রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
রহিম ও রুনা একে অপরকে গভীরভাবে ভালবাসে। ভালবাসাকে বাস্তবে রুপ দিতে ওরা পরিবারের অমতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রেমের টানে রহিমের হাত ধরে ঘর ছাড়ে রুনা। উভয়ের গন্তব্য ঢাকা। ওদের ধারনা কোর্টে উকিলের মাধ্যমে বিয়ে করতে হয়। আদালতের নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে গিয়ে ওরা ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করে। কিন্তু তখন তারা বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রী করেনি। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই ওদের দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়।
রহিম রুনার সঙ্গে তার বিয়ের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন।আর এ অজুহাতে রুনাকে মোহরানা, খোরপোষ ও দাম্পত্য অধিকার দিতেও তিনি রাজি নন। অবশেষে বিষয়টি গড়ায় আদালতে। বিয়েটা প্রমাণ করতে রীতিরকম হিমশিম খেতে হয় রুনাকে।১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করা বাধ্যতামূলক। বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করলে স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার, মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকার, খোরপোষ ও মোহরানার অধিকার থেকে ওই নারীকে বঞ্চিত হতে হয়। এছাড়া প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে বিয়ে করলেও স্ত্রীর কিচুই করার থাকে না। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইনে বলা হয়েছে যে, যদি কেউ বিবাহ রেজিস্ট্রি না করেন তাহলে তিনি এ আইনের অধীনে অপরাধ করেছেন বলে বিবেচিত হবেন এবং এ অপরাধের জন্য আইন কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি হচ্ছে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা আর্থিক জরিমানা যা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে অথবা উভয় ধরনের শাস্তিই হতে পারে। আপনাদের জানিয়ে রাখি ২০০ টাকার টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে বিয়ে বলা যায় না। এ্যাফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র। আইনানুযায়ী বিয়ে রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন করেই কেবল ঘোষণার জন্য এ্যাফিডেভিট করা যাবে। কাজেই বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন হচ্ছে সরকারের নির্ধারিত ফরমে লিখিত বর ও কনের বিয়ে সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সম্বন্ধে আইনগত দলিল যা কাজী অফিসে সংরক্ষিত থাকে। সরকার কাজীদের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করার জন্য অনুমতি বা লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। আইনানুযায়ী বিয়ের আসরেই বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে হয়।
বিয়ের আসরে সম্ভব না হলে বিয়ে অনুষ্ঠানের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে হয়। কাজীকে বাড়িতে ডেকে এনে অথবা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করা যায়। ফলে কোর্টে গেলেও কাজীকে কোর্ট চেম্বারে ডেকে এনে বিয়ে রেজিষ্ট্রির কাজটি সেরে নেবেন। নতুবা প্রতারণার শিকার হতে পারেন। আর যারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী তাদের জন্যও বিয়ে রেজিষ্ট্রির বিধান রয়েছে। বর্তমানে বিদেশ ভ্রমণ, অভিবাসন, চাকুরী, বদলী, পাসপোর্ট তৈরী ইত্যাদি ক্ষেত্রে হিন্দু বিবাহ সম্পর্কিত দালিলিক প্রমাণ একটি অপরিহার্য বিষয়। আর যারা হিন্দু-মুসলিম একে অপরকে ভালবেসে স্ব স্ব ধর্ম অক্ষুন্ন রেখে বিশেষ বিবাহ করতে চান, তাদের জন্যও বিয়ে রেজিষ্ট্রির ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশী কোন নর নারীকে বিয়ে করতে হলে বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়েটা বৈধ করা হয়েছে।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থপ্রণেতা ও আইনগবেষক। মোবাইল:০১৭১৬৮৫৬৭২৮, E-mail:seraj.pramanik@gmail.com
বিস্তারিত জানতে নিম্নের ভিডিওটি দেখতে পারেন