়ত দেশে আসেন। আপনার পুরো পরিবার বিদেশে থাকে। গ্রামের ভিটা-বাড়ি আপনার দূর-সম্পর্কীয় আত্মীয়রা দেখাশোনা করে। একদিন খবর পেলেন, আপনার সেই আত্মীয়, যাকে গ্রামের ভিটা-বাড়ি দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই রক্ষক নিজেই ভক্ষক সেজে জমির ভুয়া খতিয়ান দেখিয়ে গ্রামের মোড়ল মাতব্বরদের কাছে ওই জমির মালিকানা দাবি করেছে। আপনি খবর শুনে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন বিদেশ থেকে। এসে দেখলেন সি.এস, আর.এস জরিপের খতিয়ান জাল করে আপনার কাছে আত্মীয় এ জমি দাবি করছেন। এখন আপনার কাছে কিন্তু মূল খতিয়ান নেই। আপনার বাবার মৃত্যু হয়েছে অনেক বছর। এর মধ্যে খতিয়ানগুলো হারিয়ে ফেলেছেন। এখন আপনি কী করবেন, কোথায় যাবেন, কিভাবে প্রতিকার পাবেন।

আমাদের দেশে কিন্তু একশ্রেণীর ভূমিদস্যু মূল খতিয়ান জাল করে মালিকানা দাবি করে মূল মালিকদের হেনস্তা করে থাকে। আর খতিয়ান জাল করতে সাহায্যও করেন একশ্রেণীর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা। আবার ভূমি অফিসগুলোর দুরাবস্থার কারণে অনেক সময় মূল খতিয়ান হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায়, যার সুযোগ কাজে লাগায় দুষ্কৃতিকারীরা।
কেউ জাল খতিয়ান তৈরি করে মালিকানা দাবি করলে আপনি দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। তবে জমি যদি বেদখল হয়ে যায়, তাহলে দেওয়ানি আদালতের পাশাপাশি ফৌজদারি আদালতেরও আশ্রয় নিতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে অপরাধীর শাস্তি হয় কিন্তু আপনার মালিকানা নিশ্চিত হয় না। সেকারণ দেওয়ানি আদালতে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করে জাল খতিয়ানের প্রতিকার চাইতে হয়। তবে মনে রাখবেন সাধারণত খতিয়ান তৈরির সময় ৩০ ও ৩১ বিধিতে আপত্তি ও কপি নম্বরে কোনো ভুল হলে আবেদন করে সংশোধন করার সুযোগ আছে। তবে জরিপ প্রকাশের পর দেওয়ানি মামলা করার সুযোগ আছে। আর একমাত্র ঢাকা মহানগরে বিএস জরিপের ক্ষেত্রে ঢাকাতে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে। এর বিরুদ্ধে আপিল করা যায় ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালে। যদিও আইন অনুযায়ী সারা দেশেই ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান আছে। আর জরিপ খতিয়ান জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমে সংরক্ষিত থাকে। সেখান থেকে তুলতে পারেন। তবে নামজারি বা মিউটেশন খতিয়ানের ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে আবেদন করতে হবে। নকল তোলার দরখাস্তে নির্ধারিত কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। সাধারণত জরুরি ভিত্তিতে সাত দিনের মধ্যে নকল সরবরাহের কথা থাকলেও দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের গাফিলতিতে তিন মাসও লেগে যায়। আবার অতিরিক্ত ফিসও গুনতে হয়।

এবার আসি জাল খতিয়ান হতে বাঁচার উপায়। আমি আগেই বলেছি, জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম, জেলা জজের রেকর্ড রুম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অফিস ও তহসিল অফিসে খতিয়ান থাকে। তাই কেউ জরিপ খতিয়ান জাল করতে চাইলে এই সব অফিসে সংরক্ষিত খতিয়ান আগে নষ্ট করতে হয়। এ ক্ষেত্রে এককভাবে কাউকে দায়ী করা সম্ভব হয় না। কোন কোন সময় খতিয়ান বইয়ের বাঁধাই খুলে কোন নির্দিষ্ট খতিয়ান ছাপিয়ে পাল্টিয়ে আবার আগের মতো বাঁধাই করে রাখা হয়। আবার মূল খতিয়ান বই ধ্বংস করে সম্পূর্ণ বই নতুন করে ছাপিয়ে জালিয়াতি করা হয়। এতে কোন জালিয়াতির চিহ্ন থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে সব অফিস থেকে খতিয়ান নষ্ট করতে পারে না। কোনো কোনো অফিসে আসল খতিয়ান থেকেই যায়। তবে কোনটা আসল কোনটা জাল তা নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আসল খতিয়ানের নকল নেয়া থাকলে জাল খতিয়ান তৈরি করলেও কোর্টে আসল খতিয়ানের নকল কপি দাখিল করে সহজেই মামলায় জেতা যায়। তাই জালিয়াত থেকে বাঁচার জন্য মূল খতিয়ান থাকা সত্ত্বেও একটি নকল কপি তুলে রাখা নিরাপদ। এরপরও কোন সমস্যা দেখা দিলে মামলা করে নকল খতিয়ান বাতিল করা যায়।

এবার আসি খাজনা রশিদ বিষয়ে। জরিপ খতিয়ানের মতো জমির খাজনার রশিদ (দাখিলা) একইভাবে জাল করা হয়। বেশ কয়েক বছরের ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা একসাথে দিয়ে দেখানো হয় অনেকদিন থেকে ভোগ দখল করে আসছে। দাখিলার জাল করা দুরূহ কারণ রেজিস্টার শুধুমাত্র তহসিল অফিসে থাকলেও আরো কয়েকটি রেজিস্টার জড়িত। তাই রেজিস্টার পাল্টাতে জালিয়াতদের উৎসাহী হতে দেখা যায় না। তবে কোন কোন সময় সম্পূর্ণ রেজিস্টারটি উধাও করে দেয়া হয়। ব্যাংক চেকের মত দাখিলার একটি মুড়ি বই থাকে। তাই দাখিলার ক্ষেত্রে মুড়ি বই এবং তলব বাকি রেজিস্টার পরীক্ষা করলে জালিয়াতি কি-না তা সহজেই ধরা যায়।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel