শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৮ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
জমির মূল দলিল কিভাবে ফেরত পাবেন?

জমির মূল দলিল কিভাবে ফেরত পাবেন?

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

আপনি জমি কিনেছেন, নিয়ম মেনে জমি রেজিস্ট্রি করেছেন, যে দলিলে দাতা, গ্রহীতা, সাক্ষী, সনাক্তকারী, দলিল লেখক, সাব-রেজিস্টার স্বাক্ষর করেছেন সেই মূল দলিলটি প্রাপ্তি আপনার অধিকার। কিন্তু আপনি কিভাবে দলিলটি হাতে পাবেন, মূল দলিলটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ফেরত গ্রহনের পদ্ধতি কি এবং দীর্ঘ বিলম্ব হলে কত টাকা জরিমানা দিয়ে মূল দলিলটি তোলা যায় সেসকল বিষয়ে আইনী আলোচনা নিয়ে আজকের নিবন্ধ।

মনে রাখবেন জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য দলিল গৃহীত হলে দলিলের দাখিলকারীকে একটি রশিদ দেয়া হয়। রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৫২ ধারার অধীন এ রশিদ দেয়া হয় বলে সাধারণের ভাষায় একে “৫২ ধারার রশিদ” বলা হয়। এই রশিদে মুল দলিল ফেরৎ গ্রহনের একটি সম্ভাব্য তারিখ দেয়া থাকে। দলিলে প্রয়োজনীয় পৃষ্টাঙ্কন, বালাম বহিতে দলিলের নকলকরন ও সূচি বহিতে সূচীকরন শেষ হলে ফেরৎ প্রদানের জন্য প্রস্তুতকৃত দলিল সমুহের একটি তালিকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নোটিশ বোর্ডে দেয়া হয়। এরপর ৫২ ধারার রশিদ জমা দিয়ে দলিল দাখিলকারী মূল দলিল উত্তোলন করতে পারেন অথবা দলিল গ্রহনের জন্য রশিদে অন্য কোন ব্যক্তিকে মনোনিত করে মূল দলিল গ্রহন করতে পারেন। এসময় কোনোরুপ টাকা পয়সা দিতে হয় না। তবে আপনি মূল দলিল রেজিস্ট্রির সময় ‘এন- ফি’এবং নকলনবিশগনের পারিশ্রমিক ‘এনএন- ফি’ কম প্রদান করে থাকলে মূল দলিল গ্রহণের সময় উক্ত ফি পরিশোধ করতে হবে।

তবে মনে রাখবেন দলিল ফেরত গ্রহনের তালিকা টাঙানোর তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে মূল দলিল ফেরত না নিলে পরবর্তী প্রতি মাস বা তার অংশ বিশেষের জন্য ৫ টাকা হারে জরিমানা আদায়ের বিধান রয়েছে। তবে বিলম্ব যত মাসই হোক না কেন, জরিমানা ১০০ টাকা এর বেশী আদায়ের বিধান নাই। ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন এর ৮৫ ধারার বিধান মতে রেজিস্ট্রেশন শেষ হওয়ার পর কোন দলিল দাবীবিহীন অবস্থায় ২ (দুই) বছরের বেশি রেজিস্ট্রি অফিসে পরে থাকলে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা যায়। ব্যতিক্রম শুধু উইল দলিল ব্যতিত। সুতরাং সময়মত মূল দলিল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আর মূল দলিল উত্তোলনের ক্ষেত্রে ৫২ ধারার রশিদ কোনভাবে হারিয়ে গেলে কিংবা বিনষ্ট হলে দলিলগ্রহীতা রসিদ হারানোর বিষয় অবগতি করে দলিল ফেরত প্রদানের অনুরোধ সংবলিত আবেদন জানাবেন। আবেদন প্রাপ্তির পর নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা দাখিলকারীকে সনাক্তক্রমে রসিদ হারানোর বিষয়টি সত্যতা যাচাই করবেন। এরপর হারানো রসিদটির পরিবর্তে নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা এক খন্ড সাদা কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় “প্রত্যয়ন করা যাইতেছে যে, মূল রসিদ হারানোর বিষয়টি আমার নিকট প্রমাণিত হইয়াছে বিধায় দাখিলকারীকে যথাযথরূপে সনাক্তক্রমে অপর পৃষ্ঠায় প্রাপকের স্বাক্ষর অনুযায়ী দলিলটি ফেরত দেওয়া হইল” প্রত্যায়ন লিপিবদ্ধ করে মুড়িপত্রে লাগিয়ে রাখার ব্যবস্থা করবেন। আর দলিল দাখিলকারী কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তির কাছ থেকে রশিদ হারিয়ে যায়-সেক্ষেত্রে আবেদনের সহিত স্থানীয় থানায় রসিদ হারানোর বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি ভুক্তির ফটোকপি, আবেদনকারীর সাম্প্রতিক তোলা ১(এক) কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, গ্রহীতা সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, তফসিলভুক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলে সেক্ষেত্রে উল্লিখিত কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে না।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। ইমেইল-seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮

 

 

 

 

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel