শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
বিদেশী পর্যটকের কাছে ভিক্ষা চাওয়ায় ভিক্ষুক গ্রেফতার বনাম ভিক্ষুক মুক্ত দেশ!

বিদেশী পর্যটকের কাছে ভিক্ষা চাওয়ায় ভিক্ষুক গ্রেফতার বনাম ভিক্ষুক মুক্ত দেশ!

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ঢাকায় বেড়াতে আসলে একজন বৃদ্ধ তার কাছে ভিক্ষা চায়। এতে বিরক্ত হন ওই বিদেশী। ৩ এপ্রিল সোমবার টুরিস্ট পুলিশ ওই বৃদ্ধকে গ্রেফতার করেন। পুলিশের দাবী তিনি ভিক্ষুক নন, তবে স্বভাব ভিক্ষুকের মতো। গ্রেফতারে খুবই খুশি হয়ে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক টুরিস্ট পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ নিয়ে আবেগ-উত্তাপ ও যৌক্তিক তর্ক-বিতর্ক সরগম হয়ে উঠেছে চায়ের দোকান থেকে খোদ সুধী মহলে। বিভিন্ন মিডিয়ায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা এখনও চলছে, আরও কিছুদিন হয়ত চলবে। চলাটাই স্বাভাবিক!

কবি রফিক আজাদের সেই বিখ্যাত কবিতার পংক্তি দিয়েই লেখাটি শুরু করতে চাই। ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো। দ্রব্যমূল্যের চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা। ঘরে ঘরে চলছে নিরন্ন মানুষের হাহাকার। মধ্যবিত্ত মানুষদের মধ্যে চলছে লজ্জা, ভয় আর চাপা হাহাকার।

খলিফা হারুন-অর রশিদের আমল। একজন বৃদ্ধা মহিলাকে আসামী হিসেবে নতুন বিচারকের দরবারে হাজির করলেন। তার অপরাধ ছিল তিনি শহরের এক রেস্তারাঁ থেকে কিছু রুটি আর মধু চুরি করেছে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে আসামী জানালেন এক সপ্তাহ যাবত এতিম দু’নাতি সহ তিনি অনাহারে ছিলেন। নাতিদের ক্ষুধারত চেহারা ও কান্না সহ্য করতে না পেরে এ চুরির ঘটনা ঘটেছে। বিচারক এবার পুরো দরবারে চোখ বুলালেন। বললেন কাল যেন নগর, খাদ্য, শরিয়া, পুলিশ প্রধান ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এ রায় দেয়া হবে। পরদিন সকালে সবাই হাজির হলেন। বিচারক ও যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে রায় ঘোষণা করলেন-“বৃদ্ধা মহিলার চুরির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৫০টি চাবুক, ৫০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা আর অনাদায়ে এক বছর কারাদ- প্রদান করা হলো। তবে অকপটে সত্য বলার কারণে হাত কাটা মাফ করা হলো।

এবার বিচারক প্রহরীকে চাবুক আনার নির্দেশ দিয়ে নিচে নেমে ঐ বৃদ্ধা মহিলার পাশে এসে দাঁড়ালেন । বিচারক বললেন যে নগরে একজন ক্ষুধার্ত বৃদ্ধ মহিলা না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় চুরি করতে বাধ্য হয় সেখানে তো সবচেয়ে বড় অপরাধী সে দেশের খলিফা। আর আমি এসেছি খলিফার প্রতিনিধি হয়ে। আমি যেহেতু তাঁর অধীনে চাকরি করি তাই ৫০টি চাবুকের ২০টি আমার হাতে মারা হউক আর এটাই হলো বিচারকের আদেশ। আদেশ যেন পালন করা হয় এবং বিচারক হিসাবে আমার উপর চাবুক মারতে যেন কোনো রকম করুণা বা দয়া দেখানো না হয়। বিচারক হাত বাড়িয়ে দিলেন। দুই হাতে পর পর ২০টি চাবুক মারা হলো। চাবুকের আঘাতের ফলে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে। এরপর বিচারক বললেন “যে শহরে নগর প্রধান, খাদ্য গুদাম প্রধান ও অন্যান্য সমাজ হিতৈষীরা একজন অভাবগ্রস্থ মহিলার ভরণ-পোষণ করতে পারেন না। সেই নগরে তারাও অপরাধী। তাই বাকি ৩০টি চাবুক সমান ভাবে তাদেরকে মারা হোক।”এরপর বিচারক নিজ পকেট থেকে বের করা রুমালের উপর ৫০টি রৌপ্য মুদ্রা রাখলেন। তারপর বিচারপতি উপস্থিত সবাইকে বললেন “যে সমাজ একজন বৃদ্ধমহিলাকে চোর বানায়, যে সমাজে এতিম শিশুরা উপবাস থাকে সে সমাজের সবাই অপরাধী। তাই উপস্থিত সবাইকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানা করা হলো।” এবার মোট ৫০০ দিনার রৌপ্য মুদ্রা থেকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানাবাবদ রেখে বাঁকি ৪০০টি রৌপ্য মুদ্রা থেকে ২০টি চুরি যাওয়া দোকানের মালিককে দেওয়া হলো। বাকি ৩৮০টি রৌপ্য মুদ্রা বৃদ্ধা মহিলাকে দিয়ে বললেন “এগুলো আপনার ভরণপোষণের জন্য। আর আগামী মাসে আপনি খলিফা হারুন-অর রশিদের দরবারে আসবেন। খলিফা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী।

এবার খলিফার দরবারে হাজির ওই বৃদ্ধা। বিচারক চেয়ার থেকে নেমে এসে বললেন আপনাকে ও আপনার এতিম দু’নাতিকে উপোস রাখার জন্য সেদিন বিচারক হিসেবে ক্ষমা চেয়েছিলাম। আজ দরবারে ডেকে এনেছি প্রজা অধিকার সমুন্নত করতে না পারা অধম এই খলীফাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। আপনি দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন।

এবার এ গল্পটি দিয়েই লেখাটি শেষ করতে চাই। একরাতে নৈশভ্রমণে বের হয়েছেন খলিফা। মূলত এ ভ্রমণে তিনি রাজ্যের নাগরিকের সুখ-দুঃখের খোঁজ নিতেন। সে রাতে ছিল চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছু দূর যেতেই বাচ্চাদের কান্নার শব্দ শোনা গেলেও অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সামনের দিকে এগোতে হলো। বেশ কিছু বালুময় বিস্তীর্ণ পথ পাড়ি দেওয়ার পর কান্নার আওয়াজ আসা স্থানটি নির্ণয় করা গেল। দেখা গেল নিভুনিভু আগুনের চিহ্ন। আরও কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা অবলোকন করার চেষ্টা করছেন খলিফা ও তার সঙ্গী। প্রথম বোঝা গেল এক মহিলা চুলায় কিছু রান্না করছেন। তার পাশে দুই শিশু খাবারের জন্য কান্না করছে। অথচ মহিলাটি বাচ্চাদের অতি শিগগিরই খাবার দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে বেশকিছু সময় অতিবাহিত হলো। তারা দুজন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে এসব চিত্র দেখে যাচ্ছেন। এসব চিত্র দেখার ফাঁকে-ফাঁকে তারা নিজেদের মধ্যে কিছু ছোট ছোট আলাপও করছেন। এরই মধ্যে তাদের কাছে আরও স্পষ্ট হলো বিষয়টি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও বাচ্চাদের দেওয়া মহিলার স্বল্প সময়ের আশ্বাস ফুরাচ্ছে না। তখন তারা আগন্তুক হিসেবে মহিলার দিকে এগিয়ে গেলেন। একজন আগন্তুকের বয়স খানিকটা বেশি হলেও অপরজন ছিল যুবক। আগন্তুকরা জিজ্ঞেস করল বাচ্চাদের এভাবে কান্নার প্রকৃত কারণ কী?

তখন মহিলা অত্যন্ত অসহায়তার সঙ্গে বলতে লাগলেন, এই দুই বাচ্চা আমার সন্তান, আমার স্বামী যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। আমি সারা দিন চেষ্টা করেও তাদের জন্য কোনো খাদ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। তাই তাদের সান্ত¡না দেওয়ার জন্য পাতিলের মধ্যে পাথর সিদ্ধ করছি এবং অপেক্ষা করছি কখন তারা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। তখন আগন্তুকদের মধ্যে প্রথমজন খুব মর্মাহত হলেন এবং পাশের যুবককে তাদের খাবারের জন্য নিজ কাঁধে করে আটা এবং খেজুর নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে খাদ্য নিয়ে ফিরে এলেন যুবক। এর অল্প সময় পরই মহিলা জানতে পারলেন তার জন্য খাদ্য বহন করে নিয়ে আসা ব্যক্তিই খলিফা হারুন অর রশীদের পুত্র মুহতাসীম।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel