বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
কুষ্টিয়া আইনাঙ্গনের কিংবদন্তী ‘সিরাজ প্রামাণিক’ এর আজ জন্মদিন খোকসা কুমারখালীর নৌকার মাঝি হলেন ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া ৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিলেন ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। ভেড়ামারায় জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত খোকসায় আওয়ামী যুবলীগের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত টিএসসিসি পরিচালকের সাথে ইবির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মতবিনিময় তালাকের নোটিশ গ্রহণ না করলে তালাক হবে কী? ইবির আল-হাদিস বিভাগে পিএইচডি সেমিনার অনুষ্ঠিত দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ইবি শুভসংঘের খাবার ও পানীয় বিতরণ ইবি ও যবিপ্রবিসহ পাঁচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০৩ শিক্ষার্থী পেল সিজেডএম শিক্ষাবৃত্তি
একুশে আগষ্ট নিহত শেখ হাসিনার দেহরক্ষী মাহাবুবের পরিবার এখন আর ভাল নেই!

একুশে আগষ্ট নিহত শেখ হাসিনার দেহরক্ষী মাহাবুবের পরিবার এখন আর ভাল নেই!

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ ২০০৩ সালের ২১ আগষ্ট আওয়ামীলীগের সমাবেশে গুলি ও গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত হন তাদের একজর ছিলেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের হারুন-অর-রশিদ মোল্লা ও হাসিনা বানুর গর্ভের সন্তান মাহাবুব। এখন আর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীও পালন হয় না। মাহাবুবের বৃদ্ধ পিতা-মাতা, দুই শিশু পুত্র, স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা আজও প্রিয়জন হত্যার বিচার পায়নি।

নিহত মাহাবুবের কথা ঃ- আওয়ামীলীগ সভানেত্রীর দেহরক্ষী হিসেবে মাহাবুব যোগদান করেন ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে। এর আগে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক নির্ভীক সেনা, একজন ল্যান্স কর্পোরাল। ১০ ভাই বোনের মধ্যে তার অবস্থান দ্বিতীয়, নিজ গ্রামেই কেটেছে তার দুরন্ত কৈশর। এস.এস.সি পাশের পর দরিদ্র পরিবারের দ্বিতীয় ছেলে মাহাবুবের পড়াশুনা আর এগোয়নি। জীবন ও জীবিকার তাগিদে ১৯৮৭ সালে মাহাবুব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিয়ে গাড়ী চালাতে শুরু করেন। বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে তাকে পাঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে। ২০০২ সালে ল্যান্স কর্পোরাল পদে থাকা অবস্থায় মাহাবুব চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন এবং ঐ বছরই বিরোধী দলীয় নেত্রীর গাড়ীচালক ও ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসেবে যোগ দেন। এই চাকরিতে মাহাবুবের পূর্ব পরিচিত সাবেক এক সৈনিক শেখ হাসিনার বর্তমান বিশেষ গাড়ি চালক তাকে সহায়তা করেছেন বলে মাহাবুবের পিতা জানান। শেখ হাসিনার ৪০ জন দেহরক্ষীর মধ্যে মাহাবুবের ব্যবহার-আচার ভদ্রতার কারণেই আলাদা করে চেনা যেত।

মাহাবুবের পরিবারের কথা ঃ- সরেজমিনে মাহাবুবের বাড়ীতে গেলে তার বৃদ্ধ পিতা হারুন অর রশিদ বেড়িয়ে এসে শূণ্য চোখে একবার তাকালেন এই প্রতিবেদকের দিকে। অনেক্ষন পর নিজেকে যেন কেছুটা সামলে নিয়ে বললেন, ‘আমার ছেলে মারা গেছে ঠিকই, কিন্তু সে তার চাকরির কাজ ঠিকমতো করে গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। বৃদ্ধা মা হাসিনা বেগম বলেন, আমার মতো যেন আর কোন মায়ের কোল খালি না হয়। মাহাবুবের স্ত্রী শামীমা আক্তার আসমা বর্তমান দু সন্তানকে নিয়ে ঢাকাতে থাকেন। ছেলে হারানোর শোক আর ধারদেনা করে কোন রকম টিকে আছে মাহাবুবের পরিবার।

২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট মাহবুবের ছুটি ছিল। তারপরও জনসভায় যোগ দিতে ঢাকার বাসা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে হাজির হন সেখানে। বিকাল ৫টা বাজার কিছু সময় পর শেখ হাসিনার বক্তব্য শুরু হয়। ঠিক এমন সময় জনসভার উপরে পড়তে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। গ্রেনেড হামলায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা তার বুলেট প্রুফ গাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সাহসী মাহবুব তাকে গাড়িতে প্রবেশ করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু শেখ হাসিনা মাহবুবকে চিৎকার করে বলে, না আমি যাব না, ওরা মারে আমাকে মারুক। নেত্রীর সে কথায় কান না দিয়ে মাহবুব বুক দিয়ে আগলে গাড়ির মধ্যে তাকে ঠেলে দেন। আর ঠিক এ সময় ঘাতকের একটি বুলেট তার মাথার পেছন দিয়ে প্রবেশ করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আরো কয়েকটি গুলি তার বুককে বিদ্ধ করে। সেখানেই পড়ে থাকেন জননেত্রীর দেহরক্ষী মাহবুব। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সব চেষ্টা বিফল হয়। ২১ আগস্ট রাতেই মাহবুব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গ্রেনেড হামলায় নিহত মাহবুবের লাশ পরদিন ২২ আগস্ট খুব সকালে খোকসা উপজেলার ফুলবাড়িয়া হাইস্কুলের মাঠে হেলিকপ্টারে এসেছিল। তখন বৃদ্ধ পিতা হারুনুর রশিদ মোল্লা মাঠে কাজ করছিলেন। হেলিকপ্টারের বিকট শব্দে চারদিক থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে ফুলবাড়িয়া হাই স্কুল মাঠে মাহবুবকে দেখতে। পরিবারের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি সকল কিছুই চলতো তার তদারকিতে। মাহবুবের অবর্তমানে তার পরিবারটি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। বৃদ্ধ পিতার ৪১ শতক জমি চাষ করে সংসার চলে না।

মাহাবুবের স্মরণে ভাস্কর্য তৈরীর ঘোষণা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার সময় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন কুষ্টিয়ার সন্তান কর্নেল জামিল। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন কুষ্টিয়ার আরেক সন্তান মাহাবুব। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম পাদপীঠ হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়া এই দুই কৃতি সন্তান যেনো মানুষের স্মৃতিতে চির অম্লান হয়ে থাকে এই প্রত্যাশা কুষ্টিয়ার সবার।

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel