শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:০০ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডিসিকে ‘স্যার’ বলতে বাধ্য করায় এক তুঘলকি কান্ড বনাম বাস্তবতা!

ডিসিকে ‘স্যার’ বলতে বাধ্য করায় এক তুঘলকি কান্ড বনাম বাস্তবতা!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

পবিত্র রমজানের শুরুতেই এরকম একটি বিষয় নিয়ে আমাকে লিখতে বসতে হবে ভাবিনি। একটি সংবাদে আমার চোখ আটকে গেল। রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনকে ‘স্যার’ ডাকতে বাধ্য করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুককে। এর প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বুধবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কন্যাসহ অবস্থান কর্মসূচিতে বসেছেন ওই শিক্ষক।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদ মোতাবেক ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ অন্যদিকে সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার সহিত সংযুক্ত কর্মচারিরা হলেন ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি’ (Public Servant) । সুতরাং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি প্রজাতন্ত্রের জনগণের সেবক এবং তারা কখনো প্রজাতন্ত্রের জনগণ তথা ‘মালিকের’ প্রশাসক হওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।

আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র ব্রিটিশ হতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। ব্রিটিশরা এই দেশে জনগণের সেবা করার জন্য আসে নাই, বরং এই দেশের জনগণকে শাসন বা শোষণ করার জন্যই এসেছিল এবং বাস্তবে তারা এই দেশের জনগণকে বিভিন্নভাবে অপশাসন এবং শোষণ করিয়াছিল এবং এই অর্থেই তাহারা এই দেশের আমলাতন্ত্র গঠন করেছিল।

আর আমরা আজ পর্যন্ত এই ব্রিটিশ কর্তৃক সৃষ্ট এই দেশীয় আমলাতন্ত্রকে জনসেবামূলক করতে পারি নাই। আর এই কারণেই আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের একজন নবীন সদস্য চাকুরি জীবনে প্রথম প্রবেশ করেই মনে করেন ‌‌I am the lord and all are my subjects.’

এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে যে, কিছুদিন পূর্বে এই রংপুরের একজন ডেপুটি কমিশনারের দুর্নীতির খবর পত্রিকায় প্রচার করায় উক্ত ডেপুটি কমিশনার ও তার অন্যান্য অধীনস্থ সরকারি কর্মকর্তারা উক্ত সাংবাদিককে শারীরিকভাবে হেনস্থা করতঃ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাকে সাজা প্রদান করে জেলে প্রেরণ।

২১৫ বছর আগে কেরালা’র রাজ্যে নারীদের স্তন ঢেকে রাখতে চাইলে দিতে হত স্তনকর।! আবার এই করের পরিমাণ নির্ভর করত স্তনের আকারের উপর! যার স্তন যতবড় তার কর ততো বেশী! ৩৫ বছর বয়সী কৃষ্ণ বর্ণের অতীব সুন্দরী এক নারীকে প্রায়ই কাজের জন্য বাইরে যেতে হতো! তবে সে সবসময় তার স্তন ঢেকে রাখতো! হঠাৎ একদিন সে শুল্ক সংগ্রাহকের নজরে পড়লো, শুল্ক সংগ্রাহকরা তার কাছে স্তনশুল্ক দাবী করলো! অস্বীকৃতী জানিয়ে মেয়েটি বললো, স্তন আমার, তাকে আবৃত রাখব, নাকি অনাবৃত রাখব তা ঠিক করার তুমি কে! আমি শুল্ক দেবো না!…প্রতিদিন শুল্ক সংগ্রাহকরা তার বাড়িতে এসে তাকে শুল্ক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে লাগলো! দিনে দিনে করের বোঝাও বাড়তে থাকে! অবশেষে একদিন কর দিতে রাজী হলো মেয়েটি! শুল্ক সংগ্রাহকদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে দরজা বন্ধ করে ঘরের ভিতরে চলে মেয়েটি। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলে তার স্তন দুটি! তারপর নিজের স্তনদ্বয়কে কলাপাতার আবরণে মুড়িয়ে শুল্ক সংগ্রাহকের হাতে শুল্কস্বরূপ তুলে দেয় তার রক্ত মাখা স্তন! তারপর বলে, যে জিনিসের জন্য আমাকে অতিরিক্ত শুল্ক গুনতে হয়, সেই জিনিসই আমি রাখবো না… বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যায় শুল্ক সংগ্রাহকসহ পাড়া প্রতিবেশী সবাই! অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটির মৃত্যু হয়! পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ে এই ঘটনা! রাজা স্তনশুল্কসহ সকল প্রকার অবৈধ শুল্ক বাতিল করতে বাধ্য হন!

কাহিনী এখনো বাকী! মেয়েটির শরীর তখনও চিতায় দাউদাউ করে জ্বলছে! হঠাৎ একটা লোক দৌড়ে এসে সেই চিতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে! লোকটা মেয়েটির স্বামী! ভারতের ইতিহাসে, স্ত্রীর সঙ্গে সহমরণে যাওয়া কোনো পুরুষের প্রথম এবং শেষ ঘটনা ! ইতিহাস এই প্রেমিক পুরুষের নাম খোদাই করার তাগিদ অনুভব করেনি! কিন্তু যে আগুন মেয়েটি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো ভারতীয় নারীদের মনে, তা আজও জ্বলজ্বল করে! তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছে!

আজ আপনাকে স্তন কেটে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে হবে না, অন্তত এটা স্বীকার করুন যে, আপনার সাথে একটা অন্যায় হচ্ছে! বর্তমান সুবিধালোভী শাষকেরা তাদের সুবিধা ভোগ করার জন্য একটা বড় অন্যয় আপনার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে! আপনি আপনার অবস্থান থেকে সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন!

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel