ঢাকাবুধবার, ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সম্পত্তি প্রতারণাপূর্বক অন্য কেউ লিখে নিলে কী করবেন?

admin
জুন ১৬, ২০২৫ ৭:৪০ অপরাহ্ণ
শেয়ার:
Link Copied!

এডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

আপনার বাবার সম্পত্তি তাঁর মূত্যুর পূর্বে আপনার পরিবারের কোন সদস্য প্রতারণা করে লিখে নিয়েছে। আপনি বিষয়টি জানার পর কী করবেন? কিভাবে উক্ত জমিটি উদ্ধার করে নিজের অনুকুলে ফেরত নেবেন কিংবা উক্ত প্রতারণামূলক দলিলটি বাতিল করে দেবেন-সেসকল বিষয়ে আইনি নিবন্ধ।

সবার আগে জেনে নিই, আপনি কিভাবে বুঝবেন যে, জমিটি প্রতারণার মাধ্যমে আপনার বাবার কাছ থেকে দলিল করে নেয়া হয়েছে। অনেক সময় অন্যান্য উত্তরাধিকারীরা বাবাকে ভয় দেখিয়ে, ফুসলিয়ে বা অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে দলিল তৈরি করে থাকে। যেমন আপনার বাবা অসুস্থ ছিলেন; কিন্তু তিনি স্বাক্ষর করতে পারতেন অথচ দলিলে টিপসই নেওয়া হয়েছে কিংবা বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন বা চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখন তার কাছ থেকে জোর করে কিংবা ভুল বুঝিয়ে প্রতারণামূলকভাবে দলিল করিয়ে নেয় হয়েছে।

এরকম প্রেক্ষাপটে আপনি ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ৩৯ ধারায় দলিল বাতিলের মোকদ্দমা করে অথবা ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ ২০২৩ এ মামলা করে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য আপনাকে কিছু প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে, যেমন আপনার বাবার পূর্বের যেকোন দলিলে করা স্বাক্ষরের নকল। যদি চাকুরী করতেন তাহলে বাবার চাকরির নথিপত্রে তার স্বাক্ষর কিংবা স্কুল-কলেজ বা ব্যাংকের কাগজে তার স্বাক্ষর। বাবা অসুস্থ থেকে থাকলে সেই সময়ের হাসপাতাল, ক্লিনিকের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র। সাক্ষ্যদাতা ব্যক্তি বা প্রতিবেশীর বক্তব্য ইত্যাদি আপনি যথাযথভাবে সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থাপন করে দলিল বাতিল করে দিতে পারেন।

তবে মনে রাখবেন বাবা সুস্থ থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় দলিলে স্বাক্ষর করেছেন, দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে সঠিকভাবে, তাহলে সেই দলিল বাতিল করার সুযোগ নেই। প্রতারণা হোক বা পারিবারিক চাপ যাই থাকুক না কেন যদি বৈধভাবে স্বাক্ষর এবং রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকে, তাহলে আদালত সেই দলিলকে বৈধই ধরে নেবে।

১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট জততিকার আইনের ৩৯ ধারাটি “দলিল বাতিলের” সাথে সম্পর্কিত। এই ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো দলিল (যেমন: চুক্তি, উইল, ইত্যাদি) বাতিল করতে চান, তবে আদালত সেই দলিল বাতিল করতে পারে, যদি সেই দলিল তৈরি করার সময় কোনো পক্ষ প্রতারণা, জবরদস্তি, ভুল বোঝাবুঝি, অথবা অন্য কোনো অবৈধ কারণে প্রভাবিত হয়ে থাকে।

ধারাটির মূল বিষয়বস্তু হলো, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণা, জবরদস্তি, ভুল বোঝাবুঝি, অথবা অন্য কোনো অবৈধ কারণে প্রভাবিত হয়ে কোনো দলিল তৈরি করে, তবে আদালত সেই দলিল বাতিল করতে পারে।

দলিল বাতিলের জন্য, ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে আদালতে মামলা করতে হবে এবং আদালতের কাছে প্রমাণ করতে হবে যে, দলিল তৈরির সময় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করা হয়েছে বা সে ভুল ধারণার শিকার হয়েছে।
আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং প্রমাণাদি যাচাই করে দলিল বাতিলের রায় দিতে পারে।
দলিল বাতিলের রায় হলে, সেই দলিল আর বৈধ থাকে না এবং তার ভিত্তিতে কোনো অধিকার বা দায়িত্ব তৈরি হয় না।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও পিএইচ. ডি ফেলো। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com

 

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।