প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ১০, ২০২৫, ১:১৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১১, ২০২৫, ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ
৭১ সালে বাংলাদেশে ভারতের পরিকল্পিত যুদ্ধ বনাম গরীবের বউ সবার ভাবী!

প্রবাদে আছে “গরীবের বউ সবার ভাবী”। মূল অর্থ হলো গরীবের বউ যতই ক্ষমতাবান হোন না কেন, তিনি তার প্রতিবেশীদের কাছে ততই অবহেলিত থেকে যান।। যা প্রকারান্তরে তার সন্তান এবং স্ত্রীকেও স্পর্শ করে। পরবর্তিতে সমাজ পরিবর্তিত অবস্থানে গেলেও কেউ তা গোনায় ধরে না।। সবাই তাকে আগের মূল্যেই বিচার করে।
বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ এবং সবচেয়ে বড় বিজয় ছিল একাত্তরের যুদ্ধে। ভারতের বিনিয়োগটি ছিল যেমন বিপুল অর্থের, তেমনি রক্তেরও। ৪ হাজারের বেশী ভারতীয় সৈনিক এ যুদ্ধে নিহত হয়। এ বিষয়টি অস্বীকারের উপায় নেই যে, ভারতীয়দের সে বিনিয়োগ না হলে বাংলাদেশ সৃষ্টিই হত না। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি থানা, প্রতিটি মহকুমা এবং প্রতিটি থানা স্বাধীন করে দিয়েছে বিশাল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তবে ভারতের সে বিনিয়োগ রহস্য বাংলার মানুষ মাত্রই ক্রমশ বুঝতে পারছেন। বোঝে না শুধু কতিপয় দলকানা অন্ধের দল।
আপনারা সবাই কম-বেশী ইতিহাস জানেন। আপনাদের কাছে প্রশ্ন, ভারত কোন বিদেশীদের স্বাধীনতার স্বার্থে কখনো কি একটি তীরও কোথাও ছুঁড়েছে? একটি পয়সাও কি ব্যয় করেছে? বরং ভারতের ইতিহাস তো অন্য দেশে সামরিক আগ্রাসন ও স্বাধীনতা লুন্ঠনের। সে লুন্ঠনের শিকার কাশ্মীর, সিকিম, মানভাদর এবং হায়দারাবাদ। ভারতীয়দের কাছে একাত্তরের যুদ্ধটি ছিল শতকরা শতভাগ ভারতীয় যুদ্ধ। যা ভারতের পাঠ্যপুস্তকে জ্বল জ্বল করছে। ফলে ৭১’ যুদ্ধের ঘোষণা শেখ মুজিব, না জিয়াউর রহমান, না অন্য কেউ সেসব নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। ভারতীয় অর্থ, নেতৃত্ব ও পরিকল্পনা দ্বারা পরিচালিত এ যুদ্ধটি ছিল সর্বক্ষেত্রেই একটি ভারতীয় যুদ্ধ। মুক্তিবাহিনী যুদ্ধ করলো কি করলো না-ভারত সে অপেক্ষায় ছিল না। এ যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল ভারতীয় ভূমি থেকে এবং ভারতীয় জেনারেলদের নেতৃত্বে। সে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে ভারতীয় সেনানিবাস, বহু লক্ষ ভারতীয় সৈন্য এবং বহু ভারতীয় বিমান, কামান, ট্যাংক এবং গোলাবারুদ। এমন একটি যুদ্ধের জন্য ভারত ১৯৪৭ থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পাকিস্তানকে তারা চির শত্রু মনে করেন।
মজার সংবাদ হচ্ছে এই যে, ভারতীয়দের বড় সফলতাটি ছিলো, তারা তাদের বহুদিনের কাঙ্খিত নিজস্ব যুদ্ধটিকে তারা মুক্তিযুদ্ধ রূপে বাংলাদেশীদের ঘাড়ে চাপিয়েছে। যুদ্ধ করে বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে -সে কাহিনী শুনিয়েছে বিশ্ববাসীকেও। এভাবে দুনিয়ার সামনে নিজেদের ভাবমূর্তিকে উজ্বল করার চেষ্টা করেছে। অথচ মুক্তিবাহিনীকে তারা নিজ অর্থ ও অস্ত্রে গড়ে তুলেছিল ¯্রফে নিজস্ব প্রয়োজনে। তারা সেদিন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলিমদের নামিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধার করেছে। তারা কইয়ের তেলে কই ভেঝেছে। এ যুদ্ধটি যে পুরোপুরি ভারতীয় যুদ্ধ ছিল সেটি প্রকাশ পায় যখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে শুধুমাত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেলদের কাছে। সেখানে কোন বাংলাদেশী জেনারেল বা মুক্তিযোদ্ধার কমা-ার কিংবা বাংলাদেশের কোনো চুক্তিযোদ্ধা ছিল না। আনন্দের সংবাদ যে, প্রিয় বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমান যুদ্ধাস্ত্র প্রকাশ্যে ভারতে নিয়ে যায়। কারণ, সে সময় দেশে কোন সরকার ছিল না। ভারত ইচ্ছেমত লুণ্ঠন করতে পেরেছে। ভারতীয় শাসকচক্র সমগ্র বাংলাদেশকেই গণিমতের মাল মনে করেছিল। এমনকি পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদেরকেও দোস্ত দেশ ভারত নিয়ে যায়। এ বিষয়গুলো বুঝার সামর্থ্য মুজিব-তাজউদ্দীনের মতো অনেক সচেতন মুক্তিযোদ্ধারাও বুঝতে পারছিলেন। লক্ষণীয় হলো, ভারতীয় সেনাবাহনীর বহু বিলিয়ন ডলারের লুণ্ঠন নিয়ে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় বিশেষ রিপোর্ট ছাপা হলেও সেসময় বাংলাদেশের কোন পত্রিকায় একটি লাইনও লেখা হয়িনি। তারা ব্যস্ত ছিল ভারত বন্দনায়।
এমন একটা যুদ্ধ নিজ খরচে লড়ার জন্য ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই দুই পায়ে খাড়া ছিল। ভারত পাকিস্তানের সৃষ্টি যেমন চাইনি, তেমনি দেশটি বেঁচে থাকুক -সেটিও চায়নি। তাই ভারতের সে বিনিয়োগটি যেমন একাত্তরে শুরু হয়নি, তেমনি একাত্তরে শেষও হয়নি। সেটির শুরু হয়েছিল সাতচল্লিশে এবং তা আজও চলছে। তবে চলছে ভিন্ন ভিন্ন রণাঙ্গনে। বিশেষ করে সে সব খাতে -যা আঞ্চলিক শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য তারা জরুরি মনে করে। বাংলাদেশের বুকের দিয়ে করিডোর হলো তেমনই এক গুরুত্বপূর্ণ খাত। তাই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে করিডোরের দাবী, চট্রগ্রাম ও চালনা বন্দরসহ বাংলাদেশের নৌ ও বিমান বন্দর ব্যবহারের দাবি, বাংলাদেশের মিডিয়া খাতে ভারতীয়দের বিনিয়োগ, শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের লাগাতার প্রতিপালন এি বষয়গুলো বুঝতে হলে ভারতের সে আগ্রাসী মনভাব ও সামরিক প্রয়োজনটি অবশ্যই বুঝতে হবে। ভারত চায় চায় বাঙালির জীবনে একাত্তর বার বার ফিরে আসুক। এবং বাঙালি আবার লিপ্ত হোক ভারতীয়দের নেতৃত্বে এবং ভারতীয়দের অস্ত্র নিয়ে আরেকটি যুদ্ধে। কিন্তু ভারতীয়দের সে স্বপ্ন গুড়েবালি। ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠির মধ্যে এখন রয়েছে প্রচন্ড পাকিস্তানভীতি ও ইসলামভীতি, তেমনি রয়েছে চীনভীতিও। চীন দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিসঞ্চয় করছে এবং ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিকে একের পর এক নিজের প্রভাব-বলয়ে নিয়ে আসছে। প্রতিবেশী নেপাল এখন চীনের পক্ষে। শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপের সরকারও এখন ভারতবিরোধী ও চীনমুখী। একমাত্র বাংলাদেশের হাসিনা সরকার ছিল ভারতপন্থী। হাসিনার পলায়নের পর বাংলাদেশ এখন আর ভারতীয় শিবিরে নাই। ফলে ভারতের দুশ্চিন্তা এখন বহুগুণ।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমার এ লেখার প্রতিটি লাইন ইতিহাস ভিত্তিক ও বাস্তবতার নিরিখে লেখা। আমার নিজস্ব কোনো মতামত নয়। দয়া করে রাজাকার কিংবা ভারত বিদে¦ষী বলে গালি-গালাজ করবেন না।
All reactions:
1Seraj Pramanik
Copyright © 2025 দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল. All rights reserved.