ঢাকাবুধবার, ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হারিয়ে যাওয়া অভিযোগকৃত চেকের মামলা, ফলাফল ও আইনগত পরিণতি!

admin
জুন ৩, ২০২৫ ৯:২৪ অপরাহ্ণ
শেয়ার:
Link Copied!

 

এডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
পাওনা পরিশোধের জন্য চেক প্রদানের পর চেকদাতা কর্তৃক অনেক সময় অভিযোগ উত্থাপন করা হয় যে, চেকটি হারিয়ে গেছে। আবার চেক নগদায়নের জন্য ব্যাংকে জমা দেয়ার পর চেক দাতা ব্যাংকে লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে সেটা Stop Payment করতে বলে এবং কারন হিসাবে উল্লেখ করেন যে চেকটি হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে। অনেক সময় চেকদাতা এ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে রাখে। আবার অনেক সময় থানায় চেক হারানো বিষয়ে থানায় জি.ডি করে রাখে। এসকল ক্ষেত্রে চেক প্রদানের প্রমাণের দায়িত্ব কিন্তু আসামীর উপর বর্তায়। ১৮৮১ সালের এনআই এ্যাক্টের ১১৮ ধারানুসারে অনুমান করতে হবে যে, চেকটি তার দাতা কর্তৃক তার নিজ স্বাক্ষরে প্রাপকের দেনা বা দায় পরিশোধের জন্য প্রদান করা হয়েছিল।

হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া চেকের বিষয়ে চেক দাতাকে তিনটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
(১) কেন তিনি একটি ফাঁকা স্বাক্ষরিত চেক রেখেছিলেন?
(২) চেকের প্রাপকের নিকট কোনো দায়-দেনা আছে কি-না?
(৩) চেকটি আসলে হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে কি-না?

মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় ওই বিষয়ে সাফাই সাক্ষী দিয়ে আসামীকে প্রমাণ করতে হবে যে, হারিয়ে যাওয়া চেক নিয়ে আসামী থানায় কোন মামলা দায়ের করেছিল বা কোন থানায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জি.ডি করেছিল বা তর্কিত চেকটি উদ্ধারের জন্য বাদীর বিরুদ্ধে কোন ফৌজাদারী বা দেওয়ানী আদালতে মামলা করেছে ইত্যাদি বিষয়ও প্রমাণ করতে হবে। নতুবা আসামী তেমন কোনো সুবিধা পাবেন না।

মনে রাখবেন নালিশী চেকটি হারিয়ে গেছে কি-না বা সেটা চুরি হয়েছে কি না এগুলো একটি ঘটনাগত বিষয় এবং তা কেবলমাত্র বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হয়।

একটি কেইস স্টাডি থেকে জানা যায়, একটি মামলার চার্জ শুনানীর সময় আসামীপক্ষ থেকে দাবী করা হয় যে, নালিশী চেকটি বাদী আসামীর ম্যানেজার হিসেবে চাকুরী করার সময় চুরি করেছে এবং পরবর্তীতে ওই চুরি হওয়া চেক দিয়ে মামলা করেছে। তাই মামলাটিতে আসামীর বিরুদ্ধে কোন চার্জ গঠন করার সুযোগ নেই। আদালত উভয় পক্ষকে শ্রবণের পর আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। আসামী উক্ত আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ হয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১ এ ধারার বিধান মোতাবেক মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ দরখাস্ত করে। গত ০৫/১১/২০১৭ তারিখে নিষ্পত্তিকৃত মামলায় (ক্রিমিনাল মিস কেস নং ৩২৯৭/২০১৬, আন রিপোর্টেড) মহামান্য হাইকোর্ট এ বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, নালিশী চেকটি চুরি হয়েছে বা হারিয়ে গেছে এবং অনুরূপ চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া চেকের উপর ভিত্তি করে বিচারিক আদালত আসামীকে দন্ড প্রদান করলে সেটা বেআইনী বলে বিবেচিত হয় না। আসামী যদি ঐ চেক চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ব্যাংককে কোন কিছু না জানায় বা থানায় জিডি না করে তাহলে অনুরূপ প্লি (Plea) দ্বারা আসামী কোন সুবিধা পায় না।

বিষয়টি আলোচনা করতে গিয়ে MA Azam chowdhury V ABM Asaduzzaman [13 ADC (2016) 79 মামলায় আপীল বিভাগও একই মন্তব্য করেন। কাজেই চেক দেওয়ার পর চেকটি হারিয়ে গেছে কিংবা এ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা হয়েছে কিংবা স্টপ পেমেন্ট করা হয়েছে, থানায় জিডি করা হয়েছে-ইত্যাদি বলে আইনগতভাবে আসামীর বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, পিএইচ. ডি (ফেলো) ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃseraj.pramanik@gmail.com

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।