শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০০ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
এবার গণমাধ্যম দিবসে উপহার সাংবাদিক গ্রেফতার ও নির্যাতনঃ ক্ষতি কার, ক্ষতি কিসের!

এবার গণমাধ্যম দিবসে উপহার সাংবাদিক গ্রেফতার ও নির্যাতনঃ ক্ষতি কার, ক্ষতি কিসের!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

করোনার পূর্বে সর্বাধিক আলোচিত যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িত’দের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে ১০ মার্চ সাংবাদিক কাজল নিঁেখাজ হয়। এর আগে একজন প্রভাবশালী সাংসদ ৯ মার্চ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অবশেষে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা দিবসে সাংবাদিকরা উপহার পেলেন সেই সাংবাদিক গ্রেফতার ও নির্যাতন। যদিও এ বছর দিবসটির স্লোগান ছিল, ‘ভয় বা পক্ষপাতিত্ববিহীন সাংবাদিকতা’। শনিবার গভীর রাতে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিজিবি রঘুনাথপুর সীমান্ত থেকে আটক করা হয়। প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন এই সাংবাদিক।

এর পূর্বেও বহু প্রতিবাদী মানুষকে গুম বা নিখোঁজের পর ইন্ডিয়া পাওয়া গেছে। সাবেক এক মন্ত্রীও এখনো তিনি শিলংয়ে একটি কারাগারে আছে। সুখরঞ্জন বালী বৈরি সাক্ষী হিসেবে দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে এলে তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহৃত হয়। পরে তার খোঁজ মেলে ভারতের কোলকাতার একটি কারাগারে।

বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার গুম হলে তাঁর খোজ পাওয়া যায় খুলনায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ভাগ্য ভালে তাকে তো আরেকটু হলে সীমান্ত পার করে ইন্ডিয়া নিয়ে যেত। কেন, কারা তাদেরকে ইন্ডিয়া নিয়ে যেতে চায়? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর কে দিবে?

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় গণমাধ্যমকে। দেশের প্রতিটি সরকারই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আর গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবতা নির্মম। প্রায় প্রতিদিনই কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে লাঞ্ছিত-নিগৃহীত হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীরা। প্রতিটি সরকারের সময়ে, সব ধরনের পরিস্থিতিতে। কখনও শারীরিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, কখনও শিকার হচ্ছে হয়রানির। কখনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে, কখনও রাষ্ট্রের হাতে। স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেই গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নেমে আসে খড়গ। হামলা, মামলা, আর হয়রানিতে দুর্বিষহ করে তোলা হয় জীবন।

গণমাধ্যমের এ আক্রান্ত অবস্থায় দেশের গণতন্ত্র যে রুগ্নতম সময় পার করছে তা অনুমেয়। কেননা, গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র অবস্থানের দিক থেকে একই সুতোয় গাঁথা। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করলেও পুলিশি নির্যাতনেরও শিকার হতে হয় সংবাদকর্মীদের। যদিও উভয়ই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করে। কিন্তু রাজপথে, বিপজ্জনক মুহূর্তে মাঝেমধ্যে পুলিশই হয়ে পড়ে সাংবাদিকের প্রতিপক্ষ। পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতির ঝাল মেটান সাংবাদিকদের ওপর। পরে ‘গরু মেরে জুতা দান’-এর মতো মৌখিক দুঃখ প্রকাশও করেন। এটুকুতেই প্রতিকারের সমাপ্তি। একইভাবে রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকের সম্পর্ককে আখ্যায়িত করা হয়- জল ও মাছের সম্পর্কে। কিন্তু যতই বস্তুনিষ্ঠ হোক, নিজের বা নিজ গ্রুপের বিপক্ষে গেলেই প্রতিপক্ষ হয়ে পড়েন রাজনীতিবিদরাও। তারাও হুমকি-ধমকি দেন, কর্মক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে সাংবাদিকদের ‘উপহার’ দেন বেকারত্ব। নিজস্ব সুবিধাবাদীদের দিয়ে মামলায় জড়িয়ে দেন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

আমলারা করেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নানা হয়রানি। সাংবাদিকতার নৈতিকতায় সাংবাদিকরা কারো স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু হতে পারে না। অনিয়মের বিরুদ্ধে তাকে দাঁড়াতেই হয়। ফলে সাংবাদিকরা হয়ে পড়ে অপছন্দের পাত্র। তাদের গলা টিপে ধরতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে সবাই। অথচ অপছন্দের কথাগুলো তুলে ধরতে হয় দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিটি সরকারের সময়েই সাংবাদিকদের ওপর নেমে এসেছে নির্যাতনের খড়গ। রাষ্ট্রীয়ভাবে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছেন তাই নয়, স্বার্থান্ধ রাজনীতিবিদদের ক্যাডার ও সন্ত্রাসী চরমপন্থিদের হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত, এমনকি খুন হচ্ছেন সাংবাদিকরা।

প্রতিটি সরকারের সময়কাল রঞ্জিত হয়েছে সাংবাদিকের রক্তে। অথচ শিল্প হিসেবে সংবাদমাধ্যমের বিকাশ ও সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় প্রতিটি সরকারই থাকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কোনো সরকারের হাতেই প্রণীত হয়নি একটি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন। এমনকি দেশে একের পর এক সাংবাদিক খুনের ঘটনা ঘটলেও কোনো খুনের বিচার প্রক্রিয়াই সুষ্ঠুভাবে এগোয়নি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি একটিরও। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দিনের পর দিন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও তেমন কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে সাংবাদিকতা পেশা ক্রমাগতই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথাগত দুঃখ প্রকাশ ও হামলাকারীদের শাস্তির আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

প্রতিদিন সংবাদ পিপাসু মানুষের দ্বারে নতুন নতুন খবর নিয়ে হাজির হয় সাংবাদিকরা। তাদের লেখনি বা সংবাদ উপস্থাপনের মাধ্যমে সকালে চায়ের কাপে ঝড় থেকে শুরু করে মানুষ সুফল পেতে শুরু করে। নির্যাতিত মানুষ শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হয়। আর সাংবাদিকরা জাতির সামনে তুলে ধরে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সুখ, দুঃখ,হাসি কন্না,সাফল্য ব্যার্থতার কথা। কিন্তু সেই সাংবাদিক যখন নির্যাতিত হয় তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আজও আমাদের রাজপথে দাঁড়িয়ে এই পৈশাচিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার দাবি করতে হচ্ছে। এসব হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের বিচার না হলে সাহসী সাংবাদিক ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। প্রতিষ্ঠিত হবে না আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার। তাই সরকার, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন রাখছি, সুষ্ঠু বিচার, প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা ও ব্যবস্থা গ্রহণের। সাংবাদিকদের পেশায় এ চলমান ঝুঁকি কমাতে রাষ্ট্র কি কোনো উদ্যোগ নেবে? দূর ভবিষ্যতে কি কোনো উজ্জ্বল আলো অপেক্ষা করছে?

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, কলামিস্ট, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel