
এডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
ভুক্তভোগীরা জেনে খুশি হবেন, নতুন আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বেশ কিছু সংস্কার করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে ‘ধর্ষণ’ ও ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে যৌনকর্ম’ এ-দুটি অপরাধকে পৃথক করা হয়েছে এবং ছেলে শিশুর বলাৎকারকে ধর্ষণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাজেই এখন থেকে প্রেম ভালবাসা থাকলে কিংবা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকাকালীন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কোনো নারীর সঙ্গে স্বেচ্ছায় যৌনকর্ম করা হলে সেটি আর ‘ধর্ষণ’ হিসেবে গণ্য হবে না; এটি হবে এক ধরনের ‘অপরাধমূলক বা প্রতারণামূলক যৌনকর্ম’, যার সাজা রাখা হয়েছে সাত বছর পর্যন্ত কারাদ- (ধারা ৯খ)।
সংশোধিত এ আইন বলছে, ভালবাসা থাকাকালীন জবরদস্তিহীন যৌনকর্ম ‘ধর্ষণ’ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত নয়। এধরনের যৌনকর্মের পেছনে বিশেষ কোনো প্রলোভন থাকলে সেটিকে বড়জোর ‘অপরাধমূলক বা
প্রতারণামূলক যৌনকর্ম’ বলা যেতে পারে। সংশোধিত আইনে এই অপরাধকে বলা হয়েছে: ‘আস্থাভাজন সম্পর্ক থাকাকালে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে বলপ্রয়োগহীন যৌনকর্ম’। প্রকৃতপক্ষে এধরনের যৌনকর্ম এতদিন পর্যন্ত ‘ধর্ষণ’ হিসেবে গণ্য হয়ে আসলেও সংশোধনীর পর থেকে আর ‘ধর্ষণ’ বলে গণ্য হবে না। তবে ভালবাসার মানুষকে ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল’ করে শারীরিক সম্পর্কে সম্পৃক্ত করলে এখন থেকে ৯ (খ) ধারায় মামলা হবে। মোটেই ‘ধর্ষণের’ মতো মারাত্মক অপরাধ হিসেবে নয়।
এদিকে ধর্ষণের সংজ্ঞাও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার পুরুষাঙ্গ বা দেহের কোনো অংশ কিংবা অন্য যেকোনো বস্তু কোনো নারী বা শিশুর যোনী বা পায়ুপথ কিংবা মুখের অভ্যন্তরে প্রবিষ্ট করেন, সেটি ‘যৌনকর্ম’ হিসেবে গণ্য হবে [ধারা ২(ঞঞ)]।
ধর্ষণের উদ্দেশ্য কোনো নারী বা শিশুর গোপনাঙ্গে মারাত্মক জখম করার কোনো সাজা এতদিন এই আইনে ছিল না। ৯(৪) ধারায় নতুন দফা (গ) যুক্ত করে এক্ষেত্রে মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন সাজার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। নতুন এ সংশোধনীসমূহ একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইন গবেষক। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃseraj.pramanik@gmail.com