ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জমি দলিলে আছে; রেকর্ডে নেই, জমি কী টিকবে?

admin
জুন ২০, ২০২৫ ৪:২৮ অপরাহ্ণ
শেয়ার:
Link Copied!

এডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

আপনি বৈধভাবে জমি কিনেছেন, জমির দলিলও আছে, জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করছেন কিন্তু জমির মিউটেশন নামজারি করেন নাই, সেকারণ জমির খতিয়ানে আপনার নাম নেই। আপনি কিন্তু ওই জমি নিয়ে বিপদে পড়তে পারেন। কারণ ওই জমির খতিয়ানে যাদের নাম আছে, তারা ওই জমি দাবী করে বসতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে জমির দলিল বড়, নাকি খতিয়ান বড়? এমতাবস্থায় কী করবেন?

জমির মালিকানা পরিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে দলিল ব্যবহৃত হয়। দলিল জমির মালিকানা, সীমানা এবং অন্যান্য শর্তাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে। দলিল ছাড়া, জমির মালিকানা প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে আইনি লড়াইয়ের ক্ষেত্রে।

আর জমির রেকর্ড (খতিয়ান, পর্চা) সরকারিভাবে জমির মালিকানা এবং অন্যান্য বিবরণ নিশ্চিত করে। রেকর্ড জমির মালিকানা, পরিমাণ, এবং মালিকের নাম ইত্যাদি তথ্য সরবরাহ করে। জমির রেকর্ড নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করা হয়, যা মালিকানার ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে। ভূমি অফিসের রেকর্ডের ভিত্তিতে নামজারি (মিউটেশন) করা হয়, যা জমির মালিকানা পরিবর্তনের সরকারি স্বীকৃতি। কাজেই দলিল এবং রেকর্ড উভয়ই জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে, দলিল ও রেকর্ড উভয়ই পর্যালোচনা করা হয়।
কিছু ক্ষেত্রে, যেমন- নামজারি বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য, রেকর্ডের প্রয়োজন হয়।
অতএব, জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য দলিল এবং রেকর্ড উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং একে অপরের পরিপূরক। মনে রাখবেন, জমির পরিমাণ কখনো পরিবর্তন হয় না, পরিবর্তন হয় শুধু জমির মালিকানার। এটা হতে পারে বিক্রির মাধ্যমে দলিল সূত্রে অথবা ওয়ারেশ সূত্রে।

যদি কোনো জমির দলিল আপনার নামে থাকে, কিন্তু রেকর্ডে সেই জমির মালিকানা অন্য কারো নামে থাকে, তাহলে জমির মালিকানার স্বপক্ষে আপনার দলিলটি ভালোভাবে যাচাই করুন এবং নিশ্চিত করুন যে এটি বৈধ। এরপর, আপনার এলাকার ভূমি অফিস বা তহসিল অফিসে গিয়ে বিষয়টি জানান এবং প্রয়োজনীয় রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করুন।

সেকারণ ঝামেলা এড়াতে জমি ক্রয়ের পর পরই ক্রয়কৃত জমির দলিলের সার্টিফাই কপি তুলে নামজারি মিউটেশন করার আবেদন করুন। নতুবা ওই জমির পূর্বের মালিক বা তার ওয়ারিশদের নামে খতিয়ান রেকর্ড হয়ে যায় বা রেকর্ড হয়ে থাকে। আপনি জমি ক্রয়ের দীর্ঘ বছর পরেও জমির মিউটেশন করে নিতে পারেন, যদি আপনার কাছে বৈধ দলিল, হাল খাজনার রসিদ, খাজনার কপি ইত্যাদি থেকে থাকে, তাহলে আপনি এসি ল্যান্ড অফিসে আবেদন করে নিজ নামে রেকর্ডভুক্ত করতে পারবেন।

আর মিউটেশন বা নামজারি করার সময় দলিলে নাম, মৌজা, দাগ, খতিয়ানে কিংবা দলিলে কোন ভুল থাকলে আপনি সংশোধনী দলিল অর্থাৎ ভ্রুম সংশোধনী দলিল করে তা সমাধান করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে কিন্তু দলিলদাতা কিংবা তার ওয়ারেশগণের রেজিস্ট্রি অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে। নতুবা দেওয়ানী আদালতে গিয়ে মোকদ্দমা করে সংশোধনী করে নিতে হবে।
অনেক সময় জমির মালিকানা দাবি করে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল বা সহকারী জজ আদালতে রেকর্ড কারেকশানের মামলা করতে হবে। এছাড়া, খতিয়ান বা রেকর্ডে ভুল থাকলে, তা সংশোধনের জন্য আবেদন করা যেতে পারে।

যদি জমিটি ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া হয় এবং রেকর্ডে আপনার বা আপনার পিতা-পিতামহের নামে থাকে, তবে দলিল ছাড়াও জমি বিক্রি করা যেতে পারে। তবে, যদি রেকর্ড সংশোধনের জন্য কেউ মামলা করে এবং আপনি দলিল দেখাতে না পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার রেকর্ডের মালিকানা বাতিল হতে পারে।

আর মনে রাখবেন ভুলভাল তথ্য বা ঘুষের মাধ্যমে নামজারি করালেও ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। তাই জমি মালিকদের উচিৎ দলিল ও খতিয়ান উভয়কেই সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মালিকানা নিশ্চিত করা জরুরি।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও পিএইচ. ডি ফেলো। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃseraj.pramanik@gmail.com

ভিডিও লিংক:

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।