
সিরাজ প্রামাণিক:
ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির বন্টননামা দলিল নেই; অথচ আপনি যেকোন দিক থেকে কিংবা ভাল পজিশনের দিক থেকে আপনার অংশ মতো একপাক্ষিকভাবে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কম মূল্যের অংশ অন্য অংশীদারদের জন্য ফেলে রাখছেন। এতে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। বিরোধ গড়াচ্ছে আদালত পর্যন্ত। অবশেষে বন্টন দলিল ছাড়া উক্ত বিক্রি দলিলটি টিকবে কি-না?
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ (খ) ধারামতে, উত্তরাধিকারদের বিষয়ে খতিয়ান সংশোধন করতে হলে যিনি মৃত ব্যক্তির বংশধর বা ওয়ারিশ হিসেবে পরিচয় দেন, তিনি অন্যান্য ওয়ারেশদের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে বন্টননামমা দলিল করবেন এবং ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট অনুযায়ী সেই দলিলটি অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। এরপর রাজস্ব কর্মকর্তা খতিয়ান সংশোধন করে দেবেন। কিন্তু দুঃখের সাথে জানাতে হয় আইনটি বাধ্যতামূলক হলেও এতে শাস্তির বিধান না থাকায় অনেকেই এটি উপেক্ষা করে এ ধরণের অপরাধ করে চলেছে।
কাজেই কেউ যদি সম্পত্তির বণ্টননামা না করেই তার প্রাপ্য অংশ সুবিধামতো দিক থেকে বিক্রি করে দেয়, তাহলে সেটি আইনত এবং ন্যায়ত বৈধ হবে না। এমনকি দলিলটি বাতিলের জন্য মামলা পর্যন্ত করা যাবে।
আইনগত সমাধানঃ
যদি কেউ গোপনে তার অংশ বিক্রি করে ফেলে, তাহলে সরাসরি কয়েকটি আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায় তার মধ্যে আপনি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করতে পারেন। যার কাছে জমি বিক্রি হয়েছে, তার দখল প্রতিরোধে নিষেধাজ্ঞা বা ইনজাংশন জারি করতে পারেন। পাশাপাশি বেআইনিভাবে বিক্রয়কৃত জমির বিক্রির দলিল বাতিলের জন্য আলাদাভাবে মামলা করতে পারেন।
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারা অনুযায়ী, যে কোনো ব্যক্তি একটি লিখিত দলিল বাতিল বা অকার্যকরতা চাইছেন, যার যুক্তিসঙ্গত আশংকা আছে যে যদি এই ধরনের লিখিত দলিল তার গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে থাকে, তাহলে তিনি বাতিল বা বাতিলযোগ্যতার ঘোষণার জন্য মামলা করতে পারেন।
কাজেই কেউ যদি আপোষ বন্টননামা দলিল ছাড়া জমি কেনেন, তাহলে ভবিষ্যতে সেই সম্পত্তি হারানোর সম্ভাবনা থেকে যায়।
অনেক সময় দেখা যায়, ৩০-৪০ বছর আগে বাবা-মা মারা গেছেন, কিন্তু আজও সন্তানেরা কেবল মৌখিকভাবে সম্পত্তি ভোগ করছেন। তারা চাইলে এখনো আপোষ বন্টননামা দলিল করে নিতে পারেন এবং নিয়ম অনুযায়ী নামজারি করে নিজের নামে সম্পত্তি লিপিবদ্ধ করতে পারেন। এটি তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থায়ী দলিল হিসেবে কাজ করবে এবং জমি নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি বা বিরোধ থাকবে না।