বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন
ইবি প্রতিনিধি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা হলের সিট থেকে এক শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্র হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফের কক্ষে তুলে দেওয়ার আশ্বাসে সোমবার ক্যাম্পাসে আসেন। হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম ওই ছাত্রকে ফোন করে ক্যাম্পাসে আসতে বলেন। হলে এলে হলের প্রাধ্যক্ষ, কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ওই ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক। ভুক্তভোগী ছাত্রের অভিযোগ, প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে হল ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য এবং ছাত্রলীগ নেতারা তাকে লিখিত অভিযোগ করা নিয়ে তোপের মুখে ফেলেন। তারা ওই ছাত্রকে ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে ঘটনার সমাধান না করে হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করার বিষয় নিয়ে নানা কথা শোনান। স্বয়ং প্রাধ্যক্ষও বিষয়টি গণমাধ্যমে আসায় ওই ছাত্রের প্রতি ভৎসনা করেন বলে অভিযোগ। পরে ওই ছাত্রকে হল প্রশাসন সিটে তুলে দেয়। কিন্তু তিনি নিরাপত্তা শঙ্কায় আবারো কুষ্টিয়া শহরে চলে যান বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী মাহাদী হাসান বলেন, ‘প্রাধ্যক্ষ স্যার আমাকে হলে উঠানোর জন্য কুষ্টিয়া শহর থেকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি আমাকে নিয়ে গিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের সামনে দাঁড় করিয়েছেন। এছাড়া প্রাধ্যক্ষ স্যারসহ আরো যারা শিক্ষক-কর্মকর্তা ছিল সবাই আমাকেই দোষ দিয়েছেন কেন আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এতে নাকি ছাত্রলীগ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি সিটে থাকতে না পেরে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি, তাদের কাছে সেটাই আমার ভুল। প্রাধ্যক্ষ স্যার আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার না করে উল্টো ছাত্রলীগের সুরে কথা বলেছেন। প্রাধ্যাক্ষের কার্যালয় থেকে বের করে ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক আমার মোবাইল চেক করেছে, এটি আমাকে খুবই আঘাত দিয়েছে। পরে হল প্রশাসন আমাকে সিটে নিয়ে গেলেও নিরাপত্তা নিয়ে চরম শঙ্কায় আছি। তাই আবারো কুষ্টিয়া শহরে চলে এসেছি। তদন্ত কমিটি গঠনের পর ঘটনার তদন্ত না করে আমাকে ডেকে নিয়ে এমন ব্যবহার মেনে নিতে পারছি না।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘হল প্রশাসন ওকে সিটে তুলে দিয়েছে, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হবে না এটাই আমরা বলেছি। এজন্যই গিয়েছিলাম। ওই ছেলে বলেছে সে আমাদের কর্মী, তাই স্বাভাবিক কিছু কথা বলেছি। তাকে চার্য করা বা এ জাতীয় কিছু বলা হয়নি। আর ফোন চেক করার মতো তেমন কিছু হয়নি, সে যে আসলেই ছাত্রলীগ করে কিনা এটা দেখার জন্য ওর ফেসবুকের বিগত সময়ের কিছু পোস্ট দেখেছি। এর বাইরে কিছু ছিল না। আমরাও চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমাদের কেউ দোষী হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমার দায়িত্ব ছিল ওই ছাত্রকে সিটে তুলে দেওয়া এজন্য ডেকেছিলাম। একইসঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদেরকেও ডেকেছিলাম যেন পরবর্তীতে ওই ছাত্রের কোন সমস্যা না হয়। প্রক্টরিয়াল বডি ও আবাসিক শিক্ষকরাও ছিল। তবে কয়েকজন মানুষ এক সঙ্গে হলে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন ধরণের কথা হয়, সেটাই হয়েছে। এর মধ্যে ওর বিভাগের শিক্ষকও ছিলেন। তিনি ব্যাক্তিগতভাবেই কথা বলেছেন। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতারাও তাদেও কর্মী হিসেবে কিছু কথা বলেছে। এরমধ্যে আমি বেশ কিছু সময় কার্যালয়ের বাইরেও ছিলাম, এই সময়েও কিছু কথা হয়ে থাকতে পারে। তবে এ ধরণের কোন পরিস্থিতিতে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে ডাকা হয়নি।’