বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১৫ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
কুষ্টিয়া আইনাঙ্গনের কিংবদন্তী ‘সিরাজ প্রামাণিক’ এর আজ জন্মদিন খোকসা কুমারখালীর নৌকার মাঝি হলেন ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া ৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিলেন ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। ভেড়ামারায় জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত খোকসায় আওয়ামী যুবলীগের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত টিএসসিসি পরিচালকের সাথে ইবির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মতবিনিময় তালাকের নোটিশ গ্রহণ না করলে তালাক হবে কী? ইবির আল-হাদিস বিভাগে পিএইচডি সেমিনার অনুষ্ঠিত দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ইবি শুভসংঘের খাবার ও পানীয় বিতরণ ইবি ও যবিপ্রবিসহ পাঁচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০৩ শিক্ষার্থী পেল সিজেডএম শিক্ষাবৃত্তি
চিরকালের রবীন্দ্রনাথ ও পদ্মা প্রবাহ চুম্বিত শিলাইদহ

চিরকালের রবীন্দ্রনাথ ও পদ্মা প্রবাহ চুম্বিত শিলাইদহ

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
রবীন্দ্রনাথ তো চিরকালেরই। তিনি আজকেরও। রইবেন আগামীতেও। প্রায় ১০৭ বছর আগে ১৯১৬ সালে ‘বলাকা’র প্রথম কবিতাটিতে যা লিখেছিলেন তাতে ছিল ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা/আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা…’ আমরা তো মোটামুটি আধমরা হয়ে আছি। আমাদের কে জাগাবে? জাগাবে সেই নবীন ও কাঁচা। যারা সবুজ ও অবুঝ, অশান্ত ও প্রচ- সেই তরুণেরা। ১০৭ বছরে আমরা জাগবার চেষ্টা বহুভাবে করেছি, কিন্তু জাগতে পারিনি, আধমরা অবস্থাতেই রয়েছি। সেজন্য ওই আহ্বানটি খুবই জরুরি।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আধুনিক। তখনও ছিলেন, এখনও আছেন, আগামীতেও থাকবেন। ওই আধুনিকতার দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করার মতো, একটি হচ্ছে জিজ্ঞাসা, অন্যটি আন্তর্জাতিকতা। তাঁর জিজ্ঞাসু মন তাঁকে সমাজে, অর্থনীতিতে, চিন্তায় ও রাজনীতিতে যে দ্বন্ধগুলো রয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মূল আগ্রহটা ছিল মুক্তির। তাঁর আন্তর্জাতিকতা তাঁকে নিয়ত ব্যস্ত রেখেছে বিশ্বের যেখানেই যা কিছু মহৎ সৃষ্টি ঘটেছে, তার সারৎসার গ্রহণ করতে। কিন্তু তাঁর আন্তর্জাতিকতা দাঁড়িয়েছিল মাতৃভাষার মর্যাদাদান ও চর্চার ওপর ভিত্তি করে। মাতৃভাষাকে মাধ্যম না করলে শিক্ষা যে স্বাভাবিক ও যথার্থ হবে না এ কথা তিনি সারাজীবন বলে গেছেন এবং সাধনা দিয়ে বাংলাভাষাকে যে স্তরে পৌঁছে দিয়ে গেছেন, সেটি আমাদের উত্তরাধিকার।

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে আলস্য বা অল্পে সন্তুষ্টি ছিল না। তাঁর কবিতায় পর্বত যেমন বৈশাখের মেঘ হতে চেয়েছে, তিনি নিজেও ছিলেন সেই রকমেরই। যে নির্ঝরের স্বপ্ন তাঁর ভেতর একবার ভেঙেছিল সেটি আর কখনও শান্ত হয়নি। এই বিশেষ কারণেও তিনি নবীন ছিলেন চিরদিন। ছিলেন অশান্ত, কিন্তু মোটেই অস্থির নন। এর পেছনে রয়েছে তাঁর দার্শনিকতা।

রবীন্দ্রনাথ তার জীবদ্দশাতে ১৩৪৬ সালের ১ চৈত্র শিলাইদহ পল্লী সাহিত্য সম্মেলনে সম্পাদককে লিখেছিলেন আমার যৌবন ও প্রৌঢ় বয়সের সাহিত্যরস সাধনার তীর্থস্থান ছিল পদ্মা প্রবাহ চুম্বিত শিলাইদহের পল্লীতে। পদ্মা-গড়াই-হিশনার শীতল স্রোতে প্লাবিত এই অঞ্চল। এখানকার জনপদের ইতিহাস এক নদীর মতোই উদার, মহান ও বিশালতাই পূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে এসেছিলেন প্রথমে জমিদারী দেখাশোনা করার কাজে। জমিদার রবীন্দ্রনাথ মিশে গিয়েছিলেন শিলাইদহের প্রতিটি মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গে। তার প্রতিটি লেখায় মুর্ত হয়ে উঠেছে এখানকার মানুষের কথা। হয়তো শিলাইদহের অকৃত্রিমতাই মুগ্ধ হয়ে কবি গেয়ে উঠেছিলেন আকাশ ভরা সূর্যতারা/ বিশ্ব ভরা প্রাণ/ তাহারি মাঝখানে, আমি পেয়েছি মোর স্থান/ বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান ॥

শুধু জমিদারিত্বই নয় এই শিলাইদহ ছিল রবী ঠাকুরের সাহিত্য সৃষ্টির এক অপূর্ব প্রেরণা। এখানে তিনি রচনা করেন মানসী, সোনারতরী, চিত্রা, বলাকা, ক্ষণিকা, নৈবদ্য প্রভৃতি। তার অনবদ্য সৃষ্টি গল্পগুচ্ছের অধিকাংশ গল্প রচিত হয়েছিল এখানেই এমনকি গীতাঞ্জলীর অধিকাংশ গল্প। ১৮৯০ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত রীবন্দ্রনাথ বিচরণ করেছেন শিলাইদহে। জমিদারির কাজে কিংবা ব্যবসার কাজে কখনও স্বল্প কখনও দীর্ঘ সময় থেকেছেন এখানেই। এসেছেন একাকী কিংবা স্বপরিবারে। ঘুরে বেড়িয়েছেন বোর্ডে, পালকিতে। প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথকে শিলাইদহ কতখানি সমৃদ্ধ করেছিল তার লেখাতেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। শিল্প-সাহিত্য, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এখানে সে সময় আবির্ভাব ঘটেছিল বড় বড় প্রভাবশালী মহৎ সব ব্যক্তিত্বের। তাই তিনি আবেগ ভরা কন্ঠে বলেছিলেন ….ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই, ছোট সে তরী আমারই সোনার ধানে গিয়াছে যে ভরি।

একদিন সকালে বারান্দায় দাঁড়াইয়া আমি সেই দিকে চাহিলাম। তখন সেই গাছগুলোর অন্তরাল হইতে সূর্যোদয় হইতেছিল। চাহিয়া থাকিতে থাকিতে হঠাৎ এক মুহূর্তের মধ্যে আমার চোখের ওপর হইতে যেন একটা পর্দা সরিয়া গেল।… সেই দিনই ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতাটি নির্ঝরের মতোই যেন উৎসারিত হইয়া বহিয়া চলিল। লেখা শেষ হইয়া গেল। কিন্তু জগতের সেই আনন্দরূপের তখনও যবনিকা পড়িয়া গেল না।
[রবীনমষু রচনাবলী, জীব স্মৃতি, প্রভাত সঙ্গীত অধ্যায় দ্রষ্টব্য]

পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজশাহী জেলার পতিসর ও পাবনার শাহজাদপুর নামক স্থানের জমিদারির মালিকানা পান। এসব জমিদারির কেন্দ্রস্থল ছিল শিলাইদহ। জমিদারি কাজ তদারকি করার উদ্দেশ্যেই কবির ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথসহ অন্যরা কুষ্টিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোমুগ্ধকর রূপ দর্শনে আগমন করেছেন শিলাইদহে। কবিগুরু শিলাইদহে প্রথম এসেছিলেন ১৮৭৬ সালে, পরবর্তী সময়ে ১৮৯২ জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে। শিলাইদহে কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন দীর্ঘদিন। কিন্তু শিলাইদহের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কবির কাছে এতই ভালো লেগেছিল যে, কবি মুগ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। পদ্মা নদীর প্রতি কবির দুর্বার আকর্ষণ ছিল। এ শিলাইদহে ঠাকুর বংশের প্রায় সবই পল্লীভবনে বাস করে পদ্মা, গড়াই বিধৌত পল্ল¬ী প্রকৃতির রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। ১৮৯২ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের সমকক্ষ কেউ ছিলেন না। একাকিত্বই ছিল তাঁর বিধিলিপি। কিন্তু কখনোই তিনি বিচ্ছিন্ন হননি জনজীবন থেকে এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে। আমাদের আধমরা অবস্থাটা তাকে বিশেষভাবে পীড়িত করেছে এবং তিনি তাঁর সৃষ্টিশীলতা ও দার্শনিকতাকে অভিন্ন ধারায় সংযুক্ত করে আধমরাদের জাগাতে চেয়েছেন। এখনও চাইছেন। যেদিন আমরা জাগতে পারব সেদিন দেখব তাঁর সৃষ্টির ভিন্নতর তাৎপর্যগুলো আমাদের জন্য আরও বেশি উজ্জ্বল ও প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও রবীন্দ্রপ্রেমী। ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮.

 

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel