শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০১ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের নিকট দোষস্বীকারে সাক্ষ্যগত মূল্য বনাম বাস্তবতা! ল’ ফোরাম রাজবাড়ীর মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক সন্ধা অনুষ্ঠিত। চেকের মামলায় আসামীর মুক্তির উপায়! ইবির নতুন ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্বগ্রহণ কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনী বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা আদালতের আদেশ অমান্যে আইনী প্রতিকার ও বাস্তবতা! চেক ডিসঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা! লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উন্নয়ন ফোরামের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। ঝিনাইদহে শের আলী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সহস্র পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন ইবি উপাচার্যকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ প্রস্তাব, থানায় জিডি
সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সামাজিক সংহতি!

সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সামাজিক সংহতি!

মোঃ শহিদুল্লাহ্ :

স্মারক নং-স্বাঃ অধিঃ/করোনা/২০২০-৩৪ তাং ১৬ এপ্রিল ২০২০/৩ বৈশাখ ১৪২৭ মুলে অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ,মহা পরিচালক,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,মহাখালী ঢাকা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে সংক্রামক রোগ(প্রতিরোধ’নিয়ন্ত্রন ও নির্মূল)আইন ২০১৮(২০১৮সালের ৬১ নং আইন)এর ১১(১)ধারার ক্ষমতা বলে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে ৷ঘোষণায় বলা হয়েছে–
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করেছে৷ লক্ষ লক্ষ লোক আক্রান্ত হয়েছে ও লক্ষাধিক লোক মৃত্যুবরণ করেছে৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে৷ হাঁচি কাশি ও পরস্পরের মেলামেশার কারণে এ রোগের বিস্তার ঘটে৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বে এ রোগের কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি৷ এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক হলো পরস্পর হতে পরস্পরকে দূরত্বে অব¯’ান করা৷
যেহেতু জনসাধারণের একে অপরের সাথে মেলামেশা নিষিদ্ধ করা ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়৷ এবং যেহেতু বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে-
সেহেতু সংক্রামক রোগ(প্রতিরোধ’নিয়ন্ত্রন ও নির্মূল) আইন ২০১৮ (২০১৮সালের ৬১ নং আইন) এর১১(১)ধারার ক্ষমতা বলে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হলো৷ জনসাধারণকে
(১)করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে অবশ্যই ঘরে অব¯’ান করতে হবে৷ অতীব জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না৷
(২) এক এলাকা হতে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলো৷
(৩) সন্ধ্যা ৬.০০টা হতে সকাল ৬.০০টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবেনা৷
এই নির্দেশাবলী জনসাধারণকে কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো৷ এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে উপরে বর্ণিত আইনে কঠোর ব্যব¯’া গ্রহণ করা হবে৷ ¯’ানীয় স্বা¯’্য কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিয়ে আইনের অন্য ধারাগুলো প্রয়োগ করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন৷
যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ১৬ এপ্রিল ২০২০/ ৩ বৈশাখ ১৪২৭ তারিখে এই আদেশ জারি করা হলো৷

৩১শে ডিসেম্বর উহান শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীন বিশ্ব স্বা¯’্য সং¯’াকে বিষয়টি জানায়৷ এই রোগে ১১ই জানুয়ারি সর্বপ্রথম একজনের মৃত্যু ঘটে।
কীভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি কোন বিশেষজ্ঞ৷
তবে খুব সম্ভবত কোন প্রাণী এই ভাইরাস জনিত রোগের উৎস ছিল।প্রাণী দেহ থেকেই প্রথম ভাইরাসটি উহান শহরের যে কোন মানুষের শরীরে ঢুকেছে, এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে বলে সবার ধারণা৷
এর আগে গবেষণায় পাওয় যায় যে সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢোকে। মার্স ভাইরাস আসে উট থেকে।
করোনা (কোভিড-১৯)রোগ ছড়ানোর পিছনে
চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজারে গিয়েছিল এমন লোকদের সম্পর্ক আছে বলে বিশেষজ্ঞ মহল ধারণা করছেন।
ওই বাজারে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো
বেলুগা ও তিমি জাতীয় সামুদ্রিক প্রাণী করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে বলে ধারনা অনেকের। উহানের ওই বাজারে জীবন্ত মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, এবং সাপও বিক্রি হতো।
তাদের থেকেও এই নতুন ভাইরাস এসে থাকতে পারে মর্মে ধারনা পোষণ করা হয়৷
এই রোগটি বর্তমানে মহামারীর আকার নিয়েছে এটা এখন বৈশ্বিক মহামারী৷ চীনের পর ইরান, ইতালি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ড আমেরিকা বেলজিয়ামসহ ২০৫ টি দেশে এ রোগের সংক্রমণ ঘটেছে৷ বাংলাদেশও এই ঘাতক ব্যাধির বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি৷ বাংলাদেশে ১৭ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত আক্রান্ত ১৮৩৮ জন, মোট সু¯হ্য হয়েছেন ৫৮জন,মৃত্যু বরণ করেছেন ৭৫ জন, বিগত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২১৯০ জনের৷আমাদের আক্রান্ত জেলা নারায়নগঞ্জ,ঢাকা,মাদারীপুর,মানিকগঞ্জ,
মুন্সীগঞ্জ, গাইবান্ধা, ইত্যাদি৷

প্রথমে আমাদের দেশে এ রোগের সংক্রমণ ছিল না৷বিদেশ ফেরত কিছু অপরিণামদর্শী ব্যক্তি তাদের শরীরে ঘাতক এই রোগ নিয়ে প্রবেশ করার পর থেকেই এ রোগের বিস্তার চারিদিকে প্রসারিত হয়েছে৷ এ রোগের কোন প্রতিষেধক আজও আবিষ্কৃত হয়নি৷ তাই প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর ধারণাকে সামনে রেখে রোগগ্রস্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে সু¯’ মানুষদের সরিয়ে রাখার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে৷ এরই প্রেক্ষিতে সন্দেহজনক অসু¯’্য ব্যক্তিকে রোগ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷ কোয়ারেন্টিনে আছেন যাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ কিছু মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হলেও তারা তা না মেনে যত্রতত্র ঘূরে বেড়িয়ে এ রোগের বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন৷পুলিশ সেনাবাহিনী সবাইকে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করলেও অপরিনামদর্শী ব্যক্তিরা তা পদে পদে অবহেলা করছেন৷ কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষদের দুবেলা দুমুঠো আহার জোগানোর সরকারের মহতি উদ্যোগ ত্রাণ গ্রহনকালে নিরাপদ শারিরীক দুরত্ব (৩ ফুট,৫ মিটার) ভেঙ্গে ত্রাণ নেওয়ার কারনেও নিরাপদ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্য বারবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হ”েছ৷ইতোপূর্বে সরকার ঘোষিত ছুটির সময় দলবল বেধে সবাই নিজ নিজ গ্রামের বাড়ীতে ছুটে গেছে৷ আবার গাদাগাদি করে ফেরীতে উঠে পদব্রজে ঢাকায় ফিরে এসে দেশকে প্রচন্ড করোনা ঝুকিতে ফেলেছে৷

ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বা¯’্য সং¯’া করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণকে একটি বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে। আমাদের স্বা¯হ্য অধিদপ্তর ১৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখ সংক্রামক রোগ(প্রতিরোধ,নিয়ন্ত্রণ,ও নির্মূল আইনে ২০১৮ এর ১১(১) ধারা বলে সমগ্র বাংলাদেশকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঝূকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে প্রদত্ত মির্দেশাবলী কঠোর ভাবে প্রতিপালনের জন্য অনুরোধ জ্ঞাপনকরেছেন৷
সংক্রামকরোগ(প্রতিরোধ,নিয়ন্ত্রণ,ও নির্মূল আইনে ২০১৮ এর ১১(১) ধারায় বলা হয়েছে-

১১। (১) মহাপরিচালক, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, আদেশ দ্বারা, নিম্নবর্ণিত কোনো এলাকাকে সংক্রমিত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করিতে পারিবেন, যথা:-
(ক) বাংলাদেশের ¯’ানীয় কোনো এলাকা বা অঞ্চল যাহা কোনো সংক্রামক ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছে বা আক্রান্ত হইয়া থাকিতে পারে মর্মে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ হইতেছে;

(খ) সংক্রমনের বিস্তার নির্মূল বা সীমিত করিবার জন্য সংক্রমিত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, গৃহ, আঙ্গিনা, বাস¯’ান বা যানবাহন।

(২) মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, যথাযথভাবে স্বা¯’্য সুরক্ষা ব্যব¯’া গ্রহণ করিয়া তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সংক্রামক রোগ সীমিত বা নির্মূল করা সম্ভব নহে, তাহা হইলে তিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিত ¯’ানে অন্য কোনো ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন।

এই আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে
সংক্রামক রোগ(প্রতিরোধ’নিয়ন্ত্রন ও নির্মূল)আইন ২০১৮(২০১৮সালের ৬১ নং আইন)এর অধিনে শাস্তি দেয়া যাবে৷
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮-এর ২৫(২) ধারার বিধান মতে, কেউ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বাঁধা দিলে বা নির্দেশ পালনে অসম্মতি জানালে তার তিন মাস কারাদন্ড, অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে। আর কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকার পরও ই”ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে তার অনুরূপ কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং তাকে ২ (দুই) মাসের উপরে নয় কারাদন্ডে বা ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকার উপরে নয় অর্থদন্ডে, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে ধারা-২৬(২)। মনে রাখা দরকার এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত সিআরপিসি’র বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে।
এ আইনের ১(৩) ধারার বিধান মতে, যে কোন সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে উড়োজাহাজ, জাহাজ, জলযান, বাস, ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহন দেশে আগমন, নির্গমন বা দেশের অভ্যন্তরে এক ¯’ান থেকে অন্য ¯’ানে চলাচল নিষিদ্ধকরণ করা যাবে। এ ছাড়া ধারা ১০(২) এর বিধানানুসারে যদি কোনো বোর্ডিং, আবাসিক হোটেল বা অ¯’ায়ী বাস¯’ানের মালিক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির যুক্তিসঙ্গত কারণে ধারণা হয়, সে ¯’ানে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে তিনি অনতিবিলম্বে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসককে অবহিত করবেন৷

এই আইনের ১৪ ধারার বিধান বলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীরা যদি মনে করে, কোনো সংক্রমিত ব্যক্তিকে বি”িছন্ন করা না হলে তার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিরা সংক্রমিত হতে পারেন, তবে ওই ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে অন্য কোনো ¯’ানে ¯’ানান্তর বা জনবি”িছন্ন করে রাখা যেতে পারে৷
ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী যদি বিশ্বাস করেন যে, কোনো যানবাহন সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে বা সংক্রামক জীবাণুর উপ¯ি’তি রয়েছে, তাহলে তিনি ওই যানবাহন জীবাণুমুক্তকরণের জন্য গাড়ির মালিক বা স্বত্বাধিকারী বা তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দিতে পারবেন(ধারা-১৮)৷
যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগে মৃত্যুবরণ করেন তাহলে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী সৎকারের ব্যব¯হা গ্রহন করতে পারবেন৷

ইতোমধ্যে এই আইনের বিধান ভাঙ্গার অপরাধে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৫২ জনকে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে৷

পেনালকোড ও অনান্য আইনেও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন রয়েছে। পেনাল কোডের ২৬৯, ২৭০ ও ২৭১ ধারা এখানে উল্লেখ যোগ্য৷ কোনো ব্যক্তি যদি বেআইনিভাবে বা অবহেলামূলকভাবে এমন কোনো কাজ করেন যা জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক কোনো রোগ ছড়াতে পারে, এটা বিশ্বাস থাকার কারণ সত্ত্বেও যদি তিনি এরূপ কোনো কাজ করেন তবে তাকে ছয়মাসের বেশী নয় এমন সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যায় (ধারা ২৬৯)৷
কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো বিদ্বেষমূলক কাজ করেন যার কারণে সংক্রমণ রোগের বিস্তার ঘটতে জানা বা বিশ্বাস করার কারন থাকা সত্বেও তিনি তা করেন (উদাহরন স্বরুপঃ- সরকার যদি কাউকে কোয়ারেন্টিনে যেতে বলেন তিনি যদি না যেয়ে বাড়িতে অব¯’ান করেন ফলে অন্য কোনো ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে) তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক দুই বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন (ধারা ২৭০)।
যদি কোন ¯’ান সংক্রমণ ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হয়, যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ওপর যদি কোয়ারেন্টিন আরোপ করা হয় এবং তার জন্য কোন আইন বা বিধান প্রণয়ন করে কোন শর্ত আরোপ করা হয় যদি কোনো ব্যক্তি সেই বিধান জ্ঞাতসারে অমান্য করেন যেমন সরকার যাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছেন তারা যদি কোয়ারেন্টিনের কোনো বিধান অমান্য করেন ফলে তার দ্বারা সংক্রমণ বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ওই ব্যক্তি ছয়মাসের অধিক নয় কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন (ধারা ২৭১)।

রেলওয়ে আইন ১৮৯০ এর ১১৭ ধারার বিধান অনুসারে যদি কেউ ছোঁয়াচে বা সংক্রামক ব্যাধিগ্র¯হ হয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করেন তবে তার ২০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে,তার টিকিট বাজেয়াপ্ত হবে এবং তাকে অন্যান্য যাত্রীদের থেকে আলাদা করা হবে৷
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮-এর ধারা ৪-এর বিধানে যে রোগগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে তাহলো ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ফাইলেরিয়াসিস, ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এভিয়ান ফ্লু, নিপাহ, অ্যানথ্রাক্স, মারস-করোনা, জলাতঙ্ক, জাপানিস এনকেফালাইটিস, ডায়রিয়া, যক্ষ্ণা, শ্বাসনালির সংক্রমণ, এইচআইভি, ভাইরাল হেপাটাইটিস, টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য রোগগুলো, টাইফয়েড, খাদ্যে বিষক্রিয়া, মেনিনজাইটিস, ইবোলা, জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং সরকারি গেজেট অনুযায়ী ঘোষিত নবোদ্ভুত বা পুনরায়উদ্ভুত যে কোনো রোগ।বর্তমানের (কোভিড-১৯) ও সংক্রানক রোগের পর্যায়ভুক্ত৷

করনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের চিত্র ভয়াবহ৷ প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই৷ কবে এই ঘাতক ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন বা অন্য কোন ঔষধ বের হবে তা কারো জানা নেই৷ ঘরের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রেখে যদি এ ভাইরাসের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায় তাতে ক্ষতি কি? আশা করব এবার আমরা সবাই নিজেদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত রাখার ক্ষেত্রে সাহসী যোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবো৷ আমাদের ভুললে চলবে না “মেঘ দেখে তোরা করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা হাসি অন্ধকারেই ফিরে আসে৷৷

লেখক: পরপর ১৩ বার ডিআইজি রিওয়ার্ড প্রাপ্ত বাংলাদেশ পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(অবঃ),জৈবনিক উপন্যাস সহ বিভিন্ন বিষয়ের লেখক ও আইন বিশ্লেষক

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel