রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
আমাদের বিচার বিভাগের এত্ত দীনতা, হীনতা কেন?

আমাদের বিচার বিভাগের এত্ত দীনতা, হীনতা কেন?

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: আমাদের সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পুলিশসহ নির্বাহী বিভাগ আদালতকে সহায়তা করতে বাধ্য। আদালত বলতে কেবল গম্বুজাকৃতির বিল্ডিংকেই বোঝাবে না, বরং ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারা অনুয়ায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির এখতিয়ার সমগ্র বাংলাদেশ। সমগ্র বাংলাদেশেই এখতিয়ার গ্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে। সরাদেশে চলছে অঘোাষিত জরুরী অবস্থা। চলমান ছাত্র আন্দোলনের এ বীভৎস্য দৃশ্যপট সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা আদালতের কাছে কলিজা চায়নি। রিট পিটিশনে কিছু ডাইরেকশন চেয়েছিলাম। পুলিশের গুলিতে আমাদের সন্তানরা যেনো না মরে। অথচ আমরা একটি রীট শুনানী করতে কিংবা প্রান বাঁচানোর আদেশ দিতে এত্ত দীনতা, হীনতা!।

ইন্দিরা গান্ধী যখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন তখন গণ-গ্রেফতার শুরু হয়। এক লক্ষ চল্লিশ হাজার মানুষকে বন্দী করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম টার্গেট ছিলেন আইনজীবীরা। শুধুমাত্র নাসিক জেলে ১০২ জন আইনজীবী কারাবন্দী ছিলেন।
নয়টি হাইকোর্ট ইলিগ্যাল এরেস্টের বিরুদ্ধে হেবিয়াস করপাস রিট ইস্যু করেন মহামান্য হাইকোর্ট। কিন্তু সরকার সবগুলো আদেশের বিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারকের বেঞ্চ এই আপিলগুলো একসাথে শোনেন।

এই আপিলের রায়ের উপর হাজার হাজার কারাবন্দীর ভবিষ্যত নির্ভর করছিল। সুপ্রিম কোর্ট যদি রায় দেয়, জরুরি অবস্থার মধ্যে হাইকোর্টের রিট ইস্যু করার ক্ষমতা থাকে না, তাহলে যত মানুষকে বন্দী করা হবে জরুরি অবস্থা যতদিন চলবে ততদিন তাদের জন্য কোনো প্রতিকার থাকবে না।

ভারতের বিচার বিভাগের উপর জনগণের এবং আইনজীবীদের আস্থা ছিল। ১২ জন আইনজীবী বন্দীদের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানির শুরুতে অ্যাডভোকেট রাম জেঠমালিনী বলেন, আমি শুধু একজন বন্দীর আইনজীবী হিসেবে আসিনি, আমি আপনাদের পাঁচজনের পক্ষেও অর্থাৎ পাঁচজন জাস্টিস এর পক্ষেও উকিল হিসেবে এসেছি’। চিফ জাস্টিস বললেন, মিস্টার রাম, আপনি কি বুঝে বলছেন? তিনি বললেন, আমি শুধু বুঝে বলিনি, আমি আবার রিপিট করছি – আমি এই পাঁচজন বিচারপতির পক্ষেও ওকালতি করছি এখানে। তিনি বলেন, ঘানার চিফ জাস্টিস সরকারকে একটা প্রিভেনটিভ ডিটেনশন ল ড্রাফট করে দিয়েছিল। আইন পাশ হওয়ার পরে সবার আগে চিফ জাস্টিসকেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই বছর কোনো খবর ছিল না। দুই বছর পরের এক সরকারি নোটিফিকেশনে জানানো হয় চিফ জাস্টিস ন্যাচারাল কজে মৃত্যুবরণ করেছেন।’

১২ জন আইনজীবী নাগরিকদের জীবনের অধিকার, লিবার্টি নিয়ে আর্গুমেন্ট করেন। এটর্নি জেনারেল জানান, ব্যক্তিগত শত্রুতাবশতও যদি কাউকে কোনো পুলিশ অফিসার খুন করেন তাতেও ইমার্জেন্সি পিরিয়ডে কোনো প্রতিকার নাই।
সবাই বিচারকদের উপর ভরসা করে ছিলেন। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতির মধ্যে চারজন বিচারপতি সরকারের পক্ষে রায় দেন। একজন মাত্র বিপক্ষে ছিলেন – জাস্টিস এইচ আর খান্না।

সরকারের পক্ষে থাকা চারজন বিচারপতিকেই ইন্দিরা গান্ধীর সরকার পর্যায়ক্রমে প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করেন। জাস্টিস খান্না সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়নি। তিনি পদত্যাগ করেন।

জাস্টিস খান্নার জাজমেন্ট পরবর্তীতে পারসোনাল লিবার্টির ক্ষেত্রে ক্লাসিক রেফারেন্স হয়ে ওঠে। তিনি বলেছিলেন, ব্যক্তি স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত নয়, এটি অন্তর্নিহিত অধিকার। সংবিধান না থাকলেও মানুষের রাইট টু লাইফ, লিবার্টি অক্ষুণœ থাকবে। আদালতের কাছে প্রতিকারও থাকবে। জরুরি অবস্থা এই প্রতিকার দেওয়ার ক্ষমতা রহিত করে না। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে জাস্টিস খান্নার স্ট্যাচু নির্মিত হয়েছে ওই ঐতিহাসিক জাজমেন্ট দেওয়ার কারণে। পরবর্তীতে মেজরিটি জাজদের মধ্যে দুইজন জাস্টিস চন্দ্রচূড় এবং জাস্টিস ভগবতী তাদের জাজমেন্ট ভুল ছিল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
এমারজেন্সির শুরুতেই ওই আইনজীবী রাম জেঠমালিনীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল সরকার। তার পক্ষে তিনশত আইনজীবী কোর্টে এপিয়ার করে ওই ওয়ারেন্টের বিরুদ্ধে ইন্টেরিম ইনজাংশন নিয়েছিলেন। এই হেবিয়াস করপাস রিটের মামলার রায় হওয়ার সাথে সাথে ওই ইনজাংশন অকার্যকর হয়ে যায়। ঐদিনই অ্যাডভোকেট রাম জেঠমালিনী আমেরিকায় পলিটিক্যাল এসাইলাম নেন।

আমাদের দেশেও বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায়, ১৮৯৮ সালে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রণয়নের সময় ২২-২৫ ধারায় জাস্টিস অব পিসসংক্রান্ত বিধান আলোচনা করা হয়। ২৫ ধারায় বিধান অনুযায়ী, পদাধিকারবলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা সারা বাংলাদেশের জন্য, দায়রা বিচার, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে জাস্টিস অব পিস হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। সেই ক্ষমতা আমরা কী প্রয়োগ করতে পারছি। সাহস থাকলে বুকে হাত দিয়ে বলুন।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.comমোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel